ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ঢাকার দিনরাত

প্রকাশিত: ০৩:৪৪, ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬

ঢাকার দিনরাত

ভাদ্রের অভদ্র গরম আর হঠাৎ হঠাৎ শান্তি-ঝরানো বর্ষার ভেতর ঢাকা তার অধিবাসীদের জন্য দারুণ এক উৎসবের উপলক্ষ বয়ে এনেছিল। একাত্তরের দুর্ধর্ষ খুনী ও নির্যাতনকারী মীর কাশেম শেষ পর্যন্ত ফাঁসির দড়িতে ঝুলতে বাধ্য হলো। তার কোটি কোটি টাকা জীবন রক্ষা করতে পারল না। নির্লজ্জ সন্ত্রাসী দলটি দু’দফা মোট দেড় দিন হরতাল ডেকেছিল। জনজীবনে তার কোন প্রভাবই পড়েনি। অবশ্য কোন কোন ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল ক্ষুদে বার্তার মাধ্যমে ওই দুই দিন স্কুল বন্ধের নোটিস পাঠায়। অজ্ঞান পার্টির পরিণতি পাঠকদের মনে থাকতে পারে বছরখানেক আগে এই শিরোনামে এই কলামে লিখেছিলাম অজ্ঞান পার্টি নিয়ে। অপারেশনের সময়-দৈর্ঘ্য বুঝে রোগীকে হিসাব করে এ্যানেস্থেশিয়া দেয়ার ব্যবস্থা করেন ডাক্তার। এটাকে আমরা সাধারণভাবে বলি অজ্ঞান করা। আমাদের কথ্য অভিধানে ‘অজ্ঞান পার্টি’ চালু শব্দ। তার ‘ডাক্তার’ এখন মানুষ মারার কারিগর হয়ে উঠছে। সংবাদপত্রে মাঝেমধ্যেই এমন সংবাদ বেরোয়- অজ্ঞান পার্টির কবলে পড়ে যাত্রী সর্বস্বান্ত। এসব খবর আমাদের হয়ত গা সওয়া হয়ে গেছে। একবার নিজে ওই পার্টির কব্জায় পড়লে হয়ত বুঝতে পারব তার স্বরূপ ও ভোগান্তি। কবি তো বলেই গেছেন- কী যাতনা বিষে, বুঝিবে সে কিসে/ কভু আশীবিষে দংশেনি যারে... সতর্কতামূলকভাবে এখন অনেক যানবাহনে লেখা থাকে- অপরিচিত কারও দেয়া কিছু খাবেন না। অবশ্য যারা খান তারা এসব লেখা লক্ষ্য করেন না, কিংবা তারা অক্ষরজ্ঞানবঞ্চিত। শহরের এসব শয়তানি বুদ্ধি সম্পর্কে তারা অসচেতন থাকেন। আপনজনের মতো খাতির করে পান, মিষ্টি বা এজাতীয় কিছু খাইয়ে তাকে অচেতন করে সঙ্গে থাকা নগদ অর্থ, ঘড়ি-মোবাইল ফোন আত্মসাত করবেনÑ এমন ভাবনা তাদের মগজে ধরা দেয় না। একবার এমন অভিজ্ঞতা লাভ করলে তাদের মনে কী প্রতিক্রিয়া হয়, তা জানতে ইচ্ছে করে। নগরবাসীর প্রতি নিশ্চয়ই ঘৃণার উদ্রেক হয়। মানুষকে তারা ভীষণ বিপজ্জনক বলে ভাবতে শুরু করে। রাজধানীতে বিচিত্র উপায়ে মানুষ জীবিকা নির্বাহ করে। এর ভেতর পেশাদার খুনীও রয়েছে। কথা হলো পেশাদার খুনীর তুলনায় অজ্ঞান পার্টির সদস্যদের অপরাধ লঘু কিনা। একে বরং ছিনতাইয়ের আরেক রূপ হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। অস্ত্র ঠেকিয়ে বা আহত করে, কিংবা চোখে মরিচের গুঁড়া ছিটিয়ে বা মলম মাখিয়ে পকেট গড়ের মাঠ করে দেয়ার তুলনায় যাত্রীকে ঘুমের দেশে পাঠিয়ে টাকা এবং মালসামান লোপাট করার অপকর্মটিকে কিছুটা ‘শান্তিপূর্ণ’ বলে মনে হতে পারে চূড়ান্ত