
ছবি: সংগৃহীত
যদি পৃথিবীতে কোথাও স্বর্গ থাকে, তবে এটাই, এটাই, এটাই। — শতাব্দী পুরনো এই পারস্য কবিতাটি বারবার উচ্চারিত হয় কাশ্মীরের প্রেক্ষাপটে। অনেক কাশ্মীরবাসী বলেন, এই কথাগুলো যেন পাহেলগামকে লক্ষ্য করেই লেখা হয়েছিল।
উচ্চ হিমালয়ের কোলে, লিডার নদীর পাশে অবস্থিত ছোট্ট পাহেলগাম শহরকে অনেকেই “ভারতের মিনি সুইজারল্যান্ড” বলেন। এখানে হ্রদ, বন, তৃণভূমি আর হিমবাহ মিলিয়ে পর্যটনের এক চমৎকার কেন্দ্র গড়ে উঠেছে।
কিন্তু গত ২২ এপ্রিল এই শান্ত শহর আলোচনায় আসে এক নির্মম হত্যাকাণ্ডের জন্য। বেইসারান নামক এক প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত তৃণভূমিতে সেদিন ২৫ হিন্দু পর্যটককে পরিবারগুলোর সামনেই গুলি করে হত্যা করে জঙ্গিরা। একজন মুসলিম টাট্টু চালক, যিনি পর্যটকদের সাহায্য করতে গিয়েছিলেন, তাকেও গুলি করে হত্যা করা হয়।
এই হামলার পর ভারত-পাকিস্তান পরমাণু যুদ্ধের কিনারায় চলে আসে। ভারত পাকিস্তানকে এই হামলার জন্য দায়ী করে, যদিও ইসলামাবাদ তা অস্বীকার করে। মে মাসে চারদিন ধরে দুই দেশ মিসাইল ও ড্রোন হামলা চালায়, পরে একটি নাজুক যুদ্ধবিরতিতে উপনীত হয়।
পাহেলগামে তখন থেকে যেন সময় থেমে গেছে। পর্যটননির্ভর অর্থনীতি প্রায় মুখ থুবড়ে পড়েছে। এপ্রিল-জুন এই অঞ্চলের মূল পর্যটন মৌসুম, কিন্তু এবছর তাতে চরম ধাক্কা লেগেছে।
জাভিদ বুরজা, পাহেলগাম হোটেল ও রেস্তোরাঁ সমিতির সভাপতি বলেন, “যা ঘটেছে তা বর্বরতা। নিরীহ মানুষদের হত্যা করা হয়েছে। যারা এখানে এসেছে প্রকৃতির টানে, তাদের লক্ষ্য করা হয়েছে। এখন আমরা সবাই তার খেসারত দিচ্ছি।”
কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ পর্যটকদের আশ্বস্ত করতে হামলার কয়েক সপ্তাহের মধ্যে পাহেলগাম সফর করেন এবং নিজের নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের উপদেশ উপেক্ষা করে শহরের রাস্তায় সাইকেল চালিয়ে মানুষকে উৎসাহ দেন।
ব্যবসায়ী ফয়জ আহমেদ বলেন, "আমার দোকানে আগের বছরগুলোতে এত ভিড় হতো যে বাইরে লাইনে দাঁড়াতে হতো। কিন্তু এখন ব্যবসা নেই বললেই চলে। তিনজন সেলসম্যান ছাঁটাই করতে হয়েছে।"
তিনি অবাক হয়ে বলেন, “১৯৮৯ সালের পর থেকে যখন কাশ্মীরে জঙ্গি আন্দোলন শুরু হলো, পর্যটকদের কখনোই টার্গেট করা হয়নি। এবার কেন করা হলো?”
হামলার সময় বেইসারানে প্রায় ৩০০ পর্যটক ছিলেন বলে জানান আবদুল ওয়াহিদ ওয়ানি, টাট্টু মালিকদের সংগঠনের সভাপতি। তিনি বলেন, "সেদিন আমি যা দেখেছি তা ভোলার নয়। নারী-শিশুর কান্না, লাশ, আহত মানুষ—আজও ঘুমাতে পারি না ঠিকমতো।"
তিনি ও তাঁর ভাই আহতদের পিঠে বা কাঠের খাটে করে নিচে নামিয়ে আনেন, যখন সেনা পৌঁছাতে আরও সময় নেয়।
তবে আশার আলো দেখা যাচ্ছে। হাজার হাজার হিন্দু তীর্থযাত্রী আমরনাথ যাত্রায় অংশ নিতে পাহেলগামে আসছেন। যদিও তাঁরা ক্যাম্পে থাকেন, তাই হোটেল ব্যবসায়ীরা এখনো বঞ্চিত।
তবুও পর্যটকেরা ফিরছেন। জুন মাসে কাশ্মীর উপত্যকায় ৪৫,০০০ এর বেশি পর্যটক এসেছেন, যাদের মধ্যে ৪০% পাহেলগামে গেছেন বলে জানিয়েছেন অল ইন্ডিয়া ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রবি গোসাইন।
শবিবা ও হামিদ জাফর, যারা গত বছরও এসেছিলেন, এবারো এসেছেন। বলেন, "আমাদের বন্ধুরা বলছিল, না যেতে। কিন্তু এখানে এসে দেখি একদম নিরাপদ, আর বাচ্চারা এত খুশি যে বলছে—চলো কাশ্মীরে চলে আসি!"
সুত্রঃ বিবিসি
নোভা