ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

র‌্যাঙ্কিংয়ে সাতে নেমে গেলেও শঙ্কামুক্ত বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৭:০৪, ২০ জুন ২০১৭

র‌্যাঙ্কিংয়ে সাতে নেমে গেলেও শঙ্কামুক্ত বাংলাদেশ

মোঃ মামুন রশীদ ॥ এবার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে অবিস্মরণীয় খেলা উপহার দিয়েছে পাকিস্তান ক্রিকেট দল। আইসিসি র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ আটটি দল নিয়ে এ মর্যাদার টুর্নামেন্ট আয়োজিত হয়। পাকরা সেই তালিকায় সবার নিচে ছিল, কিন্তু তারাই শিরোপা জিতে সবাইকে চমকে দিয়েছে। একই সঙ্গে আইসিসি র‌্যাঙ্কিংয়েও দুই ধাপ এগিয়েছে। সম্প্রতিই ৬ নম্বরে ওঠার বাংলাদেশ দলকে হটিয়ে তারা দখল করেছে জায়গাটি। ২০১৯ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপে সরাসরি খেলার জন্য এ বছর ৩০ সেপ্টেম্বর সর্বশেষ ঘোষিত আইসিসি র‌্যাঙ্কিংয়ের সেরা আটে থাকতে হবে। এখন ৭ নম্বরে নেমে যাওয়ায় তাই কিছুটা শঙ্কায় পড়েছে বাংলাদেশ দল। অথচ দলটি প্রথমবার কোন আইসিসি ইভেন্টের সেমিফাইনাল খেলার মাধ্যমে নিজেদের সেরা সাফল্য পেয়েছে। আটে থাকা শ্রীলঙ্কা রেটিংয়ে একেবারে ঘাড়ের ওপর নিঃশ্বাস ফেলছে। ৯ নম্বরে থাকা ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলতে পারেনি। বিশ্বকাপ খেলার জন্য অন্তত সেরা আটে থাকতে হবে তাদের, কিন্তু কোনভাবে আটে নামলেও ৯ নম্বরে নামার তেমন কোন সম্ভাবনা আপাতত নেই বাংলাদেশের। কারণ রেটিংয়ের বিস্তর ব্যবধান ক্যারিবীয়দের সঙ্গে বাংলাদেশ দলের। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আগেই বাংলাদেশ দল উঠে আসে ৬ নম্বরে। প্রথমবারের মতো এত উঁচুতে উঠতে সক্ষম হয় টাইগাররা। কিন্তু সেটা ধরে রাখাটা অনেক কঠিন হয়ে যাবে তা প্রায় নিশ্চিতই ছিল। কারণ, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বাংলাদেশের গ্রুপে গত বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া, রানার্সআপ নিউজিল্যান্ড এবং দুর্দান্ত ফর্মে থাকা স্বাগতিক ইংল্যান্ড ছিল। কাগজ-কলমের হিসেবে একটি ম্যাচও জেতার কথা নয় বাংলাদেশ দলের। সে অনুসারে আগেই অনুমিত ছিল যে আবার ৭ নম্বরে কিংবা এরচেয়েও নিচে চলে আসতে পারে র‌্যাঙ্কিং। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আগে ত্রিদেশীয় সিরিজে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে দেয়ার কারণে একটি আত্মবিশ্বাস ছিল। আর ওই জয়টাই বাংলাদেশকে র‌্যাঙ্কিংয়ে ছয়ে তুলেছিল। আত্মবিশ্বাসটা পুঁজি করে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে যেকোন একটি ম্যাচ জিতে নিজেদের ৬ নম্বর অবস্থানটাকে সুদৃঢ় করার প্রত্যাশায় ছিল