ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সিডনির মেলব্যাগ ॥ অজয় দাশগুপ্ত

জয়তু শেখ হাসিনা!

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ২৩ অক্টোবর ২০১৬

জয়তু শেখ হাসিনা!

দেশ তথা ঢাকা এখন উৎসবমুখর। আওয়ামী লীগের সম্মেলন নিয়ে এমন আবেগ আগে চোখে পড়েনি। বিএনপি-জামায়াতের কঠিন ষড়যন্ত্র আর রমরমা সময়ে কোণঠাসা লীগ এখন একক। দেখেশুনে মনে হবে ধুলোবালি ঘাসও এখন আওয়ামী লীগ। যেভাবেই হোক এ বাস্তবতা একদিনে তৈরি হয়নি। এর পেছনে কিছু মানুষের নিরলস অবদান থাকার পরও মূলত এটি জননেত্রী শেখ হাসিনার অবদান। নিজের মতো আওয়ামী লীগকেও এমন এক জায়গায় নিয়ে এসেছেন যেখান থেকে পেছনে যাওয়ার পথ নেই। না তিনি, না বাংলাদেশ, কেউ আর আগের জায়গায় নেই। একজন মানব, একজন নেতার হাতে বদলে যাওয়া স্বদেশ দেখার সৌভাগ্য হয়েছে আমাদের। তাঁর পিতার হাতেই দেশ স্বাধীন হয়েছিল। জনকের বাংলাদেশ স্বপ্ন আর আশার প্র্রদীপ জ্বালালেও অনেক কাজ হয়নি। একে একে মারা গেলেন দেশের কা-ারিরা। দৃশ্যপট থেকে তাঁদের বিদায় করা হলো জঘন্য চক্রান্তে। যারা এ দেশের সবচেয়ে বড় দুশমন তাদের ষড়যন্ত্র দেখতে থাকল সফলতার মুখ। এক সময় এমন হয়ে গেল এ যেন ছায়া পাকিস্তান। সবকিছুতে গোঁজামিল। কিন্তু সময় কি আর কারও দাস? না ইতিহাস কারও শাসন মেনে চলে? জামায়াত প্র্রভাবিত বিএনপি যে আসলে কোন দল নয় এবং তাদের শক্তির উৎস যে সামরিক ছাউনি আর নেগেটিভ ভোট সেটা পরিষ্কার হওয়ার পর চাকা ঘুরতে শুরু করল। এরপর আমাদের নেত্রীর উদ্ভাসের শুরু, যা কল্পনার বাইরে চলে গিয়েছিল, যেসব প্র্রত্যাশা বা আশা মরতে শুরু করেছিল তাদের পুনর্জন্ম হয়ে উঠল সময়ের ব্যাপার। এ দেশের ইতিহাসের জঘন্যতম হত্যাকা-ের নাম পনেরো আগস্ট। সে রাতের বিচার করাও ছিল আইন বিরুদ্ধ। তিনি তা ভাঙলেন। শুধু ভাঙ্গা নয়, দেশের কালো অধ্যায় ও রাজনীতি ধ্বংসের খলনায়ক এসব খুনীকে যারা হিরো বানিয়েছিল তাদের চোখের সামনে ঝোলানো হলো ফাঁসিতে। বঙ্গবন্ধুর খুনীদের শাস্তি নিশ্চিত করার পর সুকৌশলে তিনি হাত দিলেন আসল জায়গায়। ধারণা করা হচ্ছিল এদের দুর্গে হাত দিলে দেশ নাকি আর দেশ থাকবে না। আস্ফালন টাকার গরম আর ধর্মের লেবাসে মধ্যপ্র্রাচ্য লবিংয়ে এরা নিজেদের চিরনিরাপদ ভাবলেও আসলে ভেতরটা ছিল ফাঁকা। সে ফাঁকা জায়গাটা তিনি ধরতে পারলেন আপন প্র্রজ্ঞা আর দূরদর্শিতায়। ততদিনে দেশের মানুষও বুঝে গেছে ইতিহাস নির্মল করার সময় দোরগোড়ায়। তাঁর প্রচ্ছন্ন আদেশ ও সহযোগিতায় গড়ে উঠেছিল নতুন এক শাহবাগ। জয় বাংলার এই নবজন্মের কাছে পরাস্ত হলো দানবের দল। ফাঁসিতে গেল মানবতাবিরোধী রাজাকার। