ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

রিপোর্টারের ডায়রি

প্রকাশিত: ০৪:১১, ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭

রিপোর্টারের ডায়রি

জালিয়াতির চেষ্টা এটিএম কার্ডে ২৯ আগস্ট মঙ্গলবার। সকাল থেকেই মনটা বেশ খারাপ। দুপুর ২টার পর এটিএম বুথে গেছি টাকা তুলতে। বেশি প্রয়োজন হলে বাসার পাশে ডাচ্-বাংলা বুথ ব্যবহার করেই টাকা তুলি। ওইদিন বুথ থেকে ১৪ হাজার টাকা তুলে সোজা গেছি সিটি ব্যাংকে বাসা ভাড়া দিতে। যে বাসায় থাকি বাসার মালিক হাতে হাতে ঘর ভাড়া নেন না। ব্যাংকের মাধ্যমে বাসা ভাড়া দিতে হয়। প্রতি মাসে বাসা ভাড়া দেয়ার জন্য ব্যাংকে রসিদ ধরিয়ে দেন। ওইদিন টাকার তোলার পরে এটিএম বুথ থেকে কার্ড নিতে ভুলে গেছি। সিটি ব্যাংকে বাসা ভাড়া দিয়ে কেবলই বের হয়েছি। হঠাৎ করে অপরিচিত একটি নম্বর থেকে ফোন। বলল, ভাই আমি প্রাইম ব্যাংক হেড অফিস থেকে বলছিল। আমি শাহীন কিনা জানতে চাইল। আমি হ্যাঁ বলতে বলল আপনি কি এটিএম বুথ থেকে কোন টাকা তুলেছেন। আমি তাৎক্ষণিক জানালাম কিছুক্ষণ আগে ১৪ হাজার টাকা তুলেছি। বলল আর কোন টাকা তুলেছেন বা তোলার চেষ্টা করেছেন কিনা। বললাম এরপর আর কোন টাকা তোলার চেষ্টা করেনি। তখন জানতে চাইল আপনার এটিএম কার্ডটি এখন কোথায়? তার ফোনে সম্বিত ফিরে পেলাম। তখন পর্যন্ত জানতাম কার্ডটি মানিব্যাগেই রয়েছে। তবে মানিব্যাগ চেক করে দেখলাম কোন কার্ড নেই। বুঝলাম কোথাও হয়ত হারিয়ে ফেলেছি। অথবা এটিএম বুথে ফেলে এসেছি। তখন প্রাইম ব্যাংক থেকে জানানো হলো আপনার এটিএম কার্ডটি ডেল্টা হাসপাতালের সামনে ডাচ্-বাংলার এটিএম বুথে ফেলে এসেছেন। বুথের দারোয়ান আপনার কার্ডটি কয়েকবার পাঞ্চ করেছেন। কিন্তু সঠিক পিনকোড না জানায় টাকা তুলতে পারেনি। বিষয়টি প্রাইম ব্যাংকে রেকর্ড হয়ে গেছে। তিনি আরও বললেন, আপনার কার্ডের পিন নম্বর ইনএ্যাটিক্টভ করা হয়েছে। দারোয়ানের কাছ থেকে কার্ডটি নিয়ে পরে এ্যাক্টিভ করে নেবেন। ঈদের সামনে কার্ড সবচেয়ে বেশি জরুরী। যে কোন সময় ব্যবহার করে টাকা তোলা যায়। দ্রুত পায়ে হাঁটছি। বুথের সামনে গিয়ে দারোয়ানের খোঁজ করলাম। একজন বলল দুপুরের খাবার খেতে দারোয়ান বিএডিসির কোয়ার্টারের দিকে গেছে। আসতে দেরি হবে দেখে বাসায় ফিরে আসলাম। যেহেতু পিন নম্বর ইনএ্যাক্টিভ করা হয়েছে তাই কোন চিন্তা করলাম না। ভাবলাম পরে এসেই কার্ড নিয়ে নেব। অফিসে আসার তারাও রয়েছে। দুপুরের খাবার খেয়ে আবারও গেলাম কার্ডের খোঁজে। বুথে গিয়ে দেখি দারোয়ান ভেতরে শুয়ে আছে। বললাম আমার কার্ডটি কোথায়। বলল স্যার জমা দিয়েছি। কোথায় জমা দিয়েছ জানতে চাইলে সে বলল বুথের ভেতরে। কেন বললেই সে বলল প্রাইম ব্যাংক থেকে কার্ড জমা দিতে বলা হয়েছে। টাকা তোলার চেষ্টা কেন করছ জানতে চাইলে তার মুখটা শুকিয়ে গেল। বলল, স্যার আমি টাকা তোলার কোন চেষ্টা করেনি। কার্ড জমা দিয়েছি