ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পাকিস্তানেই টেস্ট সিরিজ ॥ পিসিবি

প্রকাশিত: ১১:৪২, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৯

পাকিস্তানেই টেস্ট সিরিজ ॥ পিসিবি

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের পাকিস্তান সফর নিয়ে পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল হয়ে উঠেছে। এতদিন আলোচনাটা গোপনে চললেও এখন সবকিছু চলছে প্রকাশ্যে। নিরাপত্তাজনিত কারণে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের পক্ষে আপাতত পাকিস্তানে এক সপ্তাহের বেশি অবস্থান সম্ভব নয়। এ সময়ে সর্বোচ্চ তিনটি টি২০ ম্যাচ অনুষ্ঠিত হতে পারে। সম্ভাব্য তারিখ ২৩, ২৫ ও ২৭ জানুয়ারি। দুটি টেস্ট খেলতে হলে সেখানে অন্তত এক মাস অবস্থান করতে হবে, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) যেটি নিরপেক্ষ ভেন্যুতে খেলতে আগ্রহী। এই অবস্থায় প্রচ- ক্ষিপ্ত পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি) চেয়ারম্যান এহসান মানি প্রকান্তরে বাংলাদেশের ওপর চাপ সৃষ্টি করে বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, সফলভাবে শ্রীলঙ্কা সিরিজ আয়োজনের পর তার দেশ এখন সম্পূর্ণ নিরাপদ। শুধু বাংলাদেশ নয়, সূচী অনুযায়ী সব দেশকেই পাকিস্তানে যেতে হবে, নয়তো তাদেরই প্রমাণ করতে হবে যে পাকিস্তান নিরাপদ নয়! বাংলাদেশ পাকিস্তানে টেস্ট না খেললে পিসিবি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসির কাছে যাবে বলেও জানিয়েছেন পিসিবি প্রধান। ‘পাকিস্তানের হোম টেস্ট কোথায় হবে সেটা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভোগার কোন সুযোগ নেই। পাকিস্তানের সব ম্যাচ এখন থেকে দেশের মাটিতেই হবে। সেটা বাংলাদেশের বিপক্ষে হোক কিংবা অন্য দেশের বিপক্ষে। আমি আশা করব বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) বিষয়টি মাথায় রাখবে এবং আমাদের আমন্ত্রণ রাখবে। পাকিস্তান সফর না করার কোন কারণ নেই।’ মানির পরের বক্তব্য অবশ্য একটু কঠিন, ‘আমাদের পূর্ণ অধিকার আছে আইসিসির কাছে এ সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তোলার। আমি এ ব্যাপারে কিছু বলতে চাই না, কারণ বিসিবির সঙ্গে আমাদের কথোপকথন এখনও চলছে। তারা যখন আনুষ্ঠানিকভাবে আমাদের কোন সিদ্ধান্ত দেবে, তখন আমরা দেখব কী করা যায়। বাংলাদেশের নারী দল পাকিস্তানে এসেছে, ওদের অনুর্ধ-১৬ দলও এসেছে। এবং ওরা সবাই সন্তুষ্ট হয়েই ফিরেছে। তাই ওদের মনে কোন সন্দেহই থাকা উচিত নয় যে, যদি খেলতে চায় তবে পাকিস্তানেই খেলতে হবে।’ টেস্ট অধিনায়ক আজহার বলেন, ‘আমি নিশ্চিত পিসিবি ব্যাপারটা দেখছে, কিন্তু না আসার কোন কারণ তো দেখি না। এটা আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ম্যাচ। অনেক দলই এখানে এসে খেলে গেছে। বেশ কিছু পিএসএলের ম্যাচ খেলেছি। বিশ্ব একাদশ খেলেছে। অনেক গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় এখানে খেলেছে। আর শ্রীলঙ্কা দল এসে একটা নয় দুটি টেস্ট খেলেছে।’ বাংলাদেশ দল পাকিস্তানে গিয়ে টেস্ট খেলতে রাজি নয়, এমন সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে প্রধান কোচ ও প্রধান নির্বাচক মিসবাহ-উল-হক বলেন, ‘এটা অন্যায়।’ বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) প্রধান নির্বাহী নিজামুদ্দিন চৌধুরী সুজন নিরাপত্তার বিষয়টিকেই প্রাধান্য দিচ্ছেন, ‘পাকিস্তান বোর্ডের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ হচ্ছে, আমরা তাদের জানিয়ে দিয়েছি, সেখানে বেশি সময় অবস্থান করার পক্ষে নই। নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় রেখেই আমার এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’ কিন্তু যদি টি২০ খেলতে যাওয়া যায়, তবে টেস্ট খেলতে সমস্যা কোথায়? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যে কোন নিরাপত্তা বিশ্লেষকই বুঝবেন কম সময় আর বেশি সময় থাকার পার্থক্য রয়েছে। যেমন একটা গ-ির মধ্যে থাকতে হবে, ক্রিকেটারদের চলাফেরায় বাধ্যবাধকতা রয়েছে, সবকিছুই বিবেচনায় রাখতে হয়েছে। আর সর্বোপরি আমাদের প্রাথমিক প্রস্তাব আমরা সেখানে টি২০ খেলতে চাই। এরপর পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে।’ উল্লেখ্য, শ্রীলঙ্কাও দুই ভাগে পাকিস্তান সফর করেছে। প্রথমে তারা সেখানে দ্বিতীয় সারির দল নিয়ে তিনটি করে ওয়ানডে ও টি২০ খেলে এসেছে। মাস দুয়েক পর এবার খেলেছে দুই টেস্টের সিরিজ। পূর্ণশক্তির দল নিয়ে লঙ্কানদের সদ্যসমাপ্ত সিরিজের পরই মূলত ঘরের মাটিতে পাকিস্তান পূর্ণাঙ্গ সিরিজ আয়োজনের অনেকে বেশি আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছে। পিসিবি প্রধান মানির বক্তব্যে সেটিই ফুটে ওঠে। উল্লেখ্য, ২০০৯ সালে লাহোরে শ্রীলঙ্কান টিম বাসে বন্দুকধারীদের হামলায় নিরাপত্তারক্ষীসহ কয়েকজনের মৃত্যুর পর গত এক দশকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে পাকিস্তান কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। ২০১৬ ও পরবর্তী সময়ে জিম্বাবুইয়ে, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ছোট ফরমেটের কয়েকটি ম্যাচ খেলে আসলেও ওই ঘটনার পর এই প্রথম সেখানে টেস্ট সিরিজ খেলল শ্রীলঙ্কা।
×