ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১২ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২

বিলিয়ন ডলারের ট্রেডার থেকে দুনিয়ার সবচেয়ে দরিদ্র মানুষ

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৮:৩২, ১২ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ০৮:৩৩, ১২ জুলাই ২০২৫

বিলিয়ন ডলারের ট্রেডার থেকে দুনিয়ার সবচেয়ে দরিদ্র মানুষ

ছবি: সংগৃহীত

প্যারিসের রাস্তায় হেঁটে যাওয়া একজন সাধারণ মানুষকে দেখে আপনি কখনও বুঝতে পারবেন না যে তিনি এক সময় বিশ্বের অন্যতম বড় আর্থিক বিপর্যয়ের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন। ফ্রান্সের ‘Societe Generale’ ব্যাংকের সাবেক ট্রেডার জেরোম কেরভিয়েল একাই এই প্রতিষ্ঠানে আনুমানিক ৭.২ বিলিয়ন ডলারের (৪.৯ বিলিয়ন ইউরো) ক্ষতি ঘটান। এক সময়ের প্রতিশ্রুতিশীল এই ট্রেডারকে এখন ডাকা হয় “বিশ্বের সবচেয়ে দরিদ্র মানুষ” নামে

১৯৭৭ সালে ফ্রান্সের ব্রিটানির ছোট শহর পঁ-লা-বে-তে জন্ম নেন কেরভিয়েল। তার মা ছিলেন একজন হেয়ারড্রেসার, বাবা একজন লোহার কামার। পরবর্তীতে লুমিয়ের ইউনিভার্সিটি লিওন-২ থেকে অর্থনীতিতে মাস্টার্স করেন।

২০০০ সালে যোগ দেন Societe Generale ব্যাংকে। ২০০৫ সালে তিনি ব্যাংকের উচ্চ প্রযুক্তির ‘Delta One’ বিভাগে কাজ শুরু করেন, যেখানে ইক্যুইটি ডেরিভেটিভস ও অ্যালগরিদমিক ট্রেডিং করা হতো। কম অভিজ্ঞতা সত্ত্বেও তার আইটি জ্ঞান ও সিস্টেম বোঝার দক্ষতা তাকে বিপজ্জনকভাবে ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ লেনদেন ব্যবস্থায় স্বাধীন করে তোলে।

২০০৬ থেকে ২০০৮ সালের মধ্যে কেরভিয়েল ব্যাংকের অনুমতি ছাড়াই ৫০ বিলিয়ন ইউরোর বেশি ট্রেড করেন। এসব লেনদেন গোপন রাখতে তিনি জাল লেনদেন তৈরি করেন। শুরুতে লাভ আসায় তার ওপর সন্দেহ করা হয়নি। কিন্তু ২০০৮ সালের জানুয়ারিতে যখন বিশ্ব আর্থিক বাজার ধসে পড়ে, তখন এই বিপুল লেনদেন ব্যাংককে প্রায় ধ্বংস করে দেয়।

২০০৮ সালের ২৪ জানুয়ারি, Societe Generale জানায় যে কেরভিয়েলের অবৈধ লেনদেনের কারণে ব্যাংক ৪.৯ বিলিয়ন ইউরো ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।

কেরভিয়েলকে গ্রেপ্তার করে বিশ্বাসভঙ্গ, জালিয়াতি ও কম্পিউটার ব্যবস্থার অপব্যবহারের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়। কেরভিয়েলের দাবি ছিল, ব্যাংক জানতো বা ইচ্ছাকৃতভাবে না দেখার ভান করেছিল, যতক্ষণ না লাভ আসছিল।

২০১০ সালে আদালত তাকে ৫ বছরের কারাদণ্ড দেয় এবং সম্পূর্ণ ৪.৯ বিলিয়ন ইউরো ফেরত দিতে আদেশ দেয় যা তাকে ‘পৃথিবীর সবচেয়ে ঋণগ্রস্ত মানুষ’ হিসেবে চিহ্নিত করে।

২০১৪ সালে ফরাসি ট্রেডার জেরোম কেরভিয়েল যখন তার কারাদণ্ডের মাত্র ৫ মাস ভোগ করে ইলেকট্রনিক নজরদারিতে মুক্তি পান, তখন তার জীবন এক নতুন মোড় নেয়। সমাজে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে এবং কর্পোরেট লোভ ও আর্থিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে তিনি নেন এক ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্ত—পায়ে হেঁটে রোম থেকে প্যারিস পর্যন্ত ১,৩০০ কিলোমিটার দীর্ঘ এক যাত্রা।

কেরভিয়েলের এই যাত্রা শুধুই প্রতীকী ছিল না, বরং এটি ছিল তার নৈতিক অবস্থান প্রকাশ এবং আত্মশুদ্ধির প্রয়াস। যাত্রা শুরুর আগে তিনি ভ্যাটিকানে পোপ ফ্রান্সিসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এই সাক্ষাৎ তাকে গভীরভাবে নাড়া দেয়। পোপ তাঁকে ক্ষমা, ন্যায়বিচার এবং মানবিকতা নিয়ে ভাবতে উদ্বুদ্ধ করেন।

পরে কেরভিয়েল বলেন, “পোপ ফ্রান্সিসের সঙ্গে দেখা আমাকে বদলে দিয়েছে। আমি বুঝতে পেরেছি, একটা দুষ্ট চক্রে পড়ে আমি নিজেকেও ভুলে গিয়েছিলাম।”

ফরাসি সুপ্রিম কোর্টও পরে তার ৪.৯ বিলিয়ন ইউরো ফেরতের আদেশ বাতিল করে দেয়, কারণ ব্যাংকের দুর্বল তদারকি এই ক্ষতির জন্য সমান দায়ী ছিল।

মুমু ২

আরো পড়ুন  

×