ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৫:১৬, ৪ ডিসেম্বর ২০১৮

দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বর্তমান সরকার তথা আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার লেখার প্রস্তুতি চলছে জোরেশোরে। দলের সাধারণ সম্পাদক ইতোমধ্যে বলেছেন, বিজয়ের মাসের মাঝামাঝি তা ঘোষিত হতে পারে। ইশতেহার একটি রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী অঙ্গীকার, যেটি তারা নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় গেলে বাস্তবায়িত করে থাকে। বর্তমান সরকার গত দশ বছরের উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতায় এবারও তার নির্বাচনী অঙ্গীকার ঘোষণা করবে বলেই প্রত্যাশা। আসন্ন নির্বাচনে জনগণের ভোটে দায়িত্ব পেলে আগামী পাঁচ বছরে জাতীয় প্রবৃদ্ধি দুই ডিজিটে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে দলটি। এই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়েই গৃহীত এবং প্রণয়ন করা হবে পরবর্তী পাঁচশালা পরিকল্পনা। অগ্রাধিকার পাবে দারিদ্র্য বিমোচন ও কর্মসংস্থান প্রকল্প। দেশের তরুণ সমাজকে কাজ দিতে গ্রহণ করা হবে বিভিন্ন কর্মসংস্থানমুখী পরিকল্পনা। দারিদ্র্য শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে গ্রহণ করা হবে বেশ কয়েকটি সামাজিক কর্মসূচী। অবকাঠামো উন্নয়নে দশ মেগা প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়িত হলে বেসরকারী খাতে বিনিয়োগ বাড়বে। দেশে উদ্যোক্তা শ্রেণী তৈরি হবে। সৃষ্টি হবে কর্মসংস্থানের নতুন নতুন ক্ষেত্র। দারিদ্র্য বিমোচন করে দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো বর্তমান সরকারের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ও অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত প্রকল্প। সেই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে এবারের ইশতেহারে শহরের চেয়ে গ্রাম-গঞ্জকে সবিশেষ প্রাধান্য দেয়া হবে। গ্রহণ করা হবে নানাবিধ আর্থ-সামাজিক কর্মসূচী ও প্রকল্প। গত অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি বেড়ে হয়েছে ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ। মাথাপিছু আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭৫১ মার্কিন ডলার, টাকার অঙ্কে ১ লাখ ৪৩ হাজার ৭৮৯ টাকা। দেশে দারিদ্র্য হার কমে দাঁড়িয়েছে ২১ দশমিক ৮ ভাগে। হতদরিদ্র মানুষের হার কমে দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক ৩ ভাগে। উল্লেখ্য, অর্থবছরের শুরুতে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৪ শতাংশ। শেষ পর্যন্ত তা বেড়ে হয়েছে ৮৬ শতাংশ। পরিকল্পনামন্ত্রীর মতে, যেভাবে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হচ্ছে, তাতে ২০৩০ সালের আগেই দারিদ্র্যের হার শূন্যের কোঠায় নেমে আসতে পারে। তার আগে বাংলাদেশের জাতীয় প্রবৃদ্ধি আটকে ছিল ৬ শতাংশের কমবেশি বৃত্তে। সে অবস্থায় জাতীয় প্রবৃদ্ধি অতিক্রম করেছে ৭-এর ঘর। অবশ্য এর কারণও আছে। এর মধ্যে বেড়েছে রফতানি আয় ও প্রবাসী বাংলাদেশীদের অর্থ প্রেরণের পরিমাণ। কৃষি খাত তো বরাবরই সাবলীল ও ফলপ্রসূ ভূমিকা রেখে চলেছে। সর্বোপরি বেড়েছে বিনিয়োগ। জাতীয় আয়ের হিসাবে বিনিয়োগের পরিমাণ ৩১ দশমিক ২৩ শতাংশ। বেসরকারী বিনিয়োগে আশাব্যঞ্জক অগ্রগতি না হলেও দেখা যাচ্ছে যে, সরকারী বিনিয়োগই প্রবৃদ্ধির চালিকাশক্তি। বর্তমান সরকারের জন্য এটি একটি উল্লেখযোগ্য অর্জন। অথচ কাজটি মোটেও সহজসাধ্য ছিল না, কুসুমাস্তীর্ণ তো নয়ই। ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট যখন ক্ষমতায় আসে, তখন দেশের অর্থনীতি ছিল প্রায় ভগ্নদশাপ্রাপ্ত। মানুষের আয় ছিল সীমিত অথচ দ্রব্যমূল্য ছিল আকাশচুম্বী। সেই অবস্থা থেকে জাতীয় অর্থনীতি ও সমৃদ্ধিকে টেনে তোলা বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর জন্য ছিল রীতিমতো একটি চ্যালেঞ্জ। বর্তমান সরকার অত্যন্ত সাফল্যের সঙ্গে সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে সমর্থ হয়েছে। অথচ বাস্তবতা হলো, এ সময় প্রায় সমগ্র বিশ্ব দু’দুটো মন্দাবস্থার সম্মুখীন হয়েছে। এর ফলে বিশ্বের অনেক দেশেই জাতীয় প্রবৃদ্ধি গেছে কমে। এমনকি অনেক দেশে লক্ষ্য করা গেছে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি। এ সত্ত্বেও বাংলাদেশের অর্থনীতিতে মন্দাবস্থার উত্তাপ প্রায় লাগেনি বললেই চলে। বরং শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও আশাব্যঞ্জক গতিতে এগিয়ে গেছে জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি। গত কয়েক বছর ধরে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়েছে। বেসরকারী খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি, রফতানি আয় ও রেমিটেন্স প্রবাহের ইতিবাচক ধারা অব্যাহত থাকলে চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রাক্কলিত জাতীয় প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৮৬ অতিক্রম করে ৮ শতাংশ অর্জন করা অসম্ভব কিছু নয়। সরকার অন্তত সেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে নিরন্তর কাজ করে চলেছে বলেই প্রতীয়মান হয়।
×