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ কিন্তু এগোতে শুরু করেছে। তাঁর নেতৃত্বে এ আরেক অভিযাত্রা। চালের অভাব, ভাতের অভাব যে দেশের নিয়তি বলে গণ্য করা হতো, সে দেশ জাদুবলে উঠে দাঁড়াল। তার চাল রফতানি হচ্ছে বিদেশে। এক টুকরো ঝড় বা বন্যা হলে যার রিলিফ ছাড়া চলত না, সে ভূমিকম্প বিধ্বস্ত নেপাল, পাকিস্তানের মতো বৈরীমুখর দেশের বিপদেও সাহায্য দিতে শুরু করল। এ আরেক সুবর্ণ অধ্যায়। খেয়াল করবেন দেশের এ উন্নয়ন আর অগ্রগতি এমনিই হয়নি। এর পেছনে আছে সঠিক নেতৃত্ব। ততদিনে তাঁর চোখে-মুখে এসে গেছে দীপ্তি। তাঁকে এখন আর কোন প্রতিক্রিয়া পেছনে টেনে ধরে না। এক সময় যেসব দেশের নাম শুনলে আমাদের গায়ে জ্বর এসে যেত, যাদের হাঁকডাকে আমরা থরথরি কম্পে ভুগতাম, সেসব দেশের বাঘা বাঘা নেতার সুর মিইয়ে গেল। ফোন করে আকুতি জানিয়েও অসুরের ফাঁসি ঠেকাতে পারেনি তারা। কারণ আমাদের নেতা জানান দিয়েছেনÑ আমরা এখন আর কারও রক্তচোখের দাস না। শেখ হাসিনাই এই নেতা। মাটি থেকে, রক্ত থেকে উঠে দাঁড়ানো সে নারী যিনি ভাগ্যক্রমে বেঁচে গিয়েছেন এ দেশ ও জাতিকে ইতিহাসের শুদ্ধতা দিতে আর সামনে নিয়ে যাওয়ার কারণে। তাঁর দ্বিতীয় দফায় জিতে আসাটা ছিল নানা ধরনের ঘটনায় মোড়া এক অধ্যায়। গণতন্ত্রের দুনিয়ায় নিজেদের গণতান্ত্রিক বলে পরিচয় দেয়া বিরোধী দলের এক কথাÑ আমাদের জিতিয়ে না দিলে ইলেকশনে যাব না। তাদের বাধা দেশের মানুষকে জ্বালিয়ে অঙ্গার করা ধর্ম ব্যবসায়ীদের দিয়ে সরকার পতনের আন্দোলনের নামে নৈরাজ্যের পরও তাঁকে টলানো যায়নি। দেশে যখন এসব চলছে বিদেশে তাঁর ভাবমূর্তির খোলতাই হচ্ছে তখন। আগে যারা বাংলাদেশ চিনত না তারা এখন ক্রিকেটার সাকিব বা তামিমের নামে পাগল। আগে যারা ভাবত আমরা ফকিরের দেশ তাদের চোখে ধাঁধা লাগানো কাপড় পোশাক আর গেটআপে হাজির অধুনা বাংলাদেশের মানুষ। যেসব নেতা আমাদের সাইডলাইনে বসিয়ে রাখতেন, যেসব দেশে গেলে সরকারপ্রধানকে রিসিভ বা সি-অফ করতেন নিম্নস্তরের অফিসাররা তাদের নেতারা এখন আগে এসে দাঁড়িয়ে থাকেন। জার্মানি, কানাডা বা আমেরিকা, এমনকি ভারতের নেতাদের সঙ্গে আমাদের নেতার ইদানীং ছবিগুলো