ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রয়োজন সহানুভূতি

প্রকাশিত: ০৪:২১, ২৯ জুলাই ২০১৭

প্রয়োজন সহানুভূতি

বলা হয়ে থাকে যে, বৃদ্ধ আর শিশু সমান। অর্থাৎ একটা শিশু যেমন অনেক বিষয়ই বোঝে না, তেমনি বার্ধক্যে উপনীত হলেও মানুষের স্বাভাবিক বোধ ক্ষমতা হ্রাস পায়। আর সে বার্ধক্য যদি হয় সঙ্গীহীন, ভীষণ একাকীত্ব তাকে পেয়ে বসে। তখন স্বাভাবিকভাবেই কাছের মানুষগুলোর ভালবাসা, সহানুভূতি পাওয়ার জন্য মনটা ব্যাকুল হয়ে ওঠে। একটি শিশু যেমন চায় বাবা অফিস থেকে এসে তার সঙ্গেই আগে কথা বলুক, তাকেই আগে কোলে তুলে নিয়ে চুমু খাক, তেমনি বার্ধক্যে ্উপনীত মা-বাবা কিংবা দাদা-দাদিও চান যে, তাদের সন্তানরা, নাতি-নাতনিরা তাকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিক। এটা মনের একটা স্বাভাবিক আকুতি। অথচ আমরা অনেকেই এ আকুতিটাকে অগ্রাহ্য করে পাশ কাটিয়ে যাই। এ আকুতিটা বুঝি না বলেই তাদের তেমন তোয়াক্কা করি না। তাদের পরামর্শ গ্রহণ করার পরিবর্তে অগ্রাহ্যই বেশি করি। আর যখন তিনি বুঝতে পারেন যে, আমরা তার কথাকে অগ্রাহ্য করছি, সেক্ষেত্রে বার বার একই কথার পুনরাবৃত্তি করতে থাকেন। এক্ষেত্রে আমরা যদি ধৈর্য ধারণা না করি এবং তাকে আশ্বস্ত না করি যে, তার পরামর্শ বিবেচনা করা হবে, তখন তিনি প্রচ- কষ্ট পান। সুতরাং আমাদের বৃদ্ধ মা-বাবা কিংবা দাদি-দাদি যারাই রয়েছেন, প্রত্যেকের মানসিক অবস্থাটা বিবেচনা করা অনেক জরুরী। হয়ত আমরা অনেক কষ্ট করছি কিংবা অনেক টেনশনে আছি। এর মধ্যে তার কথা শুনতে ভাল লাগছে না। কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে, আমরাও একদিন ছোট ছিলাম। তখন আমরা এরচেয়ে অনেক বেশি অযাচিত কথা বলে, প্রশ্ন করে তাদের বিব্রত করেছি। অনেক অন্যায় আবদার করে সেটা আদায় করে নিয়েছি। সুতরাং চলুন, আজ থেকে আমরা আর এ মানুষগুলোকে বোঝা মনে করব না। তাদের হৃদয়ের স্পন্দনটা কান পেতে শুনুন। অনুভব করার চেষ্টা করুন, যিনি সারাজীবন সংসারের সবাইকে দিয়ে দিয়ে আজ নিঃস্ব হয়ে গেছেন, তাকে আমরা কতটুকু দিতে পেরেছি। সংসারের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে পরামর্শ করুন। তাদের নিয়ে বেড়াতে যান। উপহার প্রদান করুন। তাদেরকে বোঝানোর চেষ্টা করুন যে, তারা অসহায় নয়, তারা নিঃসঙ্গ নন। আর সরকারের কাছে নিবেদন থাকবে, সকল বয়স্কদের জন্য বয়স্ক ভাতা চালু করা হোক। এটা কি করে হতে পারে যে, একটা মানুষ যৌবনে রাষ্ট্রকে এত কিছু দিয়ে এসেছে, অথচ সে যখন অক্ষম হয়ে গেছে তখন রাষ্ট্র তাকে অসহায়ভাবে ছেড়ে দেবে? আসুন আজ থেকে প্রতীজ্ঞা করি, আর কোন বৃদ্ধকে যেন বৃদ্ধাশ্রমে যেতে না হয়। মমতাজ বেগমের মতো আর কোন নিঃসঙ্গ বার্ধক্য যেন গোয়ালঘরে শিয়াল কুকুরের সঙ্গে রাত না কাটায়। তামিমা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
×