ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নতুন বাজারের খোঁজে

প্রকাশিত: ০৩:৪৪, ২ মার্চ ২০১৭

নতুন বাজারের খোঁজে

মহাস্থানগড়ের চাঁদ সওদাগর সপ্তডিঙ্গার বহর নিয়ে যেতেন দেশ থেকে দেশান্তরে। দেশী পণ্য বিদেশী বাজারে বিক্রি শেষে বিদেশী পণ্য বোঝাই করে ফিরতেন দেশে। চাঙ্গা হয়ে উঠত তখন দেশী বাজার। সেসব কবেকার কথা। তবে রূপকথা নয়। ‘বাণিজ্যেতে যাবই আমি যাব’ বলে রবীন্দ্রনাথ বিশ শতকের গোড়ায় গেয়েছেন গান। নিজেও ব্যবসা-বাণিজ্য করেছেন। সুবিধে তাতে হোক না হোক। বাঙালীর মাত্রই জানা ‘বাণিজ্যে বসতে লক্ষ্মী’। অর্থকড়ির আগমন এই পথেই ঘটে। কিন্তু বাণিজ্য কী সহজ কাজ, সবার জন্য? এমন প্রশ্ন আসাই স্বাভাবিক। কারণ এখানে প্রতিযোগিতা চলে প্রতি মুহূর্ত। পণ্যের গুণাগুণ, দামের হেরফের- এসব বাণিজ্যের চারিত্রিক দিক ও বৈশিষ্ট্য। আর শুধু ব্যবসা করে অর্থকড়ি রোজগার করলেই হয় না, লভ্যাংশ আবার বিনিয়োগ করতে হয়। পণ্য উৎপাদন যদি হয় উৎকৃষ্ট, তবে তার বাজারদর বেড়ে যায়। বাঙালী জাতি হিসেবে ব্যবসায়ী নয় বলে একটা প্রবাদ বহুকাল ধরে প্রচলিত হলেও সে অবস্থা ও অবস্থান কাটিয়ে ওঠে বাঙালী এখন বিশ্ববাণিজ্যে নিজের অবস্থান সুউচ্চে নিতে পেরেছে। ব্যবসার দিগন্তে বাঙালী সুনাম অর্জন করার ক্ষেত্রটি করায়ত্ত করেছে। বাংলাদেশের পোশাকশিল্প বিশ্ববাজারে একটি ভাল অবস্থান তৈরি করেছে। বছরে চৌত্রিশ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি তৈরি পোশাক বিদেশে রফতানি করা হচ্ছে। ২০২১ সাল নাগাদ রফতানি আয় পঞ্চাশ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা ঘোষিত হয়েছে। প্রত্যক্ষভাবে চল্লিশ লাখ শ্রমিক এই শিল্পে কাজ করছে। যার আশি শতাংশই নারী। পরোক্ষভাবে আরও বেশিসংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থান করছে এই শিল্প। নানাভাবে উপকৃত হচ্ছে কয়েক কোটি মানুষ। সঙ্গত কারণেই পোশাকশিল্প দেশের অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি হয়ে উঠেছে। বর্তমান সরকার এই শিল্পের সুরক্ষা এবং এর উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রেখে চলেছে। এমনকি এই শিল্পের উন্নয়নে স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নে কাজ করছে। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে সবরকম সহযোগিতার আশ্বাস দেয়া হলেও পোশাক শিল্পের বাজার সম্প্রসারণে ব্যবসায়ীরা উদ্যোগী হচ্ছেন, বলা যাবে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্যবসায়ীদের পরামর্শও দিয়েছেন সুনির্দিষ্ট বাজারের মধ্যে আটকে না থেকে নতুন নতুন বাজার যাতে খুঁজে পাওয়া যায় সেই উদ্যোগ নিতে। শুধু ইউরোপ, আমেরিকা নির্ভরতায় আটকে থাকা যে সমীচীন নয় তা ব্যবসায়ীরাও নিশ্চয় উপলব্ধি করেন। আফ্রিকা, ব্রাজিল, রাশিয়া, ককেশাস এবং দূর প্রাচ্যের দেশগুলোতেও প্রয়োজন বাজার সম্প্রসারণ। শেখ হাসিনা স্বপ্রণোদিত হয়ে বলেছেনও পোশাকেরও রয়েছে বৈচিত্র্য। বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ধরনের পোশাক মানুষ ব্যবহার করে। তাই শুধু এক জায়গায় না থেকে কোন্ দেশে কোন্ পোশাকের চাহিদা সব থেকে বেশি তা খুঁজতে হবে। আর এসব করা হলে শিল্প হিসেবে পোশাক কখনও মার খাবে না। বাণিজ্যিক দিক থেকে দেখতে গেলে শুধু পোশাক শিল্পের ওপর নির্ভর যথাযথ নয়। অন্যান্য পণ্যসামগ্রীরও বিদেশে বাজার তৈরি করতে হবে। এ দেশের প্রচলিত-অপ্রচলিত বহু পণ্য রয়েছে, যার বিদেশে চাহিদা রয়েছে। পণ্যের মান ও বৈচিত্র্য বাড়িয়ে বিশ্ববাজারে অবস্থান তৈরি করা সঙ্গত। কোথায় কী ধরনের বাজার রয়েছে, তা ব্যবসায়ীদের নিজস্ব উদ্যোগেই খুঁজে বের করার সময় বয়ে যাচ্ছে। বিশ্ববাজারে বাংলাদেশী পণ্যের অবস্থান গড়ে তোলা গেলে রফতানি আয়ের ক্ষেত্রে সমূহ সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে। পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ শিল্প বিকাশে সহায়ক পরিবেশ তৈরি হবে। বাঙালীর বিশ্ব বাণিজ্যমুখী হওয়ার সময় এখন। থেমে থাকা যাবে না, আগে বাড়তে হবে।
×