ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সাবেক তারকা ফুটবলার মনুর পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ২৭ জুলাই ২০১৭

সাবেক তারকা ফুটবলার মনুর পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান

রুমেল খান ॥ দেশের ফুটবলের জীর্ণশীর্ণ অবস্থা। কারুর মতে-মুমূর্ষু অবস্থা। পতনের সামনে দাঁড়িয়ে দেশের ফুটবল। আর মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে লড়াই করছেন মনির হোসেন মনুও। আজকের প্রজন্ম তাকে চেনে না। কিন্তু যারা তাকে চেনে তারা জানে মনু আসলে কে, কি এবং কেমন ফুটবলার ছিলেন আশির দশকে। সেই মনু এখন খুবই অসুস্থ। লিভারের কঠিন রোগে আক্রান্ত তিনি। গত সাত মাসে ১৬ কেজি ওজন কমেছে তার। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন ১৪ দিন। বুধবার ডাক্তাররা তাকে রিলিজ দিয়ে দিলে মনু চলে যান ঢাকার মুগদাপাড়ায় নিজের বাসায়। জানা গেছে, ডা. গোলাম মোস্তফার অধীনে চিকিৎসাধীন মনু। আগামী সোমবার একটি টেস্ট করা হবে তার। রিপোর্ট পাওয়ার পর মনুর লিভারের সমস্যাটা ধরা পড়লে সে অনুযায়ী চিকিৎসা দেয়া হবে। সেক্ষেত্রে এখনও শঙ্কামুক্ত না থাকায় মনুকে হয়তো আবারও হাসপাতালে গিয়ে ভর্তি হতে হবে। মনু এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘ডাক্তাররা বলেছেন, আমার লিভারে এক ধরনের ভাইরাস ধরা পড়েছে। জ-িস থেকেও এটা হতে পারে। সুস্থতার জন্য সবার কাছে দোয়া চাই।’ আশি দশকে দেশের ক্লাব ফুটবলে যে কজন তারকা ফুটবলার ছিলেন, তাদের একজন এই মনু। মোহামেডানের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে বল পায়ে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন ঢাকার ফুটবলে। খেলতেন রাইট উইঙ্গার পজিশনে। যদিও ক্যারিয়ারের শুরুতে ছিলেন স্ট্রাইকার। কিন্তু শৈশবের প্রিয় ও স্বপ্নের ক্লাব মোহামেডানে খেলার জন্য প্লেয়িং পজিশনই বদলে ফেলেন তিনি। ১৯৮৩-৮৫ টানা তিন বছর মোহামেডান লীগ জিততে পারেনি। ঠিক তখনই ১৯৮৬ সালে ১২ নম্বর জার্সিধারী মনুর কল্যাণেই শিরোপা পুনরুদ্ধার করে সাদা-কালোরা। লীগের শেষ ম্যাচে ড্র করলেই আবাহনী চ্যাম্পিয়ন হয়ে যাবে, আর মোহামেডানকে চ্যাম্পিয়ন হতে হলে জিততেই হবেÑ এমন সমীকরণের কঠিন ম্যাচে মোহামেডান ২-০ গোলে আবাহনীকে হারিয়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। গোল করেছিলেন মনু ও ইলিয়াছ (ইলিয়াসের গোলের জোগান দেন মনুই)। সেই জয়ের পর মনুকে মাথায় তুলে নেচেছিলেন মোহামেডান সমর্থকরা। সবার ভালবাসায় সিক্ত হন মনু। আর এই ভালবাসার টানেই সেবার অর্থলোভে মোহামেডান ছেড়ে যাননি মনু। এমনই ছিল তার ক্লাবপ্রেম। ১৯৮৭ সালে প্রেসিডেন্ট গোল্ডকাপ আন্তর্জাতিক ফুটবল প্রতিযোগিতায় চীনের গোয়াংডং ক্লাবের বিপক্ষে বাংলাদেশ সাদা দলের হয়ে তার আছে আরও একটি দুর্দান্ত গোল। ডি-বক্সের বাইরে থেকে তার নেয়া শটটি হঠাৎ বাঁক খেয়ে হতভম্ব করে দিয়েছিল চীনের গোলরক্ষককে। ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত মোহামেডানে খেলেন (যোগ দেন ১৯৮৪ সালে)। ১৯৮৮ সালে চলে যান ইয়ংমেন্স ফকিরেরপুল ক্লাবে। ইনজুরির কারণেই দীর্ঘায়িত হতে পারেনি তার ফুটবল ক্যারিয়ার। মালিবাগ অভিযাত্রী, আরামবাগ, বিআরটিসি, সিলেট ও ঢাকা জেলার হয়ে খেলেছেন ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে। খেলোয়াড়ী জীবনে মাঠে তীব্র শূটিং পাওয়ার ছিল মনুর। করতেন চমৎকার সব মাইনাসও। ১৯৮৫ সালে প্রথম সুযোগ পান জাতীয় দলে। সেবার সাফ গেমসে দলে থাকলেও কোন ম্যাচ তাকে খেলাননি কোচ সালাউদ্দিন। মনুর জীবনের স্মরণীয় ঘটনাগুলোর একটি হচ্ছে বর্তমান বাফুফে সভাপতি কাজী মোঃ সালাউদ্দিন মনুর খেলা দেখে মুগ্ধ হয়ে তাকে বলেছিলেন, ‘তোকে আমি দ্বিতীয় সালাউদ্দিন বানাব।’ ওই সময় খেলা ছেড়ে সালাউদ্দিন আবাহনীর কোচ। এছাড়াও সতীর্থ বাদল রায় এবং আব্দুস সালাম মুর্শেদী মনুকে সেই সময় বলেছিলেন, ‘তুই যদি মোহামেডান ছাড়িস তাহলে আমাদের লাশের ওপর দিয়ে যেতে হবে।’ তাদের কথায় টাকার কথা না ভেবেই মনু রয়ে যান মোহামেডানে। সেই মনু আজ অর্থের অভাবে ঠিকমতো চিকিৎসা করাতে পারছেন না। সারাজীবন শুধু কষ্টই করে গেলেন। শৈশবেই দেখেছেন দারিদ্র্য। এ জন্য পড়াশোনাটাও বেশিদূর করতে পারেননি। আরামবাগে ‘কাশেমের দোকান’ বলে একটা খাবারের দোকানে অর্থের জন্য কাজও করেছেন। যাদের ভালবাসায় সিক্ত হয়ে জীবনের সেরা সময়টা পার করে এসেছেন ৫৫ বছর বয়সী মনু, সেই তারাই খোঁজ নেয়ার সময় পান না একসময় প্রচ- গতির কারণে ‘হরিণ’ ও ‘চিতাবাঘ’ খ্যাত মনুর। তবু মনু সেই ভালবাসার টানে বেঁচে থাকতে চান, ‘সমর্থকদের যে ভালবাসা আমার বুকে ধারণ করে আছি সে ভালবাসা আমি মরে গেলেও বিক্রি করতে পারব না। যে কদিন বাঁচি, সেই ভালবাসা নিয়েই বাঁচতে চাই।’
×