ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদের তাণ্ডব

প্রকাশিত: ০৬:২৩, ৩০ মে ২০১৭

বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদের তাণ্ডব

শিক্ষা জাতির মেরুদ-, আর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতির বাতিঘর। জ্ঞানের প্রদীপ জ্বালিয়ে দেয়াই এ প্রতিষ্ঠানের কাজ। শিক্ষার্থীদের মনে এ প্রদীপ জ্বলবে ভবিষ্যতের পথ আলোকিত করতে। একটি সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ, সুন্দর সমাজ বিনির্মাণে শিক্ষা এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা অসীম, অনিস্বীকার্য। কিন্তু মাঝে মাঝে কিছু শিক্ষার্থীর উচ্ছৃঙ্খল, দায়িত্বহীন ও অনৈতিক আচরণ দেখে বিস্মিত হতে হয়। শুভবোধ বিসর্জন দিয়ে শিক্ষার্থীরা যখন অনিয়মের অনুঘটক হিসেবে কাজ করে তখন ব্যথিত হয়ে ভাবতে হয় এই কি তাদের শিক্ষার ভবিষ্যত? এই কি সুনাগরিক হওয়ার প্রচেষ্টা? জাতির ভবিষ্যত যাদের হাতে অর্পিত হবে তাদের এই মানসিক ও নৈতিক অধঃপতন কিভাবে মেনে নেয়া যায়? তুচ্ছ কোন ঘটনাকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীরা এমন তা-ব চালিয়ে জনজীবন বিপর্যস্ত করে দিতে পারে? ছাত্রদের ধূমপান করতে বাধা দেয়াকে কেন্দ্র করে গত শুক্রবার রাতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু ছাত্র যে ভাংচুর হামলা চালিয়ে দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, এমনকি যানবাহন ভাংচুর করে বীরত্ব প্রকাশ করেছে তা কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না। এই আচরণ ছাত্রদের কাছে প্রত্যাশিত নয়। যে সামান্য বিষয় নিয়ে কথা কাটাকাটি বা বিতর্কের সূত্রপাত তা ধৈর্য ও সহনশীল আচরণের মধ্য দিয়েই সুষ্ঠু পরিসমাপ্তি ঘটতে পারত এবং সেটাই ছিল শোভন ও যুক্তিসঙ্গত। কিন্তু নিজেদের ক্যাম্পাসে তারা অসংযমী আচরণ করবে কেন? মুরব্বিদের সামনে ধূমপান করা যে অভদ্রতা, মুরব্বি বা বয়োজ্যেষ্ঠদের যে সম্মান ও সমীহ করা কর্তব্য এ বিবেচনা ছাত্রদের মধ্যে কাজ করেনি বলেই তারা অন্য স্থানে গিয়ে ধূমপান করার পরামর্শে ক্ষুব্ধ হয়েছে, আর এই কারণেই মুহূর্তে তা-ব। ৩০টি যানবাহনে হামলা, অর্ধশত দোকানে ভাংচুর এবং বেশ কয়েকটি বাড়িঘরেও তারা হামলা চালিয়ে নিজেদের অবস্থান জানান দিয়েছে। আবাসিক ছাত্রদের আক্রোশ হামলার স্বীকার হয়েছেন স্থানীয় ব্যবসায়ী জনগণ। তবে এর রেসে দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে এই মহাসড়কে যাতায়াতকারী শত শত যানবাহনের নিরপরাধ যাত্রীদের। দেখা যায় ছাত্ররা তাদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়া আদায়ের ক্ষেত্রে যানবাহন ভাংচুর, সড়ক অবরোধ করে সাধারণ মানুষকে দুর্ভোগে ফেলে। এবারও তার ব্যতিক্রম দেখা যায়নি। স্থানীয়দের সঙ্গে সদ্ভাব বজায় রেখেই যেখানে সহাবস্থান শ্রেয়, সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক ছাত্ররা চড়াও হচ্ছেন স্থানীয় জনগণের ওপর। এতে যে শান্তিপূর্ণ অবস্থা বজায় রাখা সম্ভব নয়, ভবিষ্যতেও যে এমন পরিস্থিতির উদ্ভব হতে পারে তা শিক্ষার্থীদের বিশেষত উচ্ছৃঙ্খল ছাত্রদের বিবেচনায় আনা প্রয়োজন। তাছাড়া স্থানীয় বলেই যে জোর দেখাতে এবং কর্তৃত্ব ফলাতে হবে এটাও কোন গ্রহণযোগ্য কথা নয়। ছাত্র এবং স্থানীয় জনতার উভয়ের এক্ষেত্রে সুবিবেচনা কাম্য। শুক্রবার রাতে সামান্য ঘটনাকে কেন্দ্র করে উভয়পক্ষের যে ক্ষতি হলো তা থেকে শিক্ষা নেয়া উচিত। ছাত্রদের এ কথা ভুললে চলবে না অভিভাবকরা এখানে প্রকৃত শিক্ষা লাভের জন্যই পাঠিয়েছে তাদের। তাদের জীবন গঠনের এই উপযুক্ত সময়কে তারা যদি কাজে লাগাতে না পারে নিজেদের হঠকারিতার জন্য তা হলে ক্ষতি তাদেরই। স্থানীয় কোন বখাটে যদি ক্যাম্পাসে ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করা বা মাদক বিক্রি করার মতো ঘটনা ঘটিয়ে থাকে সেজন্য কর্তৃপক্ষের কাছে এর সুরাহা বা সমাধান চাওয়াই ছিল বাঞ্ছনীয়। কিন্তু বিরোধে জড়িয়ে প্রতিষ্ঠানের এবং নিরপরাধ মানুষের যে ক্ষতি করা হয়েছে তা কাম্য ছিল না। ছাত্রদের শুভবোধের জাগরণই এমন পরিস্থিতি থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। বিরোধ নয়, শান্তিপূর্ণ আচরণ কাম্য।
×