ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ওপেনারদের ঘুরে দাঁড়ানোর চ্যালেঞ্জ

প্রকাশিত: ০৬:৩৯, ৩০ নভেম্বর ২০১৮

ওপেনারদের ঘুরে দাঁড়ানোর চ্যালেঞ্জ

মোঃ মামুন রশীদ ॥ গত জুলাই থেকে এখন পর্যন্ত ৫ টেস্ট খেলেছে বাংলাদেশ দল। এর মধ্যে জয় এসেছে দুটি এবং বাকি তিনটিতে দেখতে হয়েছে হার। এই পরিসংখ্যানটা সার্বিকভাবে দলের পারফর্মেন্স ‘দারুণ’ তা বলাই যায়। তবে বাস্তবিক অবস্থা হচ্ছে ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতা দারুণ ভুগিয়েছে দলকে। সবচেয়ে বেশি দুশ্চিন্তার কারণ ছিল ওপেনারদের চরম ব্যর্থতা। সেই মাথাব্যথাটা আজ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে নামার আগেও বেশ ভালভাবেই থাকছে। গত তিন টেস্টে অন্যতম ওপেনার তামিম ইকবাল ইনজুরির কারণে অনুপস্থিত থাকায় ওপেনিং নিয়ে চিন্তাটা কমেনি একবিন্দুও। শেষ পর্যন্ত আনকোরা নতুন মুখ হিসেবে বাঁহাতি ওপেনার সাদমান ইসলাম অনিককে দলে টানা হয়েছে। ইনজুরিতে ইমরুল কায়েস দলে না থাকায় তার আজ অভিষেক একেবারে অবধারিত। ২৩ বছর বয়সী এ তরুণ কী পারবেন দলের উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানদের নিয়ে দলের দুশ্চিন্তা কমাতে? আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে একেবারেই নতুন মুখ হিসেবে এখন তার সঙ্গে আরেক ওপেনার সৌম্য সরকারের চ্যালেঞ্জ ভাল কিছু করার। সিরিজ জয় নিশ্চিতের ম্যাচে ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন ওপেনাররা? জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে ঘরের মাটিতে দুই টেস্টের সিরিজের শুরুতেই দুর্দশাগ্রস্ত বাংলাদেশ দলের চেহারা ফুটে ওঠে। গত জুলাইয়ে বাংলাদেশ দলের ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর ছিল বিভীষিকাময়। সেটার ধারাবাহিকতা জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে প্রথম টেস্টেও অব্যাহত থাকে। বাংলাদেশের বেহাল দশার সুযোগ নিয়ে ১৭ বছর পর বিদেশের মাটিতে টেস্ট জয়ের স্বাদ পায় তারা। অথচ ঘরের মাটিতে ক্রমেই অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছিল বাংলাদেশ দল। ২০১৬ সালে ইংল্যান্ড ও ২০১৭ সালে অস্ট্রেলিয়ার মতো দুই ক্রিকেট পরাশক্তির বিপক্ষে জয় তুলে নিয়েছিল। সেই দলটির ভরাডুবি ঘটে জিম্বাবুইয়ের মতো ক্রমান্বয় খর্বশক্তিতে পরিণত হওয়া দলের কাছে। এর পেছনে ছিল মারাত্মক ব্যাটিং বিপর্যয়। জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট পর্যন্ত বাংলাদেশ দলের সর্বশেষ ৪ টেস্টের ৮ ইনিংসে রান ছিল- ১১০ ও ১২৩, ৪৩ ও ১৪৪, ১৪৯ ও ১৬৮ এবং ১৪৩ ও ১৬৯। সব ব্যাটসম্যানই ছিলেন চরমভাবে ব্যর্থ। সেটা কাটিয়ে ওঠে দল জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে। ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকান মুশফিকুর রহীম এবং মুমিনুল হক ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ করেন শতক। তবে সেই ম্যাচেও ওপেনাররা ছিলেন ব্যর্থ। বোলাররা এই টেস্টগুলোয় দুর্দান্ত নৈপুণ্য দেখিয়েও সে কারণে দলের সাফল্য আনতে পারেননি। ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে এবার প্রথম টেস্টে বাংলাদেশ দল জিতলেও সার্বিকভাবে ব্যাটিংটা ভাল হয়নি। স্পিনারদের দুর্দান্ত নৈপুণ্য সাফল্য এনে দিয়েছে। এ সিরিজের প্রথম টেস্টে তামিমের ফেরার কথা থাকলেও নতুন করে ইনজুরিতে পড়ায় আর ফেরা হয়নি। লিটন দাসকে বাদ দেয়া হয় এবং দীর্ঘদিন পর ফিরিয়ে আনা হয় সৌম্যকে। কিন্তু ওপেনিংয়ের যে বেহাল দশা সেটা অব্যাহত থাকে। এবার দ্বিতীয় টেস্টে ইমরুলও বাদ পড়েছেন, তামিমেরও ফেরা হয়নি। ১-০ ব্যবধানে সিরিজে এগিয়ে থাকায় প্রথমবারের মতো ঘরের মাটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজ জয়ের মোক্ষম সুযোগ। এমন ভাল অবস্থানে থেকেও দলের মূল চিন্তা ওপেনারদের নিয়ে। সৌম্য আরেকটি সুযোগ পেয়েছেন। এ সিরিজে নামার আগে তার ঘরোয়া আসরে দুর্দান্ত নৈপুণ্যের সুবাদে সেই সুযোগ পাওয়া। তার সঙ্গী হিসেবে এবার প্রথমবার নামবেন ২৩ বছর বয়সী সাদমান। এবার প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে সর্বাধিক রান সংগ্রাহক ছিলেন তিনি। জাতীয় ক্রিকেট লীগে (এনসিএল) ১০ ম্যাচে করেছেন সর্বাধিক ৬৪৮ রান। তাছাড়া অনুর্ধ-১৯ দলের হয়ে খেলার সময়ও নজর কেড়েছিলেন তিনি। এবার দারুণ সুযোগ তার টেস্ট ক্রিকেটে নিজেকে মেলে ধরার। নিশ্চিতভাবেই আজ তার অভিষেক হতে যাচ্ছে। আর প্রথম ম্যাচেই থাকছে দীর্ঘ সময় ধরে ওপেনিংয়ে যে ধারাবাহিক ব্যর্থতা সেই অবস্থার পরিবর্তন করার চ্যালেঞ্জ। এশিয়া কাপে অবশ্য টানা এমন ব্যর্থতার কারণে শেষ ম্যাচে চমক দিয়েছিল বাংলাদেশ দল। হুট করেই ওপেনিংয়ে নেমেছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। সাদমানের সঙ্গে এবার এই টেস্টেও এমন কোন চমক উপহার দিতেই পারে বাংলাদেশ দল। সেক্ষেত্রে সৌম্য আরও পরেই ব্যাট করবেন, অথবা একাদশে হতে পারে বেশ পরিবর্তন। গত ৫ টেস্টে বাংলাদেশের ওপেনারদের সর্বমোট রান ছিল ১০ ইনিংসে মাত্র ২৯.১ গড়ে ২৯১ রান। এই ১০ ইনিংসে ওপেনারদের ব্যাট থেকে সর্বোচ্চ ৪৭ রানের ইনিংস এসেছিল তামিমের ব্যাট থেকে। কিংস্টনে দ্বিতীয় টেস্টে ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে তিনি ওই রান করেছিলেন গত জুলাইয়ে। এরপর গত টেস্টে ইমরুলের ব্যাট থেকে ৪৪, জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে প্রথম টেস্টে তারই ব্যাট থেকে ৪৩ এবং কিংস্টনে লিটনের ৩৩ ছাড়া আর কোন ত্রিশোর্ধ ইনিংস আসেনি ওপেনারদের কাছ থেকে। এতেই স্পষ্ট হয়ে যায় দলের ওপেনারদের পরিস্থিতি কতখানি নাজুক। এবার মিরপুর টেস্টে সেই ব্যর্থতার বৃত্ত ভেঙ্গে বের হওয়ার লড়াই ওপেনারদের। সেখানে নতুন মুখ সাদমানের সঙ্গে সৌম্য সঙ্গী। নিজেকে প্রমাণের দারুণ সুযোগ তরুণ সাদমানের আর দলে টিকে থাকার জন্য নিজের বাজে সময় কাটিয়ে ওঠার চ্যালেঞ্জ সৌম্যের। সেই চ্যালেঞ্জে তারা সফল হলে তা নিশ্চিতভাবেই দলের জন্যও বড় সুফল বয়ে আনবে।
×