ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রিশা হত্যার রায়

প্রকাশিত: ০৯:০৪, ১৩ অক্টোবর ২০১৯

রিশা হত্যার রায়

তিন বছর আগে ২০১৬ সালের আগস্টে দুঃখজনক ও মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটার পর আমরা সম্পাদকীয়তে আশা প্রকাশ করেছিলাম যে, স্বল্পতম সময়ের ভেতর অপরাধীকে গ্রেফতার এবং দ্রুত বিচার আইনে বিচার করে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। শেষ পর্যন্ত বৃহস্পতিবার রায়ে আসামি ওবায়দুল খানের মৃত্যুদ-ের রায় হয়েছে। ফলে আরও একবার প্রমাণ হলো যে, বর্তমান সরকারের আমলে আইনের শাসন সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে। মেয়েশিশু ও নারীর প্রতি সহিংসতার ব্যাপারে সরকার অত্যন্ত কঠোর। আমাদের সমাজে ইভটিজিংয়ের কারণে অল্প বয়সী মেয়েদের করুণ অবস্থার কথা, এমনকি মৃত্যুর ঘটনা অসংখ্যবার ঘটেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রতিটি ঘটনার পর যথাযথ পদক্ষেপও নিয়েছে। মেয়েদের স্কুলের সামনে পুলিশ টহল এবং অন্যান্য কার্যক্রম নিতেও দেখেছি আমরা। এর সুফলও মিলেছে। এরকম একটি পরিস্থিতিতে রাজধানীর ব্যস্ত একটি এলাকায় প্রকাশ্য দিবালোকে নামী স্কুলের সামনে বখাটের হাতে ওই স্কুলে অধ্যয়নরত ছাত্রী রিশার ছুরিকাহত হওয়ার ঘটনায় একই সঙ্গে বিমূঢ় ও ক্ষুব্ধ হয়ে পড়েছিল সমাজ। বখাটে যুবকের হাতে উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী সুরাইয়া আক্তার রিশার মর্মান্তিক মৃত্যু আবারও চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিল আমাদের সমাজে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা কেমন। পথে-ঘাটে মেয়েদের উত্ত্যক্ত করার বিষয়টি কমেছে বলে অনেকে মনে করেন। আসলে কি কমেছে? এ ধরনের ঘটনা প্রায়ই গোপন করে যাওয়া হয়। এটা একই সঙ্গে বিস্ময় ও ক্ষোভের কারণ যে, প্রকাশ্য দিবালোকে ব্যস্ত জনপদে স্কুলের সামনে বখাটে যখন হামলা করল, তখন আশপাশের মানুষ কেন বাধা দিতে এলো না? কোথায় চলেছে আমাদের সমাজ! মানুষের ভেতর মানবিকতা ও দায়িত্ববোধ কি লুপ্ত হতে বসেছে? কারও সন্তান রাস্তায় বিপদে পড়লে সে সন্তানটির পাশে কি কেউ এসে দাঁড়াবেন না? রিশার ছুরিকাঘাতে আহত হওয়ার স্থানটির কাছাকাছি পুলিশেরও থাকার কথা। সবার চোখের সামনে দিয়ে ঘাতকের পালিয়ে যাওয়ার বিষয়টিও মানুষ ভোলেনি। যদিও সপ্তাহখানেকের প্রচেষ্টায় অপরাধীকে পুলিশ পাকড়াও করে। স্মরণযোগ্য, ঢাকা থেকে নয়, ডোমার উপজেলার একটি বাজারের হোটেলে নাশতা করার সময় স্থানীয় জনসাধারণ কৌশলে আটকে রেখে থানায় খবর দিলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এসে আসামিকে গ্রেফতার করে। বিষয়টি সে সময় সমাজকে স্বস্তি দিয়েছিল। মানুষ আশাবাদী হয়ে উঠেছিল। অভিভাবকরা ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠানোর পর সঙ্গত কারণেই সন্তানদের নিরাপত্তা ও অন্যান্য বিষয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষের ওপর নির্ভর করেন। সেখানে ছোটখাটো গাফিলতি ও উপেক্ষা বড় ক্ষতির কারণ হয়ে উঠতে পারে। রিশা নিশ্চয়ই একা নয়, বখাটের উৎপাতে তার মতো আরও অনেক কোমলমতি শিশু-কিশোরী শিক্ষার্থীর স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। অভিভাবকদের সময় কাটছে আতঙ্কের ভেতর দিয়ে। এমন সমাজ আমাদের কাম্য নয়। বখাটেদের কারণে আর কোন মেয়ের করুণ মৃত্যু আমরা দেখতে চাই না। আর কোন বাবার হাহাকার, মায়ের আহাজারি আমরা শুনতে চাই না। বখাটেদের বলি হওয়ার সব পথ বন্ধ করার জন্য প্রশাসনকে সর্বোচ্চ তৎপর হতে হবে। সমাজেরও জেগে ওঠা চাই। পরিবারের অভিভাবকরা যদি তাদের সন্তানদের সততা, নৈতিকতার শিক্ষা দেন এবং সেভাবে কঠোর অনুশাসনের মধ্যে গড়ে তোলেন তবে ওই সন্তানের বখাটে, সন্ত্রাসী হওয়ার সম্ভাবনা কম। পাশাপাশি সমাজের নেতা ও রাজনৈতিক নেতৃত্বেরও নির্মোহ ভূমিকা প্রয়োজন। দেরিতে হলেও রিশা হত্যাকারীর বিচার সম্পন্ন হওয়া আইনের শাসনের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
×