ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

টি ইসলাম তারিক

ছন্দে ফিরতে আশাবাদী টাইগাররা

প্রকাশিত: ১২:০৭, ৩১ জুলাই ২০১৯

ছন্দে ফিরতে আশাবাদী টাইগাররা

আকস্মিকভাবে ছন্দপতন ঘটেছে বাংলাদেশের ক্রিকেটে। সেমিফাইনালে খেলার স্বপ্ন নিয়ে বিশ্বকাপ মিশনে গেলেও শেষের দিকের ব্যর্থতায় দশ দলের মধ্যে আটে থেকে মিশন শেষ করতে হয় টাইগারদের। ব্যর্থতার ধারা থেকে বের হয়ে দলকে চনমনে করতে হঠাৎ করেই শ্রীলঙ্কা সফরের আয়োজন করে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। কিন্তু উদ্যোগটা ফলপ্রসূ হয়নি; উল্টো লঙ্কাভূমিতে টানা দুই ম্যাচ হেরে আরও চাপে পড়েছে দেশের ক্রিকেট। বিশ্বকাপে নিজেদের শেষ দুই ম্যাচে হেরেছিল বাংলাদেশ। লঙ্কা সফরে প্রথম দুই ম্যাচ হেরে ইতোমধ্যে সিরিজ পরাজয় নিশ্চিত হয়েছে। সবমিলিয়ে ওয়ানডেতে টানা চার ম্যাচ হেরে মানসিকভাবে বেশ পর্যদুস্ত টাইগার ক্রিকেট। নিয়মিত অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা ও বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের অনুপস্থিতিতে শ্রীলঙ্কায় বাংলাদেশের পারফরমেন্স একেবারেই সাদামাটা। একমাত্র মুশফিকুর রহীম ব্যতিক্রম। উইকেটরক্ষক এই ব্যাটসম্যান হাল না ধরলে বাংলাদেশকে আরও বড় লজ্জা পেতে হতো। শ্রীলঙ্কা সফরে প্রথম ম্যাচে সাবেক বাংলাদেশ অধিনায়ক করেন ৬৭ রান। এরপর রবিবার দ্বিতীয় ম্যাচে দলের মহাব্যাটিং বিপর্যয়ের সময় হাল ধরে করেন হার না মানা ৯৮ রান। কিন্তু সতীর্থদের ব্যর্থতায় ম্যাচ শেষে হাসতে পারেননি ৩২ বছর বয়সী বগুড়ার ক্রিকেটার। তবে টানা এই ব্যর্থতার মাঝেও হতাশ নন মুশফিক। সাবেক বাংলাদশে অধিনায়ক মনে করেন দেশের ক্রিকেট সঠিক পথেই আছে। সময়টা খারাপ গেলেও ঘুরে দাঁড়াতে আশাবাদী সর্বকালের অন্যতম সেরা এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান। ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক তামিম ইকবালও হাল ছেড়ে দিচ্ছেন না। তিনিও আশাবাদী দল ঘুরে দাঁড়াবে। এই প্রথম কোন ওয়ানডে সিরিজে বাংলাদেশ দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তামিম। অধিনায়ক হিসেবে নিজে ব্যাট হাতে দারুণ কিছু করে বাকিদের জন্য উদাহরণ ও অনুপ্রেরণা হওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু নিজেই টানা ব্যর্থতার বৃত্ত থেকে বের হতে পারেননি। টানা ৬ ওয়ানডেতে বোল্ড আউট হয়ে সাজঘরে ফিরেছেন। চলমান ওয়ানডে সিরিজের দুই ম্যাচেই বোল্ড হওয়ার পাশাপাশি বল ঠেকাতে গিয়ে মাটিতে ভূপাতিত হয়েছেন। প্রথম ওয়ানডেতে ০ আর দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ১৯ রানে সাজঘরে ফেরেন তামিম। সে কারণে ওপেনিং জুটিতে ভাল কোন রান যেমন পায়নি বাংলাদেশ দল, তেমনি শুরুতেই ঘোর বিপর্যয়ে পতিত হয়েছে। এ বিষয়ে তামিম বলেন, আমরা গুরুত্বপূর্ণ টস জিতেছিলাম, জানতাম উইকেটে স্পিন ধরতে যাচ্ছে। আমাদের শুরুটা ভাল করতে হতো। আমরা শুরুটা ভাল করতে পারিনি বলেই পুরো ম্যাচটাই খারাপ গেছে। দীর্ঘদিন পর ওয়ানডে একাদশে জায়গা ফেরত পান বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম। তামিম জানালেন, উইকেট থেকে বাড়তি টার্ন পেতেই একজন বাড়তি স্পিনার দলভুক্ত করা হয়। তিনি বলেন, আমরা জানতাম যে, উইকেট থেকে স্পিন পাওয়া যাবে পরে। আমরা এ কারণেই একজন বাড়তি স্পিনার দলে নিয়েছিলাম। কিন্তু টস জিতে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে ভাল রান করতে পারেনি বাংলাদেশ দল। বাজে ব্যাটিংয়ের নমুনা দেখিয়েছেন ব্যাটসম্যানরা। মাত্র ১১৭ রান করতে গিয়ে ৬ উইকেট হারায় বাংলাদেশ দল। মুশফিকুর রহীমের অপরাজিত ৯৮ রানের কল্যাণে শেষ পর্যন্ত ৮ উইকেট হারিয়ে ২৩৮ রানের মামুলী সংগ্রহ পায় তারা। কিন্তু তিনশ’র উপরে রান করলেও খুব একটা লাভ হতো না বলে দাবি তামিমের, ‘আমি টসের সময়ে বলেছিলাম যে আমাদের শুরুটা ভাল করতে হবে; কিন্তু ৫০ রানে যখন চার উইকেট হারিয়ে ফেলে কেউ, তখন সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানো অসম্ভব। প্রথম দিকে দ্রুত উইকেট হারানোর কারণে আমরা সেটা পারিনি। আমরা যেভাবে বল করেছি, তাতে ব্যাটিংয়ে ৩০০ রান করলেও জয়ের জন্য যথেষ্ট হতো না। তবে এটি ৩০০ রান করার মতো উইকেট ছিল না; যদিও ২৬০ রান ভাল স্কোর হতে পারত আমাদের জন্য।’ বাস্তবে ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় বড় সংগ্রহ হয়নি দলের। সে কারণে ফিল্ডিংয়ে দুর্দশা দেখা গেছে। এর কারণ হিসেবে তামিম বলেন, আমরা দুই ম্যাচেই আমাদের মোমেন্টাম পেয়েছি, কিন্তু আমরা প্রস্তুত ছিলাম না কঠোর পরিশ্রম করে জয় ছিনিয়ে আনতে। গা ছেড়ে দিয়েছিলাম আমরা।’ ২০০৭ সালের পর প্রথমবার শ্রীলঙ্কার মাটিতে দ্বিপাক্ষিক ওয়ানডে সিরিজ হেরে গেল বাংলাদেশ। ২০১৩ ও ২০১৭ সালে আগের দুই সফরে তিন ম্যাচের সিরিজ তারা শেষ করেছিল ১-১ এ সমতায় রেখে। কিন্তু এবার এক ম্যাচ আগেই তাদের বিপক্ষে সিরিজ জিতলো লঙ্কানরা। সিরিজ হার নিশ্চিত হওয়ার পর নিজের ও দলের পারফরমেন্স নিয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন মুশফিকও। সাবেক বাংলাদেশ অধিনায়ক বলেন, এটা ঠিক এখন আমাদের কঠিন সময় যাচ্ছে। কিন্তু এটাই দেখানোর চ্যালেঞ্জ আমরা কতটা ঘুরে দাঁড়াতে