ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সঠিক তালিকা করা হোক

প্রকাশিত: ০৯:০৫, ২৪ ডিসেম্বর ২০১৯

সঠিক তালিকা করা হোক

এমনিতেই দেরি হয়ে গিয়েছিল, কিন্তু তাড়াহুড়া করতে গিয়েই বেঁধেছে গ-গোল। বিষয়টি স্পর্শকাতর, তাই আরও সতর্ক ও সচেতন হওয়া ছিল আবশ্যক। তা হয়নি। ফলে রাজাকারের তালিকায় ঢুকে গিয়েছিল মহান মুক্তিযোদ্ধাদের নামও। বিষয়টি বিস্ময়কর এবং রহস্যজনকও বটে। যা হোক, শেষ পর্যন্ত তালিকাটি প্রত্যাহার করা হয়েছে। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী দুঃখ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীকে বলেছিলাম তাড়াহুড়া না করতে। এখানে অনেক ঝামেলা রয়ে গেছে, ভাল করে দেখতে হবে। আমিও খুব ব্যস্ত ছিলাম। এটা খুব স্বাভাবিক, যার পরিবারের কেউ শহীদ হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধ করেছে, তাদের নাম রাজাকারের তালিকায় দেখলে কষ্ট পাওয়া স্বাভাবিক। এর চেয়ে দুঃখের, কষ্টের আর কিছু হতে পারে না। তাদের বলব, আপনারা শান্ত হোন, ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখেন।’ এ কথার পর আর কোন কথা থাকে না। জল ঘোলা করা যাদের মজ্জাগত, যারা সরকারের সাফল্যে ঈর্ষান্বিত, কেবল তাদের পক্ষেই সম্ভব এ নিয়ে অহেতুক বিতর্ক করা। বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী ১০ হাজার ৭৮৯ রাজাকারের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছিল বিজয় দিবসের আগেই। মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এই তালিকা প্রকাশ করে বলেছিলেন, যারা শান্তি কমিটিতে ছিল তাদেরও নামের তালিকা প্রকাশ করা হবে। ’৭১ সালে কার কি ভূমিকা ছিল জাতি ও বিশ্ববাসীকে তা জানানোর জন্যই এই তালিকা প্রকাশ। ইতিহাসের স্বার্থেই এটা জাতির জানা প্রয়োজন। একাত্তরে খুন ধর্ষণ নির্যাতন লুণ্ঠনে যারা হানাদার পাকিস্তানী বাহিনীকে সহযোগিতা করেছিল সে সব রাজাকারের তালিকার প্রকাশ ভালমতো যাচাই-বাছাই করেই হোক, এমনটিই জাতির প্রত্যাশা। সে জন্য যদি আরেকটু বিলম্ব হয় তাও সকলে মেনে নেবেন বলে আশা করা যায়। উল্লেখ করা প্রয়োজন, একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধকালে যেসব রাজাকার-আলবদর মুক্তিযোদ্ধা ও নিরীহ জনগণকে হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, ধর্মান্তরিতসহ মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছিল তাদের বিচার হচ্ছে। ‘অপারেশন সার্চলাইটের’ আলোকে পাকি দখলদার বাহিনী ও তাদের এদেশীয় সহযোগী রাজনৈতিক দল ও শান্তি কমিটি। তাদের আক্রমণে ৩০ লাখ নর-নারী শহীদ হন, কয়েক লাখ মা-বোনের সম্ভ্রম লুণ্ঠিত হয়। প্রায় এক কোটি লোক শরণার্থী হয়ে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে আশ্রয় নেয়। অভিযানের সূচনায় জেনারেল টিক্কা খানের আদেশ ছিল, ‘আমি মানুষ চাই না, ভূমি চাই।’ অভিযানের নির্মমতা চেঙ্গিস খান, হালাকু খান, এমনকি ব্রিটিশ জেনারেল ডায়ারকেও ছাড়িয়ে যায়। বর্তমানে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে তাদের সেই দোসর-রাজাকার-আলবদরদের বিচার হচ্ছে। এ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ৪১ মামলার রায় ঘোষণা করা হয়েছে। ১০৫ আসামির মধ্যে দ- দেয়া হয়েছে ৯৫ জনকে, ছয় জনের মৃত্যুদ- কার্যকর করা হয়েছে। আরও ৩৩ মামলা বিচারাধীন রয়েছে। জাতির প্রত্যাশা রাজাকারের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশে মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত প্রাজ্ঞজনদের সংযুক্ত করা হবে এবং এই তালিকা থেকে একটি কুলাঙ্গারের নামও বাদ পড়বে না। আমরা জানি কাজটি দুরূহ, কিন্তু অসম্ভব নয়। দায়িত্বশীলতার সঙ্গেই কাজটি করতে হবে। এক সাগর রক্তের বিনিময়ে যারা আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছেলেন, যারা একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র আমাদের উপহার দিয়েছিলেন নিজের প্রাণ উৎসর্গ করে, তাদের প্রতি আমাদের দায় রয়েছে। সেই দায় পরিশোধে আরও বিলম্ব হোক, ক্ষতি নেই। কিন্তু সেই দায় পরিশোধ আমাদের করতেই হবে নির্ভুলভাবে, শতভাগ আন্তরিকতার সঙ্গে।
×