ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পেঁয়াজের ঝাঁজ কমান

প্রকাশিত: ০৬:০৬, ১৪ আগস্ট ২০১৭

পেঁয়াজের ঝাঁজ কমান

পেঁয়াজের দাম বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। গত দু’সপ্তাহে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম হয়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। ভারতীয় পেঁয়াজ ৫০-৬০, দেশী পেঁয়াজ ৬০-৭০ টাকা কেজি। চাল-চিনি-লবণের পর এবার পেঁয়াজ। কেননা, সামনেই ঈদ-উল-আযহা, কোরবানির ঈদ। এই ঈদে বিশেষ করে পেঁয়াজ, রসুন, আদা ও গরম মসলার চাহিদা বেড়ে যায় বহুগুণ। সুতরাং ব্যবসায়ীগোষ্ঠী তথা সিন্ডিকেট সুযোগ হাতছাড়া করবেন কেন? বেশ কিছুদিন আগে থেকে অতিবৃষ্টি, পাহাড়ী ঢল ও বন্যার অজুহাতে দফায় দফায় বাড়ানো হয়েছে চালের দাম। এর পাশাপাশি চিনি, লবণ, ছোলা, ডাল, ভোজ্যতেল ও গুঁড়া দুধ তো ছিলই। এবারও প্রায় একই অজুহাতে বাড়ানো হচ্ছে পেঁয়াজের দাম। লাজলজ্জার মাথা খেয়ে বলছেন, দেশেও বন্যা, ভারতেও বন্যা। সুতরাং আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় পেঁয়াজের দাম না বাড়িয়ে উপায় কি? দেশে প্রতিবছর পেঁয়াজের চাহিদা কম-বেশি ২৪ লাখ টন। উৎপাদন হয় ১৮ লাখ টন। অতিরিক্ত চাহিদা মেটাতে হয় প্রধানত ভারত এবং আংশিক মিয়ানমার থেকে আমদানি করে। জরুরী পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার তথা টিসিবি পেঁয়াজ আমদানি করছে মিসর থেকে। তবে বাস্তবতা হলো ব্যবসায়ী মহল যদি আন্তরিক হয় এবং সদিচ্ছা পোষণ করে তাহলে আপাতত অভ্যন্তরীণ মজুদ ছেড়ে দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে পারেন। অপ্রিয় হলেও সত্য যে, দেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে সেই সততা ও নীতি-নৈতিকতার যথেষ্ট অভাব রয়েছে। ইতোপূর্বে তারা বন্যার্ত ও দুর্গতদের ন্যায্যমূল্যে চাল বিক্রির পরাকাষ্ঠা দেখায়নি। সুতরাং পেঁয়াজ নিয়ে তা দেখাবে তা ভাবাও বাতুলতা। তবু ক্ষীণ হলেও আশা পোষণ করতে দোষ কী? আন্তর্জাতিক বাজারে চাল, গম, ভোজ্যতেল, চিনি, ডাল, গুঁড়া দুধ, ছোলা, লবণ ইত্যাদির দাম কমলেও দেশে বাড়ছে এসব নিত্যপণ্যের দাম। এর একটি আপাত কারণ হতে পারে অতিবর্ষণ ও ঈদ-উল-আযহা। এ নিয়ে নানা কারসাজি ব্যবসায়ীরা করে থাকে প্রতিবছরই। প্রভাব পড়েছে শাক-সবজির বাজারেও। তবে সর্বাধিক উল্লম্ফন পরিলক্ষিত হচ্ছে গরু ও খাসির মাংসের দামে। গাবতলীসহ গরুর হাট এবং সীমান্তে গরু চোরাচালান নিয়ে প্রবল টানাপোড়েন চলতে থাকায় মাংসের বাজার বেশ চড়া। জনগণের পক্ষ থেকে দাবি উঠেছে, প্রয়োজনে বিদেশ থেকে মাংস আমদানি করা হোক। মাংসের দামের অনিবার্য প্রভাব পড়েছে মাছ, ডিম ও দুধের বাজারেও। অথচ বাস্তবতা হলো আন্তর্জাতিক বাজারে, এমনকি প্রতিবেশী দেশেও ভোগ্যপণ্যের দাম বর্তমানে নিম্নমুখী। এ থেকে যা বোধগম্য তা হলো, বন্যা ও ঈদকে সামনে রেখে প্রায় অবাধে সুযোগ নিচ্ছে ভোগ্যপণ্য আমদানিকারকসহ পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা। আর জনগণ বহুল উচ্চারিত এই সিন্ডিকেটের সামনে অনেকটা অসহায়, বলা যায় এক ধরনের জিম্মি হয়ে পড়েছে। অথচ বিদেশে উৎসব, পালা-পার্বণ উপলক্ষে ব্যাপক ছাড় দেয়া হয় ভোগ্যপণ্যে। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির নানা কারণের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে দুর্বল বাজার মনিটরিং, অসাধু আমদানিকারক, উৎপাদক, পরিবেশক, সরবরাহকারী, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ী, অকার্যকর টিসিবি, সর্বোপরি ট্যারিফ কমিশন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রাজস্ব বোর্ডের মধ্যে আদৌ কোন সমন্বয় না থাকা। যে কারণে ভোক্তা ও ক্রেতাস্বার্থ অধিকার এবং সংরক্ষণ বরাবরই উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে। সিন্ডিকেট তথা মুুষ্টিমেয় ব্যবসায়ী চক্রের বাজার একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ ও মুনাফা লুটে নেয়ার কথা প্রায়ই উচ্চারিত হয়। এফবিসিসিআই, ঢাকা চেম্বার, মেট্রো চেম্বারসহ ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো খুবই শক্তিশালী এবং সরকারের ওপর তাদের প্রভাব-প্রতিপত্তিও অস্বীকার করা যায় না। জাতীয় সংসদেও ব্যবসায়ীরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। ফলে ভোক্তা ও ক্রেতাস্বার্থ একরকম উপেক্ষিত ও অনালোচিত থাকছে। ব্যবসা-বাণিজ্যে লাভ-ক্ষতি ইত্যাদি থাকবেই। তবে এসবই হতে হবে নীতি-নৈতিকতা, সততা ও নিয়মকানুনের আওতায়, যে ক্ষেত্রে আমাদের ঘাটতি রয়েছে বহুলাংশে। সরকার তথা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে এক্ষেত্রে কঠোর মনোভাব নিয়ে অগ্রসর হতে হবে বাজার মনিটরিং ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে।
×