ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মোঃ সাখাওয়াত হোসেন

জঙ্গীবাদের অর্থায়ন

প্রকাশিত: ০৯:১৭, ২৯ ডিসেম্বর ২০১৯

জঙ্গীবাদের অর্থায়ন

হলি আর্টিজানের ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার ঘটনাটি মুহূর্তেই থমকে দিয়েছিল বাংলাদেশকে এবং বিশ্ব পরিম-লে বাংলাদেশ নিয়ে আলোচনা সমালোচনা শুরু হয়েছিল কেননা উক্ত হোটেলে হতাহতদের মধ্যে বিদেশী নাগরিকদের সংখ্যাই ছিল বেশি। জঙ্গীরাও দেশের গ-ি পেরিয়ে সকলের নজর কাড়তেই উক্ত হোটেলটিতে হামলা চালিয়েছে মর্মে সংবাদমাধ্যম মারফত জানা যায়। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম এবং ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটটি দক্ষতার সঙ্গে অত্যন্ত সুকৌশলে পরিস্থিতি মোকাবেলা করে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সরকারের গ্রহণীয় জিরো টলারেন্স নীতির বার্তাকে সকলের নিকট পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছিল। সর্বশেষ হলি আর্টিজান মামলায় অভিযুক্ত আট জনের মধ্যে সাত জনের ফাঁসির রায় প্রদানের মাধ্যমে পুনরায় সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের জনগণের ইতিবাচক মনোভাবের বিষয়টি দেশী এবং বিদেশী বিভিন্ন মিডিয়ায় ফলাও করে প্রচার হচ্ছে। বাংলাদেশ সরকারও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সর্বদাই সোচ্চার এবং পরিস্থিতি বিবেচনায় আইন মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে। একটি গবেষণা সাইটের তথ্য থেকে জানা যায়, ২০১৮ সালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ১১ জন সন্ত্রাসী নিহত হয় যার মধ্যে জামাতুল মুজাহিদের ৯ জন এবং ২ জন নিউ জেএমবির সদস্য; ৫০৪ জন সন্ত্রাসী গ্রেফতার হয়। ৫০৪ জনের মধ্যে ইসলামী ছাত্রশিবিরের ৩৭২ জন ক্যাডার, জেএমবির ১২২ জন ক্যাডার, আনসারউল্লাহ বাংলা টিমের ১৯ জন, আনসার-উল-ইসলামের ১৬ জন, নিউ-জেএমবির ১২ জন, হিজবুত-তাহরীরের ১১ জন, আল্লাহর দলের ১০ জন এবং ৭ জন জামাতুল মুসলেমিনের। তার মানে বোঝা যাচ্ছে, সরকার সন্ত্রাসীদের প্রতিহত করার জন্য বদ্ধপরিকর, যে কোন মূল্যে বাংলাদেশের মাটিকে সন্ত্রাসবাদের অভয়ারণ্য থেকে মুক্ত করার প্রয়াসে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। ২০১৭ সালে ৫২ জন সন্ত্রাসী নিহত হয় এবং গ্রেফতার হয় ৯০৫ জন। ২০১৬ সালে ৭৪ জন, ২০১৫ সালে ৩১ জন, ২০১৪ সালে ২২ জন এবং ২০১৩ সালে ১৩৩ জন সন্ত্রাসী নিহত হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে। সরকারের ব্যবস্থা নেওয়ার পরেও সন্ত্রাসীরা এত দুঃসাহস কোথা থেকে পায় সেটিই বিবেচনায় নিয়ে কাজ করতে হবে, কারণ ব্যবস্থা কিন্তু নেওয়া হচ্ছে তদুপরি সন্ত্রাসীরা কিভাবে প্রতিনিয়ত তাদের অনুসারী এবং কার্যক্রমকে বেগবান করছে সে বিষয়গুলোকে সমূলে মূলোটপাটন করা অবশ্যম্ভাবী। দক্ষিণ এশিয়ার প্রেক্ষাপটে বিশ্লেষণে দেখা যায়, আফগানিস্থানে ২০১৮ সালে সন্ত্রাসবাদে হতাহত হয়ে ১৭৮৮ জন এবং ২০১৯ সালে ১৫৮৫ জন নিহত হয়, ভারতে ২০১৮ সালে ৪৭৬ জন এবং ২০১৯ সালে ৩১৫ জন নিহত হয়, পাকিস্তানে ২০১৮ সালে ১৬৩ জন এবং ২০১৯ সালে ১২৯ জন নিহত হয়; বাংলাদেশে ২০১৮ সালে ১৮ জন এবং ২০১৯ সালে ৪ জন নিহত হয়। সুতরাং তথ্য উপাত্তের মাধ্যমে এটা নিশ্চিতকরেই বলা যায়, বাংলাদেশে এখনও সন্ত্রাসবাদের ঝুঁকির বাইরে নয়। সন্ত্রাসবাদকে হুমকি এবং ঝুঁকি হিসেবে জেনে নিয়েই সন্ত্রাসবাদের ভয়াবহতাকে মোকাবেলার স্বার্থে স্বল্প এবং দীর্ঘমেয়াদী ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। সাম্প্রতিক