ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

উচ্চশিক্ষায় বিদেশে

প্রকাশিত: ০৫:১৭, ২৯ আগস্ট ২০১৮

উচ্চশিক্ষায় বিদেশে

বাংলাদেশ থেকে বিদেশে পড়তে যাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ছে ক্রমশ। আন্তর্জাতিক সংস্থা ইউনেস্কোর ‘গ্লোবাল ফ্লো অব টারসিয়ারি লেভেল অব স্টুডেন্টস’ শীর্ষক প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০১৬ সালে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছে ৬০ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী। ২০১৫ সালে এই সংখ্যা ছিল ৩৩ হাজার ১৩৯। এক বছরের ব্যবধানে এই সংখ্যা বেড়েছে ৮২ শতাংশ। বিদেশগামী শিক্ষার্থীর হার বিশ্লেষণ করে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অভিজ্ঞরা বলছেন, ২০১৭ সালে এই সংখ্যা লক্ষাধিক হতে পারে। দেশে মানসম্মত উচ্চ শিক্ষার সুযোগ কম। ভর্তি জটিলতাসহ সেশনজটও আছে। তদুপরি সর্বাধুনিক শিক্ষা ও বৈশ্বিক সুবিধাপ্রাপ্তিও সীমিত। বাংলাদেশের অনেক উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ডিগ্রী এবং সনদও বিশ্বের অনেক উন্নত দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এবং চাকরি স্থলে গ্রহণযোগ্য নয়। ফলে মেধাবী ও সচ্ছল পরিবারের সন্তানরা স্বভাবতই উচ্চ শিক্ষার নিমিত্ত ছুটছেন বিদেশের নানা নামী-দামী বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে। এক্ষেত্রে এমনকি মালয়েশিয়া, নিউজিল্যান্ড, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, চীন এবং প্রতিবেশী দেশ ভারতকেও বেছে নিচ্ছে তারা। উচ্চ শিক্ষার নিমিত্ত বিদেশ গমনেচ্ছু শিক্ষার্থীদের নিরুৎসাহিত করা যাবে না কিছুতেই। যেহেতু দেশে উচ্চ শিক্ষার সুযোগ সীমিত। ব্যয়ও একেবারে কম নয়। দেশে ৪০টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন সংখ্যা ৫০ হাজারের বেশি নয়। অথচ কম-বেশি উচ্চ শিক্ষার স্বপ্ন দেখে থাকে ৮ লাখের বেশি শিক্ষার্থী। বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিক্যাল ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও তাদের এই স্বপ্ন পূরণের জন্য যথেষ্ট নয়। ফলে সঙ্গত কারণেই বহির্বিশ্বে পড়তে যেতে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ছে দিন দিন। গত বছর ৬০ হাজার শিক্ষার্থীর বিদেশে যাওয়ার মাধ্যমে ব্যয় বাবদ ৬ হাজার কোটি টাকাও চলে গেছে দেশের বাইরে। তাদের অধিকাংশ আবার দেশেও ফিরছে না। ফলে মেধা ও অর্থ পাচারÑ দুটোই হচ্ছে সমান তালে। অথচ দেশে উচ্চ শিক্ষার ভাল সুযোগ-সুবিধা এবং পরবর্তী জীবনে চাকরি অথবা ব্যবসার নিশ্চয়তা পেলে এত বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী নিশ্চয়ই পাড়ি জমাত না বিদেশে। এ বিষয়ে সরকারের নীতি-নির্ধারক মহল, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনসহ সংশ্লিষ্টদের সবিশেষ ভাববার আছে বৈকি। প্রসঙ্গটি উঠলেই একবাক্যে প্রায় সবাই শিক্ষার মান বাড়ানোর কথা বলে থাকেন। তবে এ নিয়ে নীতি-নির্ধারকদের আদৌ তেমন মাথাব্যথা আছে বলে মনে হয় না। প্রাথমিক শিক্ষা স্তরের নড়বড়ে ভিতের অনিবার্য প্রভাব পড়েছে উচ্চ শিক্ষা স্তরেও। দু’তিন বছর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী অনার্স ভর্তি পরীক্ষায় মোট আসন সংখ্যার বিপরীতে মাত্র দুজন শিক্ষার্থীর কোন রকমে উত্তীর্ণ হওয়ার খবর পাওয়া গিয়েছিল। একদা প্রাচ্যের অক্সফোর্ড বলে খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম বিশ্বের খ্যাতনামা হাজারটি বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায়ও খুঁজে পাওয়া যাবে না। বুয়েট, ঢামেকের তো প্রশ্নই ওঠে না। উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণাকে ঘিরে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার মানের ক্রমাবনতি ঘটছে ক্রমশ। কেন এমনটি হচ্ছে তা দেখারও কেউ নেই। শিক্ষা ও গষেণার ক্ষেত্রে সরকারী অনুদানের পরিমাণও নগণ্য। শিক্ষা খাতে বার্ষিক সরকারী বরাদ্দের অধিকাংশই চলে যায় শিক্ষকদের বেতন-ভাতা ও অবকাঠামো উন্নয়নে। শিক্ষাক্ষেত্রে নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষক ও গবেষকের সংখ্যাও খুব কম। প্রকৃত মেধাবীরা বৃত্তি নিয়ে চলে যান বাইরে। উচ্চবিত্তের ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া করে থাকে বিদেশে। সুতরাং দেশের অবনতিশীল শিক্ষা এবং তার মান নিয়ে কেউই মাথা ঘামাচ্ছেন নাÑ না সরকার, না সংশ্লিষ্টরা। এই অমানিশার অবসান কবে ঘটবে, কে জানে!
×