করতে পারি। বিষয়টা সবার মাথায় আছে; আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করছি। এখন প্রায় প্রতি ম্যাচেই একই চিত্র দেখা যাচ্ছে। ব্যাট হাতে প্রায় সবাই ব্যর্থ হচ্ছেন, আর মুশিকে লড়াই করতে হচ্ছে একাই। এ বিষয়ে দৃঢ়চেতা এই ক্রিকেটার বলেন, এমন পরিস্থিতিতে ব্যাটিং করা আমার জন্যও অনেক কষ্টকর। অনেক সময় ঝুঁকি নিতে চাইলেও ব্যাক অফ মাইন্ডে থাকে যে, উইকেট পড়ে গেলে হয়ত রানটাও হবে না। পরের দিকে বা শেষের দিকে কেউ তো নেই। তখন কঠিন হয়ে যায়। তবে দলের তারকা ব্যাটসম্যানরা শীঘ্রই জেগে উঠবে বলে আশাবাদী মুশফিক, ‘কেউই চায় না যে, টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানরা বার বার ব্যর্থ হবে। তারা চেষ্টা করছে এবং আমি আশা করি পরের ম্যাচে তারা ওভারকাম করবে। ব্যাটিং-বোলিং-ফিল্ডিং ভাল না হলেও, প্রত্যকেই তাদের সেরাটা উজার করে দেয়ার চেষ্টা করছেন।’ সবার চেষ্টার যে কমতি নেই বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিয়ে মুশি বলেন, আমরা সবাই শতভাগ চেষ্টা করছি। ফিল্ডিং এমন একটা বিষয় বাইরে থেকে দেখা যায় কেমন করছে। আমার মনে হয় একটু উন্নতি করলেই আমাদের পুরো দলটাই চাঙ্গা থাকবে। সত্যি কথা বলতে সবারই খারাপ সময় যেতে পারে, এমন না যে তারা চেষ্টা করছে না। অনেক সময় অনেক বেশি চেষ্টা করলেও হয় না। সবাই আলাদাভাবে অনেক চেষ্টা করছে। আমিও সেভাবেই চেষ্টা করি। লঙ্কার কাছে সিরিজ হারেই বাংলাদেশের সব শেষ হয়ে যায়নি বলে মনে করেন মুশফিক। ঘুরে দাঁড়াতে আশাবাদী এই লড়াকু ক্রিকেটার বলেণ, আমার কাছে সবসময় মনে হয় বিশ্বকাপে আমরা যেভাবে চেয়েছিলাম সেভাবে হয়নি। এই সিরিজে আমাদের সুযোগ আমরা সঠিক পথেই আছি, এটা প্রমাণ করার। কিন্তু প্রথম দুই ম্যাচে আমরা পারিনি। তবে এর মানে এই না, আমরা গত ৫-৭ বছরে যা করেছি সব এক সিরিজ দিয়েই মুছে যাবে। আশা করছি সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে যাবে। মুশি বিশ্বাস করেন, সময় সবার এক রকম যায় না। কারও ভাল যায়, কারও বা খারাপ যায়। এখন হয়ত তাঁর ভাল সময় যাচ্ছে। অন্য সময় অন্য কেউ ভাল করবে। এই বিশ্বাস ধারণ করে মুশফিক বলেন, এখন আমাকে দিচ্ছেন সৃষ্টিকর্তা। এরপর কয়েকটা ম্যাচে অন্য কেউ করবে। আমার এ রকম নাও হতে পারে। সবসময় সবাই চেষ্টা করে। সবাই জানে কত কষ্ট করে এই জায়গাতে আসতে হয়। এই জায়গাটা ধরে রাখা কত কষ্টের। আমার মনে হয় না কেউ এত সহজে জায়গাটা ছেড়ে দিতে চাইবে। এই জায়গাটার মূল্য দিতে চাইবে না। আমার মনে হয় সবাই এটার মূল্য দেয়। কিন্তু অনেক সময় কাজে দেয় না।
×