বিচারে। দুটোতেই অর্থ নাশ, তবে একটিতে রক্তপাতের শঙ্কা থাকে। অপরটি বিনা রক্তপাতে। অবশ্য প্রাণ সংহারের ঘটনাও ঘটে মাঝেমধ্যে। ফলে ওই ‘শান্তি প্রক্রিয়া’ হয়ে উঠেছে চরম ‘ঝুঁকিপূর্ণ’। রাজধানীর অজ্ঞান পার্টিদের ‘জ্ঞান দান’ করা কি খুবই কঠিন? আমাদের পুলিশ ও র‌্যাব ভাইয়েরা চাইলে কী না পারেন। এই লেখার মাধ্যমে তাদের হাত ধরে অনুরোধ জানানোর কাজটিই করতে চাইছি। নিষ্ঠুর ঢাকায় এসে নির্দোষ ডাবের পানি খেয়ে আর কোন নিরীহ লোকের যেন প্রাণ না যায়। গত সপ্তাহে সংবাদপত্রে অজ্ঞান ও মলম পার্টির ২১ সদস্যের কারাদণ্ড এবং চেতনানাশক ওষুধ ও হালুয়া উদ্ধারের সংবাদটি অনেকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। গ্রেফতারকৃতদের ছয় মাস থেকে দুই বছর পর্যন্ত বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। গাবতলী ও মহাখালী বাসস্ট্যান্ড, শাহবাগ ও যাত্রাবাড়ী এলাকায় পৃথক অভিযান চালিয়ে অজ্ঞান ও মলম পার্টির এ সদস্যদের গ্রেফতার করা হয়। তাদের কাছ থেকে ঘুমের ওষুধ, চেতনানাশক দ্রব্য মেশানো আচার, ভেষজ হালুয়াসহ বিপুল পরিমাণ ওষুধ উদ্ধার করা হয়েছে। ভাবছিলাম কারাভোগের পর বেরিয়ে এসে এরা কি পেশাটি ছেড়ে দেবে? ঢাকার পিয়নও কোটিপতি! ফলাও করে খবরটি ছাপা হয়েছে। রাজধানীর এক পিয়নের সন্ধান মিলেছে যিনি কোটিপতি। কিছুদিন আগে দুস্থ সাংবাদিকদের দেখছিলাম টিভির পর্দায় প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে অর্থ সহায়তা নিতে। আর একজন পিয়ন কোটিপতি বনে যায়! হায় সেলুকাস কী বিচিত্র এই দেশ! মোবারক হোসেন রাজউকের একজন এমএলএসএস। অথচ কোটি টাকার মালিক। রাজধানীতে রয়েছে ৭ তলাবিশিষ্ট বাড়িও। বিলাসবহুল মার্কেটে দোকান রয়েছে স্ত্রীর নামে। এ ছাড়া আছে লাখ টাকার শেয়ারও। তার এসব সম্পদ আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। এমন প্রমাণই পাওয়া গেছে দুদকের অনুসন্ধানে। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ- রাজউকের উত্তরা জোনাল অফিস-১ এর এস্টেট শাখার এমএলএসএস পদে কর্মরত মোবারক হোসেন। আয়ের সঙ্গে মিল নেই, এমন বিপুল অর্থ সম্পদের প্রমাণ পাওয়ায় তার এবং তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে নোটিস জারি করেছে দুদক। দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধান থেকে প্রাপ্ত বিবরণীতে দেখা যায়, মোবারক হোসেন উত্তরার ১১ নং সেক্টরের প্লটটি ২০০৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর রাজউক থেকে লিজ চুক্তিপত্রের মাধ্যমে প্রাপ্ত হন। যার মূল্য হিসেবে পরিশোধ করেন ৯ লাখ টাকা। ওই জায়গার ওপর রাজউক থেকে ১৭৭০ দশমিক ৮৮ বর্গফুটের নকশা অনুমোদন গ্রহণ করে ২০১২ সালে ৭ তলা বাড়ি