ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

রেকর্ড গড়ে সবার ওপরে সাকিব

প্রকাশিত: ০৪:১২, ১৪ জানুয়ারি ২০১৭

রেকর্ড গড়ে সবার ওপরে সাকিব

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ সাকিব যখন খেলেন, তখন ব্যতিক্রম কিছুই হয়। আবারও তাই হলো। এমন খেলাই খেললেন, টেস্টে বাংলাদেশের হয়ে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ স্কোরটাই করে দেখালেন। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে ২১৭ রানের ইনিংস খেললেন সাকিব। এ ইনিংস খেলতে তামিম ইকবালের করা ২০৬ রানকেও পেছনে ফেলে দিলেন এ অলরাউন্ডার। দেশের হয়ে তিনজন ব্যাটসম্যান ডাবল শতক করেছেন। ২০১৩ সালে শ্রীলঙ্কার গল টেস্টে সর্বপ্রথম ২০০ রানের ইনিংস খেলেন মুশফিক। এরপর ২০১৫ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে খুলনা টেস্টে তামিম করেন ২০৬ রান। এবার দুইজনকে অনেক পেছনে ফেলে ওয়েলিংটন টেস্টে সাকিব করলেন ২১৭ রান। মুশফিক ও তামিম যখন ডাবল শতক করেন, দুটি টেস্টেই ড্র করে বাংলাদেশ। এবারও কি তাহলে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে অন্তত ড্র হচ্ছে! সাকিব এমন ইনিংস খেলেন ২৭৬ বলে। ৩১টি বাউন্ডারি হাঁকান। এমনই ব্যাটিং করেন, মনেই হয়নি টেস্ট খেলছেন। মনে হয়েছে যেন নির্ধারিত ওভারের খেলা হচ্ছে। ব্যাটিং সহায়ক উইকেট পেয়ে নিউজিল্যান্ড বোলারদের তুলোধুনো করছেন সাকিব। শেষ পর্যন্ত দলকে ৫৩৬ রানে নিয়ে আউট হন সাকিব। ওয়াগনারের বলে শেষ পর্যন্ত বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফেরেন এ অলরাউন্ডার। সাজঘরে ফেরার আগে শুধু টেস্টে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ স্কোরটিই গড়েননি, দেশের হয়ে এক ইনিংসে সবচেয়ে বেশি বাউন্ডারিও হাঁকান। টেস্টে এরআগে কখনও দেড় শ’ রানই করতে পারেননি। শতক ছিল তিনটি। এবার চতুর্থ শতক করলেন। সেটি ডাবল শতক করে, দেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সর্বোচ্চ স্কোর করেই ছাড়লেন। এরআগে ২০১১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে মিরপুরে প্রথম ইনিংসে যে ১৪৪ রান করেছিলেন, সেটিই সাকিবের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রান ছিল। সাকিব এদিন শুধু এ ইনিংসকেই নয়, সবাইকেই পেছনে ফেলে দিলেন। আগেরদিন ৫ রানে ছিলেন অপরাজিত। টেস্টের দ্বিতীয়দিনে এসে ২১২ রান যোগ করলেন। ১৫০ বলে ১০০ রান, ১৯১ বলে ১৫০ রান, ২৫৩ বলে ২০০ রান করলেন সাকিব। এরপর আরও ১৭ রান করে আউট হন। শতক করার আগেই অবশ্য তিনহাজারী ক্লাবে নিজের নাম লেখান। বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের মধ্যে হাবিবুল বাশার (৩০২৬ রান) ও তামিম ইকবালের (৩৪০৫ রান) পর তৃতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে তিনহাজার রানে পৌঁছান সাকিব। এ টেস্টের আগে সাকিবের