ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আকাশ থেকে পাতালে রাবাদা

প্রকাশিত: ১২:৩২, ২৬ জুন ২০১৯

আকাশ থেকে পাতালে রাবাদা

জাহিদুল আলম জয় ॥ একেবারে আকাশ থেকে পাতালে নেমে এসেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার পেসার কাগিসো রাবাদা। চলমান বিশ্বকাপ ক্রিকেটে দক্ষিণ আফ্রিকার ভরাডুবির অন্যতম প্রধান কারণ এই গতিদানবের নিষ্ক্রিয়তা। বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত তিনি ৫০.৮৩ গড়ে মাত্র ৬ উইকেট নিয়েছেন। অথচ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগ (আইপিএল) মাতিয়ে বিশ্বকাপে আসেন ২৪ বছর বয়সী এই ডানহাতি পেসার। ভারতে আগুনে বোলিং করে বিশ্বকাপে এসেছেন। কিন্তু ইংল্যান্ডে দেশের হয়ে কিছুই করতে পারছেন না রাবাদা। যার মাসুল প্রোটিয়াদের দিতে হয়েছে সেমিফাইনালের আগেই বিদায় নিয়ে। সাধারণ আইপিএলে খেলতে মুখিয়ে থাকেন বিশ্বের যে কোন ক্রিকেটারই। এখানে সুযোগ পাওয়া মানে বড় অর্জন-পাওয়া এমনটিই মনে করা হয়। কেননা পরিচিতির পাশাপাশি অর্থের ঝনঝনানিও আছে। কিন্তু বিপরীত চিত্রও আছে। আইপিএলে খেলার কারণে অনেকে দেশের হয়ে ঠিকমতো পারফর্ম করতে পারেন না। শুধু তাই নয়, আইপিএলে খেলার কারণে অনেকে নিজ দেশের হয়ে খেলতে অনীহা প্রকাশ করেন। শ্রীলঙ্কার গতিদানব লাসিথ মালিঙ্গা যেমন আইপিএলে বেশি সময় দেয়ার জন্য টেস্ট ও টি২০ থেকে অবসর নিয়েছেন। এখন রাবাদার জন্যও আইপিএল খেলাটা কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্বকাপে তার নির্বিষ বোলিং সে সাক্ষ্যই দিচ্ছে। এবারের আসরে ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং সবদিক থেকেই ভক্তদের হতাশ করেছে প্রোটিয়ারা। তাদের বোলিং লাইনআপকে এবারের বিশ্বকাপের অন্যতম সেরা ভাবা হচ্ছিল। কিন্তু প্রত্যাশার ছিঁটেফোটাও দিতে পারেননি কাগিসো রাবাদা-লুঙ্গি এনগিদিরা। বিশেষ করে রাবাদার ওপর সবচেয়ে বেশি ক্ষুব্ধ দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক ফাপ ডু প্লেসিস। আইপিএলের আগে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে দুর্দান্ত ফর্মে ছিলেন রাবাদা। নিজের সেই আগুন ঝরানো বোলিং আইপিএলেও দেখান এই পেসার। কিন্তু মাঝপথে ইনজুরিতে পড়ায় আসর থেকে ছিটকে পড়েন তিনি। বিশ্বকাপের কিছুদিন আগে ফিট হয়ে উঠলেও মূলমঞ্চে পুরোপুরি নিষ্প্রভ রাবাদা। এমন ব্যর্থতার জন্য আইপিএলে খেলাকেই দুষছেন দক্ষিণ আফ্রিকা অধিনায়ক ডু প্লেসিস। তার মতে আইপিএলে খেলার কারণেই বিশ্বকাপে ফ্লপ হয়ে গেছেন রাবাদা। প্লেসিস এ প্রসঙ্গে বলেন, এ বিষয়ে কোন ভাল উত্তর আমরা খুঁজে পাব বলে আমি মনে করি না। কারণ সেই (রাবাদা) খুব সম্ভবত অসহ্য ছিল এই ব্যাপারটি নিয়ে। কিন্তু আমরা চেষ্টা করে গেছি এবং তাকে আইপিএলে না যাওয়ার জন্য বলেছিলাম। যাতে করে সে যেন নিজের শরীরটা তরতাজা রাখতে পারে। তারপরও সে যখন ওখানে (আইপিএল) গেল, আসরের মাঝপথেই তাকে ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা করে গেছি আমরা। কারণ এটা জরুরী ছিল। শুধু তার জন্যই নয়, অন্য খেলোয়াড়দের জন্যও। প্রোটিয়া অধিনায়ক আরও বলেন, এই ব্যাপারে আমি আইপিএল শুরু হওয়ার আগেই কথা বলেছি। আমাদের তিন ফরমেটের খেলোয়াড়দের জন্য বিশ্রামের সময়টা খোঁজা জরুরী ছিল। কারণ তারা সবসময়ই তিন ফরমেটে ক্রিকেট খেলে থাকে। এরপর থাকে আইপিএল। আমি এটা মনে করি না আইপিএলে খেলার কোন প্রয়োজনীয়তা নেই; তবে কিছু খেলোয়াড়ের জন্য বিশ্রামে থাকাটা জরুরী। অবশ্য বিশ্বকাপে প্রত্যাশার সঙ্গে প্রাপ্তির যোগফল না মিললেও রাবাদার ঘুরে দাঁড়ানোর বিষয়ে আশাবাদী প্লেসিস। এ বিষয়ে তার ভাষ্য, রাবাদা অসাধারণ একজন বোলার। শীঘ্রই দুঃসময় কাটিয়ে উঠবে সে। রাবাদাও বিশ্বকাপের ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে আশাবাদী। সাক্ষাতকারে রাবাদা বলেন, এবার কিছু কিছু ম্যাচে এমন কিছু মুহূর্ত এসেছে যেখানে আমাদের ভাগ্য সহায় ছিল না। আবার একই সঙ্গে আমরা নিজেরাও কিছু মুহূর্তের সদ্ব্যবহার করতে পারিনি। কিন্তু এর থেকে শেখার অনেক কিছু আছে। বিষয়গুলো এতটা সহজ নয়। যতক্ষণ কোন দল শীর্ষে অবস্থান করে সেটা ধরে রাখা মোটেই সহজ কাজ নয়। আবার যখন সেই অবস্থান থেকে নীচে নেমে আসে তখন অনুভূতিগুলো ভিন্নভাবে ধরা দেয়। একটি খেলোয়াড় বা একটি দলের চড়াই-উতরাই থাকবেই, সেটাকে সঠিকভাবে মোকাবেলা করাই মূল চ্যালেঞ্জ। তিনি আরও বলেন, এখন গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে সব হতাশাকে পিছনে ফেলে ফিরে আসা। ইতিবাচক থেকে ভবিষ্যতের সঠিক পরিকল্পনা করা।
×