নির্মাণ করেন মোবারক। এ জন্য বাংলাদেশ হাউজ বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশন থেকে ৫০ লাখ টাকা লোন গ্রহণ করেন তিনি। অথচ ওই বাড়ি নির্মাণে আনুমানিক ২ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে বলে দুদকের অনুসন্ধানে প্রমাণ পাওয়া গেছে। নির্মাণকালে ওই বাড়ির তৃতীয় তলার ফ্ল্যাট দুটি ৬৫ লাখ টাকায় বিক্রি করেন তিনি। এ ছাড়া ২০১১ সালে মোবারক তার স্ত্রীর নামে একটি কোম্পানির ২ লাখ ২৫ হাজার টাকার একটি শেয়ার ক্রয় করেন। এরপর ২০১৩ সালে উত্তরা রাজউক কমার্শিয়াল মার্কেটে ১৬৬ দশমিক ২১ বগফুুটের একটি দোকানও স্ত্রীর নামে ক্রয় করেন। যার আনুমানিক মূল্য ৩০ লাখ টাকা। দুদকের অনুসন্ধানে বলা হয়, মোবারক হোসেন নিজ ও তার স্ত্রীর নামে ২ কোটি ৫৩ লাখ ৮১ হাজার ৮৯৫ টাকার সম্পদ অর্জন করেন। এর মধ্যে ১ কোটি ১৫ লাখ টাকার সঠিক উৎস পাওয়া গেছে অনুসন্ধানে। বাকি ১ কোটি ৩৮ লাখ ৮১ হাজার ৮৯৫ টাকার সম্পদ অর্জনের পক্ষে তিনি রেকর্ডভিত্তিক উৎস দেখাতে পারেননি। তাই এই টাকার সম্পদ তাদের স্বামী-স্ত্রী দুজনেরই জ্ঞাত আয়বহির্ভূত বলে অনুসন্ধান টিম নোট প্রদান করেন। বাসের বিকিকিনি মহানগরীর বাস-মিনিবাসে নানা পণ্যের বিকিকিনি চলে। বেশির ভাগই খাবার দাবার। সবচেয়ে বেশি ওঠে হকার আর আমড়া বিক্রেতা। হকারদের কাছে সস্তা সংবাদপত্রই মেলে বেশি। যাত্রীরাও সময় কাটাতে এ ধরনের কাগজ কেনেন। তবে রাতে মাঝেমধ্যে এমন সব পণ্যের বিক্রেতাদের দেখা মেলে যে একটু অন্যরকম অনুভূতিই হয়। বিআরটিসি-র এসি বাসে এক লোক বার্মিজ চকোলেট বিক্রি করার আগে ভূমিকা বক্তৃতায় জানালেন যে তিনি একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে জব করেন। কিছুটা বাড়তি রোজগারের আশায় অফিস শেষে চকোলেট বিক্রি করেন। একবার ঢাকার কেরানীদের জীবন সম্পর্কে খোঁজখবর নিতে গিয়ে জেনেছিলাম বহু বছর আগে একজন কেরানী মতিঝিলে অফিস শেষ করে এসে ফুটপাথে দাঁড়িয়ে প্যান্ট-শার্ট বিক্রি করতেন। কেরানীটি ঘুষ খাবেন না বলে পণ করেছিলেন। কিন্তু বেতনের টাকায় সংসার চলত না। তাই বাধ্য হয়েই ফুটপাথে তার হকারি করা। গত সপ্তাহে মাথায় পাগড়ি বাঁধা সদাহাস্যময় শ্মশ্রুধারী কোমল চেহারার আবদুর রহমানের দেখা পেলাম। প্রথমে ভেবেছিলাম তিনি তাবিজ বেচছেন। হ্যাঁ, তাবিজই বটে, তবে ভিন্নধর্মী। গাছের ডাল কেটে নিয়ে তাবিজের মতো দেখতে ছোট টুকরোর মাঝখানে গোল ছিদ্র করা। সেখানে সুতা বেঁধে হাতে বাঁধতে হবে। মেয়েরা বাঁধবেন বাঁ হাতে, আর ছেলেরা ডান হাতে। তিনি অবশ্য কাঠের টুকরোটিকে তাবিজ না বলে বলছেন বাতের ওষুধ। বিশ টাকা দিয়ে বেশ ক’জন কিনেও নিলেন। অল্প বয়সী এক ক্রেতাকে আবদুর রহমান সাধলেন তার মোবাইল ফোনের নম্বরটি