ভা-ারে ২৯২৯ রান ছিল। তিন হাজার রান হতে লাগত ৭১ রান। প্রথমদিনে ৫ রান করেন। দ্বিতীয়দিনে আরও ৬৬ রান করে তিন হাজার রানে পৌঁছান। অসাধারণ এ ইনিংস খেলার পথে আবার সর্বোচ্চ বাউন্ডারি হাঁকান সাকিব। এরআগে ২০১৩ সালে দেশের মাটিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেই ১৮১ রানের ইনিংস খেলার পথে সর্বোচ্চ ২৭টি বাউন্ডারি হাঁকিয়েছিলেন মুমিনুল। সাকিব তাও ছাড়িয়ে গেলেন। উপমহাদেশের ক্রিকেটারদের মধ্যে নিউজিল্যান্ডে বাংলাদেশের হয়ে সাকিবই একমাত্র ডাবল শতকটি করেন। সাকিবের আগে পাকিস্তানের মুশতাক মোহাম্মদ, জাভেদ মিয়াদাদ ও মোহাম্মদ ইউসুফ এবং শ্রীলঙ্কার অরবিন্দ ডি সিলভা ও কুমার সাঙ্গাকারাও ডাবল শতক করেছিলেন। শতক করার পরই ওয়েলিংটনের বেসিন রিজার্ভের ‘অনার্স বোর্ডে’ নাম লেখান সাকিব। তবে এ বিশাল স্কোর হত না। যদি নিউজিল্যান্ড ফিল্ডাররা কয়েকটি ‘নতুন জীবন’ সাকিবকে না দিতেন। প্রথমদিনে ৪ রানে আউট হতে পারতেন সাকিব। বেঁচে যান। রানআউটও একবার হতে পারতেন। তা থেকেও বেঁচে যান। দ্বিতীয়দিনে ২১৭ রান করার পথে ১৮৯ রানে টেইলরের হাত থেকে একবার ক্যাচ আউট হওয়া থেকে বাঁচেন। আরেকবারতো ওয়াটলিংয়ের হাতে ক্যাচ ধরাও পড়ে। কিন্তু বলটি ঘাস ছোঁয়ায় থার্ড আম্পায়ারের সহায়তায় বেঁচে যান সাকিব। এমন ব্যাটসম্যান সুযোগ পেলে কি আর হাতছাড়া করেন। কখনই না। সুযোগগুলো এমনই কাজে লাগালেন, দেশের হয়ে সর্বোচ্চ রানই করে ফেললেন। সাকিব এমন ইনিংস খেলে মহাতৃপ্ত। ওয়ানডে ও টি২০তে নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি। টেস্টে এসে কি অসাধারণ ব্যাটিংই না করলেন। সাকিব তাই বললেন, ‘আমরা ওয়ানডে ও টি২০তে ভাল করতে পারিনি। অন্তত কাগজে-কলমে সে রকমই মনে হবে। টেস্টে ভাল কিছু করা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আমার জন্য গুরুত্বপূর্ণতো অবশ্যই। দেশের জন্যও। আমার এই ইনিংস দলকে ভাল জায়গায় নিয়ে যেতে সাহায্য করেছে, সেই তৃপ্তি আছে। আল্লাহর অশেষ রহমতে আমি এমন একটা ইনিংস খেলতে পেরেছি।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘আমরা আমাদের মতো করে খেলতে চেয়েছি। ওয়েলিংটনের উইকেট ব্যাটিং করার উপযোগী ছিল। কিন্তু এটাও সত্যি, ওদের দুর্দান্ত কিছু বোলার আছে। কিছু কিছু বল খেলার জন্য কঠিনও ছিল। আর আউট হতে তো একটা মাত্রই বল লাগে। আমরা পরিকল্পনা করেছিলাম বলের ধরন বুঝে খেলব। আমি নিজে বল খুব ভাল দেখছিলাম। নিজেকে বোঝাচ্ছিলাম, মাথা ঠা-া করে খেললে রান আসবেই।’ রান আসলও। বিশাল স্কোরও হলো। দল শেষ পর্যন্ত দ্বিতীয়দিনে দুর্দান্ত অবস্থানও গড়ল। ৫৪২ রান করল দল। তাতে সাকিবেরই ২১৭ রান। এমন ইনিংস সাকিবকে রেকর্ড গড়তে সহায়তা করল। সেই রেকর্ডে বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের মধ্যে এক ইনিংসে সবচেয়ে বেশি রান করে সবার ওপরেও থাকলেন সাকিব।
×