ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে সবজির ক্ষেত!

প্রকাশিত: ০৪:৩৫, ১২ জানুয়ারি ২০১৮

বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে সবজির ক্ষেত!

রুমেল খান ॥ বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে এক নামে প্রসিদ্ধ বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম। প্রথমে নাম ছিল ঢাকা স্টেডিয়াম। ১৯৫৪-৫৫ সালে ঢাকার গুলিস্তান এলাকায় স্টেডিয়ামটি নির্মিত হবার পর এখানে নৌকা বাইচ ও সাঁতার ছাড়া এমন কোন খেলা নেই যা অনুষ্ঠিত হয়নি। মেসি-জিদান-মোহাম্মদ আলী-কিম বো বে’র মতো রথী-মহারথীদের পদধূলি পড়েছে এই স্টেডিয়ামের ঘাসে। এখানে হয়েছে ২০১১ আইসিসি বিশ্বকাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানও। হয়েছে বিভিন্ন সময় কনসার্ট, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বিজয় দিবসের কুচকাওয়াজ। তবে ফুটবল খেলাটাই বেশি হয়েছে এখানে। স্কুল ফুটবল থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক ফুটবল... সবধরনের ফুটবলই। তবে স্টেডিয়ামের মাঠের ওপর অতিমাত্রায় অত্যাচার হয়েছে। কারণ নির্দিষ্ট সময়ের বিরতি না দিয়েই ঘন ঘন খেলার প্রভাবে মাঠের অবস্থা দিন দিন খারাপের দিকে গিয়েছে। শুধু তাই নয়, ঘোর বর্ষাকালেও এখানে প্রিমিয়ার লীগের খেলা হয়েছে। স্টেডিয়ামের পানি নিষ্কাষণের ব্যবস্থা উন্নত না হওয়ায় মাঠ যেন তখন হয়ে যায় ‘ধানক্ষেত। তবে মজার ব্যাপার হচ্ছেÑ বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের মাঠে আক্ষরিক অর্থেই ছোটখাট একটি ‘ক্ষেতে’র সন্ধান পাওয়া গেছে। সবজির ক্ষেত। লাউ, কুমড়া, বেগুন, মুলা, পুঁই শাক, পালং শাক, লাল শাক, সবুজ শাক... কি নেই এই ক্ষেতে। গত ২০ বছর ধরে এই সবজির বাগানটি ছিল লোকচক্ষুর অন্তরালে। পল্টন প্রান্তের গ্যালারিতে যে জায়ান্ট স্ক্রিন আছে সেই গ্যালারির নিচে এ্যাথলেটিক ট্র্যাকের পাশে যে সবুজ ফাঁকা জায়গা আছে সেখানেই গড়া হয়েছে চাঞ্চল্যকর এই ক্ষেত। সবার চোখকে ফাঁকি দিয়ে কিভাবে গড়া হলো এই ক্ষেত? এ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের বর্তমান প্রশাসক মোবারক করিম লিটন জনকণ্ঠকে জানান, ‘এই স্টেডিয়ামেরই এক মাঠকর্মী এটা করেছে। সে নাকি বহুবছর ধরেই এখানে লাউ-সবজি চাষ করে আসছে। বিষয়টি সম্প্রতিই জেনেছি। তারপরই আমি গত পরশু ওই কর্মীকে ডেকে কঠোরভাবে নির্দেশ দিয়েছি এগুলো যেন কেটে ফেলে। সে জানিয়েছে শীঘ্রই এগুলো কেটে ফেলবে।’ কোন স্টেডিয়ামেই এভাবে সবজি চাষ করার কোন নিয়ম নেই। তাহলে কিভাবে এটা এই ক্ষেতের জন্ম হলো? লিটন জানান, ‘আমি তো গত বছর তো প্রশাসক হিসেবে এসেছি। এই বছরই আমার চোখে পড়েছে এটা। দেখার সঙ্গে সঙ্গেই আমি পদক্ষেপ নিয়েছি। এটা করা মোটেও ঠিক না। আর স্টেডিয়ামে চাষাবাদ করার নিয়ম নাই। আমিও চাই মাঠটা পরিষ্কার থাকুক।’ এই সবজি চাষের মাধ্যমে কি ব্যবসা করা হয়? ‘না, আমি যতদূর জানি, ব্যবসা করে না। এগুলো করে সে নিজে খায়, মাঠকর্মীদের দেয়। আবার অনেককেই দেয়। তার কোন ব্যবসার উদ্দেশ্য নেই।’ এই সবজি ক্ষেতের স্রষ্টা কালাম ফকির। তার কাজ মাঠের ঘাস কাটা, পানি দেয়া। মাঠে চুন দেয়া। বরিশালে গ্রামের বাড়ি। ত্রিশোর্ধ এই মাঠকর্মীর সঙ্গেও কথা হয় জনকণ্ঠের। পুরো বিষয়টি তার কাছে উত্থাপন করা হলে অকপটেই স্বীকার করেন সব, ‘স্যার, আমি ১৯৯৭ সাল থেকেই এই স্টেডিয়ামের এক কোণায় সবজি চাষ করে আসছি। তখন স্টেডিয়ামের সবাই বলছে এটা ভাল একটা দিক। অনেক সুন্দর। কিছু ক্রীড়া সাংবাদিকও উৎসাহ দিতেন আমাকে। কেউ আমাকে মানা করেননি। বরং তারাও মাঝে মাঝে এই ক্ষেতের সবজি নিয়ে খেতেন। তবে আমি কখনই এগুলো বাজারে নিয়ে বিক্রি করিনি। বরং সবাইকেই এগুলো বিলিয়েছি। এগুলো আর অল্প কিছুদিন থাকবে। তারপরই শেষ। আর কখনই সবজি চাষ করব না।’ কেন করেছেন? এর জবাবে কালাম আরও জানান, ‘১৯৯৭ সাল থেকে চাকরি করে আসছি এখানে। আমি বুঝতে পেরেছি, এখানে ক্ষেত করা ঠিক হয়নি। তবে স্টেডিয়ামে যে ক্ষেত করার নিয়ম নেই সেটাই জানতাম না। স্যার (বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের বর্তমান প্রশাসক) আমাকে বলেছেন যে এগুলো কইরো না। এগুলো সব ওঠাই ফেল। সেটাই করব আমি। কিন্তু আগের স্যার (সাবেক প্রশাসক মোহাম্মদ ইয়াহিয়া) আমাকে খুব সমর্থন দিতেন। বলতেন এগুলো তো ভাল উদ্যোগ। ইয়াহিয়া স্যার আমার কাছ থেকে সবজি নিতেনও। আমি নিজের খরচেই সব চাষ করতাম। চাকরি করার পর থেকেই এখানে সবজি চাষ করে আসছি।’
×