ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

গৃহবন্দী মানুষ

প্রকাশিত: ০৮:৩২, ১ এপ্রিল ২০২০

গৃহবন্দী মানুষ

বিশ্বব্যাপী সম্প্রসারিত করোনাভাইরাস সংক্রমণে যে উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠা, সেখানে চিকিৎসার সঙ্গে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে সামাজিক দূরত্ব এবং ব্যক্তিক বিচ্ছিন্নতা। দ্রুত ও ব্যাপক হারে সংক্রমিত করোনায় আক্রান্ত এবং মৃত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। জনগোষ্ঠীর নিরাপদ ফারাকও ক্রমে দৃশ্যমান হচ্ছে। বিশ্বজুড়ে সংক্রমিত রাষ্ট্রগুলো অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিকভাবে যে অবরুদ্ধতার নির্দেশ দেয়, সেখানে সুস্থ মানুষেরও ঘরে বন্দী থাকা ছাড়া বিকল্প পথ নেই। সঙ্গত কারণে, ক্ষুদ্রতর পারিবারিক গ-িতে এই মুহূর্তে সারাবিশ্ব আটকা পড়ে আছে। গৃহবন্দী জীবনের এই স্থবিরতার দুঃসময়ে ব্যক্তি মানুষের প্রতিদিনের কর্মজীবন এক গতিহীনতার আবর্তে। বাংলাদেশও অবরুদ্ধতার এক কঠিন বাতাবরণে। স্তব্ধ জীবনযাত্রায় থমকে গেছে পুরো রাষ্ট্র। মানুষের সঙ্গে মানুষের সহজ মিলনকে নিরাপদ দূরত্বে রাখতে সরকারও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সমস্ত কার্যক্রমের ছুটি ঘোষণা করে কয়েকদিনের জন্য। নিরাপত্তার নিñিদ্র বলয়ের সুরক্ষার এমন দূরত্বের কোন বিকল্প অন্য কিছু হতে পারে না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে শুরু করে দেশীয় আন্তঃস্বাস্থ্য অধিদফতর সামাজিক দূরত্বের সঙ্গে পরিচ্ছন্নতার ওপরও বিশেষ গুরুত্ব দেয়। প্রয়োজনমাফিক হাতকে সর্বক্ষণিক সুরক্ষা দিতে ঘণ্টা অন্তর স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে পরিষ্কার করতে হবে। সাবান, হ্যান্ডওয়াশ এবং সোডা ছাড়াও পরিষ্কার পানিতে স্বাস্থ্য বিধি অনুসরণ করে হাত ধুতে হবে। মানুষ কর্মজীবনের খ-কালীন বিরতিতে উৎসব অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তার সময় কাটায়। আর এখন উৎসব মানেই ঘরে বসে টিভি দেখা, মাঝে মধ্যে সিনেমা এবং বইকে নিয়মিত দুঃসময়ের সঙ্গী হিসেবে বেছে নেয়া। ঘরে বসে নিকটজনের সঙ্গে আলাপচারিতায় গৃহবন্দী জীবনে সামান্য বিনোদনের খোরাকও হয়। তবে সবচেয়ে দুর্দশাগ্রস্ত অবস্থায় পড়ে গেছে প্রতিদিনের খেটে খাওয়া মানুষ। নিম্নবিত্তের এমন সব দিনমজুর যাদের রোজগার হয় দিনপ্রতি আয় করে খাওয়া, নয়ত উপবাস। এদের মধ্যে রিক্সা, ভ্যান, সিএনজি চালক, ফুটপাথের আশপাশে ক্ষুদ্র চা বিক্রেতা, সম্পন্ন গৃহস্থের ঘরে কাজ করা গৃহকর্মীরা এক দুঃসহ, কষ্টকর জীবন পার করছে। ঘরে বসে থেকেও তাদের কোন স্বস্তি নেই। আনন্দ বিনোদনের তো প্রশ্নই ওঠে না। তারা এখন তাদের রুজি-রোজগার নিয়ে ভীত, শঙ্কিত এবং উৎকণ্ঠিত। প্রতিদিনের খাদ্য সঙ্কট এখন নিয়মিত দুর্ভোগের পর্যায়ে। দ্রব্যমূল্য বাড়ার পরিবর্তে নামার দিকে। ফলে মাছ, মাংস, সবজি, ফলমূলের ক্ষুদ্র বিক্রেতারাও এক অসহনীয় দুর্ভোগ মোকাবেলা করছে। তবে হতদরিদ্রদের এমন বিপন্ন সময়ে সমাজের বিত্তশালী মানুষ, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, জাতীয় খেলোয়াড়, সুশীল সমাজ এবং সব থেকে বেশি উত্তর ও দক্ষিণ সিটি মেয়র দুস্থ মানুষদের মধ্যে প্রতিদিনের খাদ্য-সঙ্কট দূর করতে এক মানবিক এবং নৈতিক কর্মপ্রক্রিয়া শুরু করেছেন। বিনামূল্যে হতদরিদ্রদের মাঝে বিরতণ করা হচ্ছে প্রতিদিনের খাদ্যসামগ্রী। সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কমিশনাররা নিজ দায়িত্বে এসব খাদ্যপণ্য বিপন্ন মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিচ্ছেন। কারণ সামাজিক দূরত্বের কারণে ভিড়ের মাঝে গণসমাবেশ এড়ানোই এখন সব থেকে বেশি জরুরী। যারা এমন মানবিক দায়িত্ব পালন করছেন তারা স্বাস্থ্য বিধিকেও বিশেষ বিবেচনায় রেখেছেন। তার পরেও নিত্য প্রয়োজনে বের হওয়া জনগণ যখন দুঃসময়ের করাল গ্রাসে ঘরে আটকে থাকতে বাধ্য হয়, তাদের বিপর্যস্ত বন্দী দশাও প্রত্যাশিত নয়। করোনার সংক্রমণের ছোবল থেকে সারা বিশ্বের কবে যে মুক্তি মিলবে, তা কারোরই জানা নেই। সময়ের ওপর নির্ভর করা ছাড়া অন্য কোন পথও নেই।
×