মাত্র। বললাম তুমি তিনবার টাকা তোলার চেষ্টা করছে। মিথ্যা বলবা না। কার্ডটি কেন বুথে ভেতরে ঢুকালে বল। বার বার একই কথা। বললাম সব রেকর্ড রয়েছে মিথ্যা বলবা না। সাবধান করে চলে এলাম। এবার সরাসরি প্রাইম ব্যাংকের হেড অফিসে ফোন দিলাম। জানতে চাইলাম দারোয়ানকে বুথে কার্ড জমা দিতে বলছেন কিনা। প্রাইম ব্যাংক থেকে আবার আমার এ্যাকাউন্ট নম্বর জানতে চাইল। বলল আগে আপনাকে যে ফোন দিয়েছিল সে এখন নেই। নতুন শিফটে আমি এই মাত্র ডিটিতে এসেছি। তবে আপনার বিষয়টি শুনেছি। বললাম দারোয়ানকে আপনারা কার্ড জমা দিতে বলেছেন কিনা? সে জানাল আপনার কার্ডটি ইনভ্যালিড করে দেয়ার পরও দারোয়ানটি বুথে টাকা তোলার চেষ্টা করেছে। কিন্তু পর পর তিনবার ভুল পিন কোড দেয়ায় এটিএম বুথ কার্ডটি ক্যাচ করে নিয়েছে। বললাম দু’দিন পরে ঈদ। এখন কি হবে। কিভাবে টাকা তুলব। একদিনের মধ্যে কার্ড ফেরত দেয়ার কথা বললাম। তারা জানাল ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের বুথে অন্য ব্যাংকের কার্ড আটকে গেলে ওর ফেরত দিতে চাই না। আপনার পক্ষে ভাল হবে আপনার যে ব্যাংকে এ্যাকাউন্ট নম্বর রয়েছে সেই ব্যাংক থেকে নতুন কার্ড তুলে নেন। এই মুহূর্তে আপনার জন্য কিছু করার নেই। শাহীন রহমান [email protected] মেক্সিকানরা ইংরেজী না বাংলা বোঝেন ২৪ মে, বুধবার। আমরা এরোম্যাক্সিকান এয়ারের নির্ধারিত বিমানে গিয়ে বসলাম। বিশাল আকৃতির বিমান। প্রায় সাড়ে আটশ’ যাত্রী বহনের ব্যবস্থা রয়েছে। আমার আসনটি জানালার কাছে। বিমানে বসার পর আমার ভ্রমণ সঙ্গী যুগ্ম-সচিব অর্ধেন্দুদা বললেন, দীর্ঘ যাত্রায় এবার ‘ছ্যাচা’ ঘুম দেবো। কথাটা বলেই তিনি বললেন, আমাদের নেত্রকোনায় টানা দীর্ঘ ঘুমকে ছ্যাচা ঘুম বলে। স্থানীয় সময় দুপুর ২টা ২৫ মিনিটে আমাদের বহনকারী বিমানটি জাপানের মাটি ছেড়ে আকাশে উড়ল। মাত্র কয়েক মিনিটেই বিমানটি প্রশান্ত মহাসাগরের তীরে চলে এলো। বিমানটি তখনও বেশি উঁচুতে ওঠেনি। জানালার পাশে বসে নিচের দিকে তাকিয়ে প্রশান্ত মহাসাগরের তীর দেখছি। পানি এতটাই স্বচ্ছ যে নীল জলরাশি ভেদ করে আমার দৃষ্টি মাটিতে গিয়ে ঠেকছে। প্রায় ১০/১৫ মিনিট মহাসাগরের তীর ঘেঁষে জাপানের উপকূল দিয়ে আমরা উত্তর দিকে যাচ্ছি। প্লেনটি ক্রমাগত উপরে উঠছে। কিছুক্ষণ পরে জাপান দৃষ্টিসীমার বাইরে চলে গেলাম। ততক্ষণে আমাদের বহনকারী প্লেনটিও তার গতিপথ বদল করে সোজা মহাসাগর পাড়ি দিতে শুরু করল। আমি প্লেনের অবস্থান দেখতে শুরু করলাম। দেখি মহাসাগরের বুকে ঢুকে পড়েছি। ছাত্র জীবনে পড়েছি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মহাসাগর হলো প্রশান্ত। আজ তার ওপর দিয়ে চলেছি। ভাবতে শরীর শিউরিয়ে উঠল। এমন সময় লান্স চলে এলো। দু’জনে লান্স সারলাম। দাদা বললেন, এবার ঘুমের পালা। সত্যিই তিনি ঘুমাতে শুরু করলেন। প্রায় সাড়ে ১৩ ঘণ্টার জার্নি। আমি প্লেনটির ভৌগোলিক অবস্থান