ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আবাসিক এলাকায় অগ্নিকাণ্ড

প্রকাশিত: ০৮:৪৮, ১ মার্চ ২০২০

আবাসিক এলাকায় অগ্নিকাণ্ড

ঢাকার দিলু রোডের একটি আবাসিক ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দগ্ধ হয়ে শিশুসহ কয়েকজনের মৃত্যু কিছুতেই মেনে নেয়া যায় না। এই ট্র্যাজেডি কয়েকটি জরুরী বিষয় আবারও সামনে নিয়ে এসেছে। প্রথমত, আবাসিক এলাকায় কোনক্রমেই বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড চলতে পারে না। কলকারখানা, বায়িং হাউস, গুদামঘর এসব সম্পূর্ণরূপে পরিত্যাজ্য। দ্বিতীয়ত, যে কোন বহুতল ভবনের বেলাতেই কিছু সাধারণ নিয়ম অনুসরণ করা বাধ্যতামূলক। যেমন, অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা থাকতেই হবে। তৃতীয়ত, বহুতল ভবনের সামনের সড়ক প্রশস্ত হতে হবে, যাতে কোন কারণে আগুন লাগলে আগুন নেভানোর কর্তৃপক্ষ এবং এ্যাম্বুলেন্স যেন সেখানে সহজে ও দ্রুত যেতে পারে। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হলো এই তিনটি বিষয়েই ওই ভবনটিতে গুরুতর অনিয়ম ঘটেছে। আশঙ্কার বিষয় এটাই যে, ঢাকার প্রতিটি এলাকাতেই এমন গুরুতর অনিয়ম ঘটে চলেছে এবং বেশির ভাগ বহুতল ভবনই রয়েছে অরক্ষিত অবস্থায়। ওই ভবনের দারোয়ান গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, বাসার নিচে গ্যারেজ থেকে আগুন লাগে। সেখানে পাঁচটা গাড়ি ছিল। আগুন গাড়িগুলোতেও ছড়িয়ে পড়ে। এলাকাবাসীর ধারণা, বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুন লাগে। অগ্নিকাণ্ডের পর ধোঁয়া ওপরের দিকে উঠে যায়। ভবনের বাসিন্দারা আতঙ্কিত হয়ে ছোটাছুটি শুরু করেন। এই বয়ান থেকে এটাই স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, কোন কারণে একবার আগুন লাগার ঘটনা ঘটলে সেটি ছড়িয়ে পড়তে এবং সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসীর জীবন চূড়ান্তভাবে বিপন্ন করে তুলতে বেশি সময় লাগে না। কোন কারণে আগুন লাগতে পারে- এমনটা ভেবে নিয়েই আধুনিক ভবনে অগ্নিপ্রতিরোধ ও যে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা নিশ্চিত করাটাই নিয়ম। বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট এবং ধূমপানের পর সিগারেটের না নেভানো আগুন থেকে আগুন লাগা এবং তা ছড়িয়ে পড়ার ঘটনাই বেশি ঘটতে দেখা যায়। ফলে আগুন লেগে গেলে সে আগুন নেভানোর সক্ষমতা থাকা অত্যাবশ্যক। ফায়ার সার্ভিসের জরিপ প্রতিবেদনে দেখা যায়, ঢাকা মহানগরীর ৯৮ ভাগ হাসপাতাল ও ক্লিনিকই রয়েছে অগ্নিঝুঁকিতে। এসব হাসপাতাল বা ক্লিনিকে আগুন লাগলে তা মোকাবেলায় করণীয় সম্পর্কে সরকারী-বেসরকারী হাসপাতাল বা ক্লিনিক কর্তৃপক্ষেরই কোন প্রকার প্রশিক্ষণ নেই। বলাবাহুল্য, যে কোন প্রতিষ্ঠানের জন্য পূর্ব প্রস্তুতির কোন বিকল্প নেই। বহুতল ভবনের প্রতিটি ফ্লোরে আগুন নেভানোর পর্যাপ্ত উপকরণ ও সরঞ্জাম হাতের কাছে থাকলে প্রাথমিক ক্ষয়ক্ষতি অনেকটা রোধ করা সম্ভব। তাছাড়া যে কোন বহুতল ভবনেরই জরুরী নির্গমন পথ (ফায়ার এক্সিট) থাকা বাঞ্ছনীয়। যথাযথ অনুমোদন ছাড়া যেসব বহুতল ভবন ইতোমধ্যে নির্মিত হয়েছে সেগুলোর ব্যাপারে কী ব্যবস্থা নেয়া হবে সেটি এখন বড় প্রশ্ন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ রাজউকের দুর্নীতি নিয়ে নানা কাহিনী চালু আছে। যাদের কারণে পুরো রাজধানীই ঝুঁকির আওতায় পড়ে গেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ এখন সময়ের দাবি। রাজধানীর উন্নয়ন ও নিরাপত্তার জন্য রাজউক সংস্থাটির আদ্যোপান্ত পর্যালোচনা জরুরী হয়ে উঠেছে। আমরা আশা করব, সংশ্লিষ্ট সব মহল কালবিলম্ব না করে অগ্নি প্রতিরোধে সক্ষমতা গড়ে তোলার জন্য যা কিছু করণীয় সেটি করবে।
×