ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

‘ছোটন-কাচ্চু’র হাতে বাংলাদেশ জাতীয় ব্রিজ দলের ভবিষ্যত

প্রকাশিত: ১১:৫৯, ২৪ মার্চ ২০১৯

‘ছোটন-কাচ্চু’র হাতে বাংলাদেশ জাতীয় ব্রিজ দলের ভবিষ্যত

রুমেল খান ॥ দু’জনেই ‘ওপার বাংলার বাঙালী’। দু’জনই ব্রিজ খেলোয়াড় জুটি। দু’জনই এশিয়ান গেমসে স্বর্ণজয়ী। তবে ভারত নয়, তাদের কাজে লাগাতে চাচ্ছে বাংলাদেশ ব্রিজ ফেডারেশন। ওপার বাংলা এই গুরুদায়িত্ব অর্পণ করেছে দুই তারকা খেলোয়াড়ের কাঁধে। শনিবার সর্বভারতীয় ডুপ্লিকেট ব্রিজ জুটি প্রণব কুমার বর্ধন এবং শিবনাথ দে সরকারের সঙ্গে এক বছরের (৩০ এপ্রিল, ২০২০ পর্যন্ত) চুক্তি করেছে ব্রিজ ফেডারেশন। ফেডারেশনের পক্ষে চুক্তি স্বাক্ষর করেন সভাপতি মুশফিকুর রহমান মোহন। চলতি বছরের জুলাইয়ে সুইডেনে আয়োজিত চেয়ারম্যান কাপ যা বিশ্বের অন্যতম কঠিন প্রতিযোগিতা এবং আগস্টে ক্রোয়েশিয়াতে আয়োজিত যুব বিশ্বকাপকে মাথায় রেখেই বাংলাদেশের জুনিয়র এবং সিনিয়র দলের দায়িত্ব যথাক্রমে প্রণব এবং শিবনাথের হাতে তুলে দিয়েছে ফেডারেশন। আগামী এক বছরের জন্য প্রাথমিক চুক্তি হলেও পরবর্তীকালে চুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হবে বলে জানিয়েছে ফেডারেশন। এছাড়াও আগামী দিনে জাতীয় পর্যায়ে পুরুষদের পাশাপাশি মহিলা ব্রিজ খেলোয়াড়ও তুলে আনার বিষয়েও বদ্ধপরিকর ফেডারেশন। প্রণবের ডাকনাম ছোটন। বয়স ৬২। বহু বছর ধরেই ব্রিজ খেলছেন। এশিয়ান গেমসে এবারই প্রথম ব্রিজ অন্তর্ভুক্ত হয়, প্রথমবারই শিবনাথের সঙ্গে জুটি বেঁধে চ্যাম্পিয়ন হয়ে আলোচনায় আসেন। জনকণ্ঠকে বলেন, ‘কাচ্চুর সঙ্গে জুটি বেঁধে গত কুড়ি বছর ধরে খেলছি। ভারতে এমন লম্বা ব্রিজ পার্টনারশিপ খুব কমই আছে। আমাদের অনেক সাফল্য আছে। এশিয়ান গেমস ছাড়াও গত বছর এশিয়া প্যাসিফিকে আমরা গোল্ড মেডেল জিতেছি। মোহনবাবু আমাদের বাংলাদেশ দলের কোচ করে যে সম্মান দিয়েছেন তাতে আমরা গর্বিত। এখন আমাদের দায়িত্ব এই সম্মানের যোগ্য প্রতিদান দেয়া। বাংলাদেশের ব্রিজকে আমরা একটা জায়গায় নিয়ে যেতে চাই।’ যাদবপুরের বাসিন্দা প্রণব সামলাবেন বাংলাদেশ জাতীয় সিনিয়র দলের দায়িত্ব। আর জুনিয়র দলকে প্রশিক্ষণ দেবেন শিবনাথ। শিবনাথের কোচিংয়ের পূর্ব-অভিজ্ঞতা থাকলেও (তিনি ভারতীয় জুনিয়র ব্রিজ দলেরও কোচ) কোচ হিসেবে বাংলাদেশ দিয়েই অভিষিক্ত হচ্ছেন প্রণব। ব্রিজ খেলা নিয়ে বিস্তর পড়াশোনা করেছেন তিনি। ‘খেলোয়াড়রা অনেক মেধাবী। তারা যে সিস্টেমে খেলে তাতে আমি কোন পরিবর্তন ঘটিয়ে তাদের বিভ্রান্ত করতে চাই না। শুধু তাদের স্টাইলটাকে আরও মডিফাই করার পাশাপাশি তাদের মানসিক শক্তি বৃদ্ধি করার কাজটা করব। খেলোয়াড়দের সঙ্গে ইতোমধ্যেই দারুণ বন্ধুত্ব হয়ে গেছে। আমাদের অনেক সম্মান করে ওরা। আশাকরি ওদের কাছ থেকে সেরা খেলাটাই বের করে আনতে পারব।’ প্রণবের স্ত্রী স্কুল শিক্ষিকা। মেয়ে বিজ্ঞানী। এক নাতি আছে, বয়স দুই। নাতিকেও ব্রিজ খেলোয়াড় বানানোর ইচ্ছে আছে। এর আগে ২০১৪ সালে বাংলাদেশে এসেছিলেন ঢাকা ক্লাবে খেলতে। শিবনাথের ডাকনামটা বেশ মজার, ‘কাচ্চু’। বয়স ৫৬। তিনি বলেন, ‘মোহন ভাই আমাদের খুব ভাল বন্ধু। পরিচয় বছর দশেকের। উনি বাংলাদেশের ব্রিজ খেলার যেভাবে উন্নয়ন ঘটানোর চেষ্টা করছেন, সেটাকে আরও এগিয়ে দিতে চাই।’ শিবনাথ ২০১১-১২ থেকেই বাচ্চাদের নিয়ে কাজ করছেন, ‘আমার ১৫ স্টুডেন্ট আজ ভারতের জুনিয়র চ্যাম্পিয়ন প্লেয়ার। সবচেয়ে অল্পবয়সী প্লেয়ারটার বয়স মাত্র ১০। এটা একটা রেকর্ড। বাংলাদেশী খেলোয়াড়দের মধ্যে অনেক প্রতিভাবান আছে। তাদের যদি ঠিকমতো ট্রেনিং দেয়া যায় তাহলে তারা অবশ্যই আগামী দু’বছরের মধ্যেই এশিয়ান গেমস মাতাতে পারবে বলে আমার দৃঢ়বিশ্বাস।’ বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা বেশি টুর্নামেন্টে খেলে না, যেটা খেলে ভারতের খেলোয়াড়রা। এখানেই পিছিয়ে বাংলাদেশ। এছাড়া স্পন্সরশিপেও পিছিয়ে আছে তারা। এই দুটি ঘাটতি পূরণ হলেই তারা অনেকদূর এগিয়ে যাবে বলে মনে করেন শিবনাথ। হাওড়ার অধিবাসী কাচ্চুরা তিন ভাই, তিন বোন। ‘আমরা ভাইবোনরা সবাই ব্রিজ খেলি। এই খেলার নেশায় এখনও বিয়েটাই করা হয়নি। আসলে ব্রিজই আমার স্ত্রী বলতে পারেন!’ ব্রিজ ফেডারেশনের সভাপতি মোহন বলেন, ‘প্রণব-শিবনাথের সঙ্গে আমার বহু বছরের বন্ধুত্বের সম্পর্ক। তারা দু’জনই বিশ্বমানের খেলোয়াড়। তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ তারা আমাকে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দেয়ায়।
×