দেখতে লাগলাম। আমাদের বহনকারী এই প্লেনটি ঘণ্টায় ৯৭৮ থেকে ৯৯৭ কিলোমিটার গতিতে চলছে। জানালা দিয়ে নিচে বিশাল জলরাশি দেখার চেষ্টা করলাম। কিন্তু পারলাম না। নিচে তাকাতেই দেখি কয়েক স্তর মেঘের ওপর দিয়ে যাচ্ছি আমরা। এভাবে চলার মধ্যে কখন যে ঘুমিয়ে পড়লাম বুঝতে পারিনি। হঠাৎ ঘুম ভাঙল। মনে হলো বিশাল সার্চলাইট। কিছুই বুঝতে পারলাম না। কিছুক্ষণ পরে আবারও অন্ধকার নেমে এলো। পরে অবশ্য কানকুন গিয়ে এক কর্মকর্তা বললেন ওটা ছিল আল্পাস এলাকার সূর্য। সেখানে বছরের কয়েকমাস সূর্যাস্ত যায় না। তাই রাতে আকাশে সূর্য সার্চ লাইটের মতো মনে হলো। লাইট দেখে অর্ধেন্দু দার দিকে তাকালাম। তাকে ডাকব বলে ভাবলাম। কিন্তু গভীর ঘুম দেখে ডাকার স্পর্ধা দেখালাম না। ৬/৭ ঘণ্টার জার্নির পর দেখলাম আমরা প্রশান্ত মহাসাগরের মধ্যে হনুলুলু দ্বীপের ওপর দিয়ে যাচ্ছি। এভাবে টানা সাড়ে ১২ ঘণ্টা ধরে আমরা আড়াআড়িভাবে প্রশান্ত মহাসাগর পাড়ি দিলাম। পুরো রাতটা কেটে গেল। আর অর্ধেন্দুদা তখনও ঘুমাচ্ছেন। আমিও না ডেকে তার ছ্যাচা ঘুম দেখছি। এবার আমরা মেক্সির উপকূল দিয়ে দক্ষিণ দিকে চললাম। কিছুক্ষণ পর মেক্সিকো সিটির কাছাকাছি চলে এলাম। ব্রেকফাস্টও দিল। ব্রেকফাস্ট সেরে দেখি আমরা মেক্সিকো সিটির কাছাকাছি এসে পড়েছি। স্থানীয় সময় দুপুর ১টায় মেক্সিকো সিটিতে ল্যান্ড করলাম। প্লেনটি ল্যান্ড করার পর অর্ধেন্দুদা বললেন, অবশেষে আমরা মেক্সিকো আসলাম। কানকুনের আন্তর্জাতিক সম্মেলন শেষে তিনি আমেরিকায় যাবেন। আমেরিকা হয়ে দেশে ফিরবেন। বিমান থেকে নেমে চললাম ইমিগ্রেশন করতে। খুব সহজে ইমিগ্রেশন শেষ করলাম। এবার লাগেজ নিয়ে ডোমেস্টিকে দিতে গিয়ে পড়লাম বিপাকে। যদিও আমার শুধু হ্যান্ড লাগেজ। কিন্তু এক সঙ্গে থাকায় আমিও দাদার সঙ্গে গেলাম। বেল্টে লাগেজ দিতে গেলে দুই পুলিশ আমাদের পাসপোর্ট চাইল। পাসপোর্ট দিতেই আমাকে বলল, স্প্যানিশ। আমি বুঝে নিলাম সে আমাকে স্প্যানিশ ভাষায় কথা বলতে বলছে। আমি বললাম নো, ইংলিশ। সে আবারও বলল, স্প্যানিশ। আমি আবারও টেনে বললাম নো-, ইংলিশ। সে আবারও বলল, স্প্যানিশ। এবার আমি বলাম, নো অনলি ইংলিশ। এবার সে বলে, হট বিসনেস? তাকে আমার পেশা বুঝানোর জন্য বললাম ‘আই এ্যাম এ জার্নালিস্ট’। সে কিছু বুঝল না। আমার ভিজিটিং কার্ড দেখালাম। কিন্তু কিছুই বুঝল না। এর পর তাকে আমাদের জিও (সরকারী আদেশ) দেখালাম। এতেও বিফল। দু’জনে বিভিন্নভাবে বুঝানোর চেষ্টা বিফল হলো। কি আর করা। এবার আমি বললাম দাদা ওকে বাংলা বলে বুঝাতে হবে। তখন পাসপোর্টে মেক্সিকান ইমিগ্রেশনের সিল আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে বললাম, ‘ওরে বলদ, ইংরেজী জান না, এয়ার পোর্টে ডিউটি কর। এই দেখ তোমার বাপ সিল মেরে দিয়েছে। আঙ্গুল দিলে বার বার দেখানোর ফলে কি বুঝল জানি না। তবে দু’জনে কি আলাপ করে আমাদের যাওয়ার অনুমতি দিল। -তপন বিশ্বাস
×