ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আন্তঃবাণিজ্য ও বিনিয়োগ

প্রকাশিত: ০৯:১৮, ২৪ জানুয়ারি ২০২০

আন্তঃবাণিজ্য ও বিনিয়োগ

বিমসটেক করিডর ও সার্ক হাইওয়ের পর এবার শুরু হচ্ছে বিবিআইএন কার্যক্রম। এ তালিকায় আপাতত ভুটান সংযুক্ত না হলেও অদূর ভবিষ্যতে সে দেশের সংসদে অনুমোদনের পর যোগ দিতে পারে। দেশটির পূর্ণ সমর্থন রয়েছে বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল আন্তঃবাণিজ্য ও বিনিয়োগের ওপর। আর তাই ভুটানকে বাদ দিয়ে এর নাম বিবিআইএনের পরিবর্তে বাংলাদেশ, ভারত ও নেপালকে নিয়ে বিআইএন রাখা হবে কিনা- সে বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে আগামী ২৯-৩০ জানুয়ারি তারিখে নেপালের কাঠমান্ডুতে অনুষ্ঠেয় সংশ্লিষ্টদের আনুষ্ঠানিক বৈঠকে। উল্লেখ্য, বিগত ২৩ বছর ধরে আন্তঃবাণিজ্য ও বিনিয়োগ নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করছে সংশ্লিষ্ট ৪টি দেশ। এও সত্য যে, কম-বেশি আন্তঃবাণিজ্য চলছেও দেশগুলোর মধ্যে। সড়ক যোগাযোগও রয়েছে। তবে পারস্পরিক সমঝোতা ও চুক্তির আওতায় যথাযথ অবকাঠামো ও পরিকাঠামো চূড়ান্ত হলে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোতে আন্তঃবাণিজ্য, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়বে বহুলাংশে। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ-ভারত ইতোমধ্যে নেপালে সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব জলবিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণে বিনিয়োগ করেছে। ইতোমধ্যে ভারতে বাংলাদেশের বাণিজ্য তথা রফতানি আয় বেড়েছে। ভারতের পাশাপাশি চীনের সঙ্গেও বেড়েছে বাংলাদেশের বাণিজ্য। ইইউ, যুক্তরাজ্যে বাণিজ্য বৃদ্ধির খবর তো আছেই। এমনকি জিএসপি সুবিধা প্রত্যাহার করা না হলেও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গেও বাংলাদেশের বাণিজ্য বেড়েই চলেছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রথমবারের মতো ভারতে বাংলাদেশী পণ্যের রফতানি আয় দাঁড়িয়েছে ১ বিলিয়ন বা ১০০ কোটি ডলার। এর আগের অর্থবছরে যা ছিল মাত্র ৮৭ কোটি ডলার। তার মানে এক বছরের ব্যবধানে রফতানি আয় বেড়েছে ৪২ দশমিক ৯২ শতাংশ। মোট রফতানির ৪০ শতাংশই তৈরি পোশাক। উল্লেখ্য, ২০১১ সালে ভারত বাংলাদেশকে অস্ত্র ও মাদক বাদে প্রায় সব পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেয়। এতে ভারতের এক শ্রেণীর উদ্যোক্তা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন বলে খবরও আছে, বিশেষ করে পোশাক খাতে বাংলাদেশকে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেয়ার প্রশ্নে। তবে ভারতের থিঙ্ক ট্যাঙ্ক এও মনে করে যে, শুল্কমুক্ত সুবিধা বন্ধ বা প্রত্যাহারের কোন সুযোগ নেই। কেননা, ভারতের চেয়ে বাংলাদেশের মজুরি সস্তা, পণ্য বৈচিত্র্যও বেশি। এই প্রেক্ষাপটে বিজিএমইএর সভাপতির বক্তব্য, ভারতে পোশাক রফতানি আরও বাড়তে পারে যদি সে দেশের কাপড় ব্যবহারসহ ডিজাইন ও নক্সায় আরও বৈচিত্র্য আনা হয়। নেপাল ও ভুটানও এ ক্ষেত্রে হতে পারে বড় বাজার। এর পাশাপাশি আগামীতে পোশাক শিল্পে সবচেয়ে বড় বাজার হতে পারে আসিয়ান। বর্তমানে সেখানে ৫ হাজার ১০০ কোটি ডলারের বাণিজ্য রয়েছে। ২০৩০ সাল নাগাদ আসিয়ান হবে বিশ্বে চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতি। প্রতিবেশী দেশ নেপাল, ভারত ও ভুটানের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক অত্যন্ত বন্ধুত্বপূর্ণ। আমাদের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশীদারও ভারত। নেপালও তাই হতে যাচ্ছে। পারস্পরিক প্রতিবেশী দেশগুলোর বাণিজ্য আরও সহজীকরণে স্থলবন্দর, রেলপথ, সড়কপথসহ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ আরও বাড়াতে হবে। বাণিজ্য কার্যক্রমের জন্য এক স্থানে সব সুবিধা (সিঙ্গেল উইনডো ফ্যাসিলিটিজ) দেয়ার বিষয়টিও বিবেচনা করতে হবে। বহুপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে বর্তমানে যেসব ইস্যু বাধা হিসেবে কাজ করছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে মূলত অবকাঠামো ও যোগাযোগ ব্যবস্থার সুগমতার সঙ্কট। কাঠমান্ডু বৈঠকে এসব সমস্যা সমাধানে করণীয় নির্ধারণ এবং পর্যালোচনা করা হবে, এমনটাই প্রত্যাশা। সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর উন্নয়নের স্বার্থে বহুপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণ করা একান্ত দরকার। বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে বিনিয়োগ বৃদ্ধির এখনই সময়।
×