সময়ে সন্ত্রাসী কার্যক্রম সারা বিশ্বের আমজনতাকে চরম নিরাপত্তাহীনতা, ভয় এবং ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। তাছাড়া, অন্যান্য সহিংস অপরাধের মাত্রাও দিন দিন বেড়েই চলছে। মানুষের মধ্যে অপরাধে আক্রান্ত হওয়ার ভয় সৃষ্টি হচ্ছে যা নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং স্বাভাবিক জীবনযাপনকে দিন দিন হুমকির মধ্যে ফেলে দিচ্ছে। ফ্রান্সের প্যারিসে সন্ত্রাসী হামলা বিশ্বের শান্তিপ্রিয় মানুষদের মধ্যে আশঙ্কা ও ভীতির সঞ্চার করে। ঐ হামলাটি মূলত তিন জন আত্মঘাতী হামলাকারীর মাধ্যমে সংঘটিত হয় এবং হামলার জন্য তারা জনবহুল এলাকা (ক্যাফে, রেস্তরাঁ এবং বিনোদন কেন্দ্র) বেছে নেয় এবং হামলায় ১৩০ জন মানুষ নিহত হয়। আইএস নামে যে সংগঠনটি ফ্রান্সে আক্রমণের দায় স্বীকার করছে সেই সংগঠনটি রাজশাহীর বাগমারায় জুমার সময়ে মসজিদে আক্রমণ করে এবং সে আক্রমণে একজন নিহত এবং তিনজন আহত হয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে: সন্ত্রাসী তথা জঙ্গী সংগঠনগুলোর অর্থের যোগানদাতা কারা, কিভাবে তারা তাদের প্রয়োজনীয় (প্রশিক্ষণ, অস্ত্র ক্রয়, অস্ত্রের সরঞ্জামাদি ক্রয়, জীবনযাপন, প্রকাশনা প্রস্তুতকরণ ও বিতরণ) চাহিদা মিটাচ্ছে। প্রশ্নের উত্তরে সাধারণভাবে বলা যায়, জঙ্গী সংগঠনগুলো দেশীয় সাহায্যের পাশাপাশি বাইরের দেশ থেকে বিভিন্ন মাধ্যমে আর্থিক সাহায্য গ্রহণ করে থাকে। জন্মসূত্রে বাংলাদেশী যারা বিদেশে বিভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতিক সংগঠন, দাতব্য সংস্থা পরিচালনা করে থাকে তাদের মাধ্যমেও জঙ্গীদের কাছে আর্থিক প্রণোদনা আসে। কেবলমাত্র কিছু মুসলিম দেশ যেমন: ইরাক, ইরান, কুয়েত, সৌদি আরব সাহায্য প্রদান করে না, পক্ষান্তরে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য অধিক পরিমাণে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য অর্থ প্রদান করে থাকে। আন্তর্জাতিকভাবে সুপ্রতিষ্ঠিত এনজিওসমূহ সন্ত্রাসী এবং জঙ্গী গ্রুপের বিভিন্নভাবে সহযোগিতা প্রদান করে থাকে। সাউথ এশিয়ান টেরোরিজম পোর্টালের প্রদেয় তথ্যানুযায়ী হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশ মূলত আফগানিস্তান, সৌদি আরব, পাকিস্তান এবং বেসরকারী সংস্থা যেমন আদর্শ কুটির, আল ফারুক ইসলাম ফাউন্ডেশন এবং হাতাতদ্বীন থেকে আর্থিক অনুদান পেয়ে থাকে। পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই থেকে আর্থিক সাহায্য পেয়ে থাকে। জাগ্রত মুসলিম জনতা বাংলাদেশ সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের অনুদান গ্রহণ করে দলের কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। স্থানীয় বেসরকারী এনজিও রাবেতা-ই-ইসলাম এবং ইসলামী ঐতিহ্য সংস্থা থেকেও তারা সাহায্য সহায়তা পেয়ে থাকে। জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ, কুয়েত, পাকিস্তান, সৌদি আরব, লিবিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন থেকে আর্থিক সাহায্য পায়। কুয়েতভিত্তিক বেসরকারী সংস্থা রিভাইবল অব ইসলামিক হেরিটেজ, দৌলয়াতুল কুয়েত, আমিরাতভিত্তিক আল ফুজাইরা, খাইরুল আনসার আল খায়রিয়া, বাহরাইনভিত্তিক দৌলয়াতুল বাহরাইন এবং সৌদি আরবভিত্তিক আল হারমেইন ইসলামিক ইনস্টিটিউট থেকে আর্থিক প্রণোদনা পেয়ে থাকে। বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে হিমাগার এবং চিংড়ি পালন ব্যবসার সঙ্গে এ দলের নেতারা জড়িত। চরমপন্থী গ্রুপগুলো আর্থিক জালিয়াতির