দেখুন। কাকে বলে আন্তরিকতা আর কাকে বলে নমনীয়তা! এ জাদু কি কেবল জিডিপি আর উন্নয়নের অবদান? জী-না। এর পেছনে আছে নেতৃত্বের ক্যারিশমা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর রক্তের উত্তরাধিকারী। যে পিতা দেশে আসার আগে ভারত ও বিলেতের সরকারপ্রধানের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কথা বলেছেন তাঁর কন্যাও আজ এক অন্যমাত্রায় নিয়ে গেছেন নিজেকে। যেসব বাংলাদেশী অকারণে তাঁর বিরোধিতা করেন তারা তা জেনেও নিজেদের হীনমন্যতার কারণে তাঁকে মানতে পারেন না। একজন মানুষ কিভাবে বিশ্ব আবহে বড় হয়ে ওঠে? রাতে মদ, দিনে বিদেশী পোশাক বা সাজসজ্জায়? নৈব নৈব চ। যেমন লালন-রবীন্দ্রনাথ বাঙালিত্বের জন্য সম্মানিত, তেমনি শেখ হাসিনাও। তাঁর পোশাক, ইমেজ আর কথায় তিনি খাঁটি বাঙালী। দেশের ভাবমূর্তি ও বাঙালী সংস্কৃতির ব্যাপারে তাঁর আন্তরিকতা প্রশ্নাতীত। এভাবে তিনি বিদেশের মন কেড়েছেন। কথায় বলে দেশের যোগী কষ্ট পায় দেশে। তাঁর বেলায়ও তাই। বাইরে তাঁর যত সুনাম আর প্রভাব। তাই দেখে নিন্দুকেরা দেশে সাম্প্র্রদায়িকতা আর অন্ধত্বের আশ্রয় নেয়। কিন্তু সেসব কৌশল এখন সেকেলে আর অচল। শেখ হাসিনা এখন কারও সেকেন্ড ম্যান নন। যেখানে তিনি সেখানেই আলো। দল ও নেতার মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে গুণগত মানে। তিনি দলকে ছাপিয়ে উঠে এসেছেন। এটা তাঁর কৃতিত্ব। এটাই রাজাকারদের চোখের বিষ। কিন্তু আমরা জানি তিনি জননীর মতো আগলে রাখছেন এই দেশ। তাঁর আলোয় বিদেশেও বাংলাদেশের জ্যোতি বাড়ছে। তিনি না থাকলে এর ধারাবাহিকতা টানাও প্রশ্নময় হয়ে দাঁড়াতে পারে। আজ যখন বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের সুনাম ও মর্যাদা বাড়ছে, যখন তার গায়ে লাগছে উন্নয়নের নতুন হাওয়াÑ বিশ্বজনীন শেখ হাসিনার কোন বিকল্প নেই কোথাও। এটা যারা জানেন কিন্তু মানেন না, তাদের ব্যাপারেই সাবধান হতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কেবল পার্বত্য শান্তিচুক্তি, ভারতের কাছ থেকে ছিটমহল আদায়, সমুদ্র সীমানা বাড়ানো বা ইতিহাস কলঙ্কমুক্ত করার জন্য টিকে থাকবেন না, তাঁর নেতৃত্বের দৃঢ়তা আর কঠিন সময়ে প্রজ্ঞার বিষয়টাও মনে রাখবে সময়। মাঝে-মধ্যে মনে হয় বিশ্বজনীনতার দিক থেকে তিনি সবাইকে ছাপিয়ে এগিয়ে আছেন। তাঁর দীর্ঘায়ু ও কর্মমুখর জীবন কামনা করি। [email protected]
×