বাংলাদেশ দল। সেটা ঠিকই হয়েছে। আবারও নিউজিল্যান্ডকে অবিশ্বাস্যভাবে এক অবিস্মরণীয় ঘটনার জন্ম দিয়ে জয় ছিনিয়ে নেয় টাইগাররা। কিন্তু সেমিফাইনালে ভারতের কাছে হেরে যায়। অপরদিকে, র‌্যাঙ্কিংয়ের সাতে থাকা শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তান দুর্দান্ত খেলতে থাকে। গ্রুপ পর্বেই বাংলাদেশকে একবার হটিয়ে ছয়ে উঠে এসেছিল লঙ্কানরা। তবে আবারও নেমে গেছে তারা, পতন হয়েছে আট নম্বরে। কিন্তু পাকরা থামেনি। একের পর এক জয় তুলে নিয়ে শেষ পর্যন্ত চ্যাম্পিয়নই হয়েছে। রেটিং কম-বেশি হওয়ার বিষয়টা হচ্ছে এ রকম- র‌্যাঙ্কিংয়ের নিচে থাকা দলের বিপক্ষে জিতলে ১ রেটিং বা তারচেয়ে সামান্য বেশি যোগ এবং হারলে ২ রেটিং বিয়োগ হয়। র‌্যাঙ্কিংয়ের ওপরে থাকা দলের বিপক্ষে জিতলে ২ বা তার সামান্য বেশি রেটিং যোগ এবং হারলে ১ রেটিং বিয়োগ হয়। র‌্যাঙ্কিংয়ে সবার নিচে থাকাতে তাই দারুণ সুবিধা হয়েছে পাকদের। একটি করে ম্যাচ জিতেছে আর রেটিং বেড়েছে ২ করে। এবার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে তাদের রেটিং যোগ হয়েছে ৭। আর সে কারণেই তাদের এত উর্ধগতি র‌্যাঙ্কিংয়ে। বাংলাদেশ দল দুই ম্যাচ হার এবং এক ম্যাচ জিতেছে- ফলে রেটিং ২ কমেছে এবং ২ এর সামান্য বেড়েছিল। সবমিলিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি থেকে প্রায় ১ রেটিং বাড়িয়েছে টাইগাররা। কিন্তু পাকদের বিশাল বাড়ন্ত রেটিংয়ের তুলনায় সেটা যৎসামান্য। এ কারণে, টুর্নামেন্ট শেষে এখন ১ রেটিং বেশি নিয়ে বাংলাদেশের ওপরেই পাকিস্তান দল। ৯৫ রেটিং তাদের, বাংলাদেশের ৯৪ এবং আটে থাকা শ্রীলঙ্কার ৯৩। ২০১৯ বিশ্বকাপ সরাসরি খেলার জন্য হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চলছে এ তিনটি দলের মধ্যে। এ মাসেই নিচু সারির দল জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ খেলে রেটিং কিছুটা বাড়িয়ে নেবে লঙ্কানরা। হয়তো উঠে যাবে আবার ৬ নম্বরে। তিন ম্যাচ জিতলে ৩ রেটিং যোগ হয়ে ৯৬ হবে তাদের মোট রেটিং। সেক্ষেত্রে আরেক ধাপ পিছিয়ে আসবে বাংলাদেশ দল। তবে রেটিং কমবে না, আট নম্বরেও নিরাপদেই থাকতে পারবে তারা। কারণ এই তিন দলের একমাত্র হুমকি ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে তিন দলের ব্যবধান ১৬ থেকে ১৮। ক্যারিবীয়দের রেটিং ৭৭। বাংলাদেশ এগিয়ে ১৭ রেটিংয়ে, শ্রীলঙ্কা ১৬ রেটিংয়ে এবং পাকরা ১৮ রেটিংয়ে। এই পার্থক্য ঘুচিয়ে তিন দলের মধ্যে যেকোন একটি দলকে ছাপিয়ে সেরা আটে থাকা আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে অসম্ভবই বলা যায় ক্যারিবীয়দের জন্য। তাই ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের তেমন কোন চিন্তার কারণ নেই।
×