মাধ্যমে, জাগ্রত মুসলিম জনতা যাকাত থেকে, নাম না জানা সন্ত্রাসী গ্রুপ ভারত এবং চীনের কমিউনিস্ট পার্টি থেকে, হিজবুত তাহরীর যুক্তরাষ্ট্র এবং পাকিস্তানের জঙ্গী গ্রুপ থেকে আর্থিক সাহায্য, পরামর্শ এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণও পেয়ে থাকে। ইসলামী ছাত্রশিবির আন্তর্জাতিক পরিসরে আন্তর্জাতিক ইসলামী ছাত্র ফেডারেশনের সদস্য পদ লাভ করে। পাকিস্তানের সিকিউরিটি এজেন্সি আইএসআই-এর সঙ্গে তাদের অন্তরঙ্গতা এমনকি বাংলাদেশে নির্বাচনের সময় তারা আর্থিক সহায়তা দিয়ে থাকে। ছাত্রশিবির আর্থিক জালিয়াতি, দাতব্য সাহায্য সংস্থা, পাকিস্তান, সৌদি আরব এবং মুসলিম এনজিও থেকে তাদের কার্যক্রমকে বলবৎ ও প্রসারিত করতে আর্থিক সাহায্য পেয়ে থাকে। তাছাড়াও মিডিয়ার জরিপে দেখা গেছে দেশে জামায়াতের প্রায় ৫২১টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে যেমন: ব্যাংক বীমা, হাসপাতাল সমিতি, ক্লিনিক, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, কোচিং সেণ্টার পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ও সংগঠন রয়েছে। এ সব প্রতিষ্ঠান থেকে প্রাপ্ত টাকা দিয়ে তারা তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি সন্ত্রাসবাদের কাজেও যুক্ত করে। বৈদেশিক আর্থিক সাহায্য জঙ্গী সংগঠনগুলোর কার্যক্রমকে আরও শাণিত, ধারালো এবং কর্মপরিধিও বৃদ্ধি করতে সহায়তা প্রদান করছে। গবেষণা থেকে প্রাপ্ত তথ্যে পাওয়া যায়, দারিদ্র্যপীড়িত এলাকায় জঙ্গী সংগঠনগুলোর কার্যক্রম বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে যারা অশিক্ষিত এবং দরিদ্র তাদেরকে সহজেই এ কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত করা যায়। তবে বর্তমানে অনেক উচ্চ এবং বিত্তবান ঘরের শিক্ষার্থীরাও জঙ্গী কার্যক্রমের সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ত করছে। কেন এ বিশাল গ্রুপটি জঙ্গী কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে তার কার্যকরণ এবং জঙ্গীবাদের দর্শনতত্ত্ব পরের কোন অনুচ্ছেদে লেখার চেষ্টা করব। অন্যদিকে সহকর্মী এবং সমমনাদের দ্বারা প্রলুব্ধকরণ প্রক্রিয়ার ফলে অনেকেই জঙ্গী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে। হলফ করে বলা যায়, জঙ্গীদের কার্যক্রমকে বেগবান করতে বৈদেশিক সাহায্য প্রদান বাংলাদেশে অব্যাহত রয়েছে। রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে অনেক সময় সন্ত্রাসবাদের চারণক্ষেত্র হিসেবে তৈরি করতে বিদেশী কূটনীতিকেরা বিশেষ করে দুষ্টু শ্রেণীর একদল প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভূমিকা পালন করে থাকে। অন্যদিকে দেখা যায়, আন্তর্জাতিক জঙ্গী সংগঠনগুলো তাদের সরাসরি পৃষ্ঠপোষকতায় বিভিন্ন দেশে তাদের কর্মকা-ের বিস্তার ঘটায়। যেমন: আফগানিস্তানের তালেবান এবং আল কায়েদা বাংলাদেশে জাগ্রত মুসলিম জনতা বাংলাদেশ এবং ইসলামী ঐক্যজোটকে তাদের কার্যক্রমে মদদ যুগিয়েছে। সন্ত্রাসবাদ এবং জঙ্গীবাদ প্রত্যয়টিকে অপরাধবিজ্ঞানের ভাষায় ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করতে গিয়ে তাত্ত্বিকগণ (ঈৎরসরহধষরুধঃরড়হ ড়ভ চড়ষরঃরপং) এবং (চড়ষরঃরপরুধঃরড়হ ড়ভ ঈৎরসরহধষ) প্রত্যয় দুটিকে ব্যবহার করেছেন। বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে ব্যাখ্যা করতে গেলে বলতে হয়, রাজনীতির যে মূলনীতি, কক্ষপথ এবং নীতিমালা তা থেকে রাজনীতিবিদগণ অনেক দূরে সরে আসছেন। পারস্পরিক সহযোগিতা, শ্রদ্ধাবোধ এবং জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতার বিন্দুমাত্র লেশ তাদের আচরণে পরিলক্ষিত হয় না। সুস্থ রাজনীতির চর্চার বিকাশ না ঘটা এর পিছনে অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে বিবেচিত। রাজনীতিতে অপরাধের ভিন্নরূপের সংযুক্ততা (দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার) বাংলাদেশের রাজনীতির স্বাভাবিক ও মসৃণ পথকে ক্রমান্বয়ে কন্টকাকীর্ণ করে তুলছে। অন্যদিকে বলা যায়, অপরাধীদের রাজনীতিতে অংশগ্রহণ বাংলাদেশের রাজনীতিকে দিন দিন কলুষিত করছে। ক্ষুদ্র স্বার্থ চরিতার্থের জন্য দেশের বৃহৎ স্বার্থকে বিসর্জন দেওয়ার নমুনা ইদানীং বাংলাদেশের রাজনীতিতে হরহামেশাই ঘটে চলেছে। অন্যান্য দেশের আইনসভার সদস্যদের পেশার তুলনামূলক বিশ্লেষণে দেখা যায়, যেখানে একটি বড় অংশ তাদের ছাত্রজীবন থেকে রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন সেখানে আমাদের দেশের সংসদে রাজনীতিবিদদের তুলনায় ব্যবসায়ীদের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। সমসাময়িক সময়ে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ সব ধরনের সভা সেমিনারে এ বিষয়টি উঠে আসে রাজনীতি এখন আর রাজনীতিবিদদের হাতে নয় চলে গেছে ব্যবসায়ীদের হাতে। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং গণতন্ত্রকে সুসংগঠিত করতে দলমত নির্বিশেষে সকলকে একত্রিত হয়ে সন্ত্রাস এবং জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। সরকারের একার পক্ষে এ অপশক্তিকে নিয়ন্ত্রণে আনা গেলেও ধ্বংস করা সম্ভব হবে না যতক্ষণ না পর্যন্ত জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ থাকবে এ বিষয়ে। দেশে পরিচালিত দেশী-বিদেশী এনজিওগুলোর টাকা আদান-প্রদান এবং লেনদেন সংক্রান্ত অনুমতির ক্ষেত্রে এনজিও ব্যুরোকে অধিকতর মনোযোগী হতে হবে। সাম্প্রতিক সময়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কতিপয় এনজিওর বিরুদ্ধে জঙ্গীবাদের মদদদাতা ও অর্থায়নে সংযুক্ততার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কয়েকটি এনজিওর কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ঐ সকল এনজিওর সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে যথাসম্ভব ত্বরিতগতিতে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। আর্থিক জালিয়াতি এবং টাকা পাচারের বিরুদ্ধে ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে আরও সচেতন এবং উদ্যমী ভূমিকা পালন করতে হবে। অস্বাভাবিক লেনদেন এবং হিসাবদারীর পেশা ও আয়ের বিবরণীর বিপরীতে টাকা জমাদান এবং উত্তোলন সংক্রান্ত নজরদারি বৃদ্ধি করতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেমন স্কুল, মাদ্রাসা, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেমেয়েদের জঙ্গীবাদের ক্ষতিকর দিকগুলো নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সচেতন করতে হবে। বিত্তশালীদের দান বা চাঁদা প্রদানের পূর্বে (অনেকেই অবৈধ উপায়ে অর্জিত আয়কে অকাতরে দান করে থাকে) যাদেরকে দান করা হচ্ছে সে বিষয়টি জেনে শুনেই দান করা উচিত। সমাজে অনেক সময় চরমপন্থীরা চাঁদাবাজি ও জোরপূর্বক ভয় দেখিয়ে অর্থ সংগ্রহ করে থাকে, এ বিষয়ে পুলিশ প্রশাসনকে আরও সতর্ক হতে হবে। জাতীয় দৈনিক এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়াকে যথাযথ তথ্য প্রদানের মাধ্যমে যথেষ্ট উদ্যোগী ভূমিকা রাখতে হবে, জনগণকে এ আন্দোলনের স্বার্থে একীভূত হতে হবে। লেখক : প্রভাষক, ক্রিমিনোলজি এ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
×