রাখার জন্য। বলা চলে জোরাজুরিই করলেন। বললেন, অসুখ ভাল হলে আমাকে আপনার খুঁজতে হবে। আরও ওষুধ নিতে ইচ্ছে হতে পারে। যথেষ্ট আত্মবিশ্বাস তার গলায়। দোয়াদরুদ লেখা কাগজ নয়, নয় বুজরুকি ঝাঁড়ফুঁক; তাবিজটি ভিন্ন ধরনরে। শরীরের সংস্পর্শে কোনো বিশেষ বস্তু এলে সেটির প্রভাব দেহাভ্যন্তরে পড়া কতটা বিজ্ঞানসম্মত জানি না, তবে লোকে পাথরের আংটি নেন এ ধরনের ধারণা বা বিশ্বাস থেকে। লোকটিকে শুধোলাম গাছটির নাম জানাতে। হেসে বললেন, ওটা জিজ্ঞস করেন না। বলতে পারব না, মানে বলা যাবে না। এটা নিশ্চয়ই তার বিজনেস সিক্রেট। জানালেন এই গাছের সন্ধান তাকে একজন দিয়েছিলেন যখন বাতের ব্যথায় তিনি ছিলেন মরোমরো। লাখ লাখ টাকা নাকি বাতের চিকিৎসায় খরচ করে ফেলেছিলেন। এরপর এই গাছের টুকরো শরীরে ধারণ করে সুস্থ হয়ে ওঠেন। তাই স্বল্পমূল্যে মানুষের উপকারের জন্যই এই পেশা বেছে নিয়েছেন। চাকরিও ছেড়েছেন। এখন বিশেষ ওই গাছটি লাগান, তার ডাল কেটে নিজ হাতে তাবিজ বানান। গল্পে গল্পে বললেন, তার পরিবার (স্ত্রী) স্বপ্নে দীক্ষা পেয়েছেন, তিনি একজন কবিরাজ। জিজ্ঞেস করলাম, তিনি কি কোথাও দোকানঘরে বসেন? বললেন, কেন আমার বাড়িতেই কবিরাজি করেন। কণ্ঠস্বরে গর্ব লুকানো রইল না। নামার আগে এক টুকরো কাগজ আমার হাতে গুঁজে দিলেন। মিনি লিফলেটের শিরোনাম- ‘তদ্বিরে মুক্তি আমলে উন্নতি’। কুড়িল বিশ্বরোডের একটি বাসার ঠিকানা লেখা নিচে। বদলে যাচ্ছে ঢাকা আজ মঙ্গলবার, আগামী সপ্তাহে এই দিনে কোরবানি ঈদ। ঈদ যে এসে পড়েছে তার আভাস পাওয়া গেছে ক’দিন আগে থেকেই। রাস্তায় দেখা যাচ্ছে গরু বহনকারী ট্রাকের সারি। এক ঝলক গরুগুলোর দিকে তাকালাম। বেশ হৃষ্টপুষ্ট এবং দেখতে ভাল গরুই বেশি নজরে এলো। হঠাৎ একটা অনুভূতির থাপ্পড় খেলাম। এই যে এত গরু আসছে ঢাকায়, তারা আর ফিরতে পারবে না। এক অর্থে আমাদের ঢাকা মহানগর হলো গরুগুলোর অন্তিম গন্তব্য। এই যে লাখো গরু আসছে তা রাজধানীর কোটি মানুষের উদরে যাবে কিছুকালের ভেতর! গরুর সঙ্গে মানুষের, মানে যিনি নিজে গরু প্রতিপালন করেছেন, উভয়ের ভেতর একটা সম্পর্ক গড়ে ওঠে, এ কথা ক’জন ভাবে? কোরবানির হাটে বিকিয়ে যাওয়া মানে সেই সম্পর্কের চিরবিচ্ছেদ! ‘মহেশ’ গল্পের কথাও মনে পড়ে গেল। বুক চিরে বেরিয়ে এলো একটা দীর্ঘশ্বাস। দুই সিটি কর্পোরেশনের মধ্যে দক্ষিণে ১৩টি ও উত্তরে আটটি পশুরহাট বসছে। আরও তিনটি হাটের ইজারা স্থগিত রাখা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা পেলে এই তিন হাটে কোরবানির পশু উঠবে। মূল কেনাবেচা এখনও শুরু হয়নি। রাজধানীতে এবার ৯টি হাট বেড়েছে। এতে কোরবানির পশু কেনার ব্যাপারে নগরবাসীর ভোগান্তি অনেক কমবে বলে আশা করতে পারি। তবে কোরবানির পশুরহাটে অন্য যে ভোগান্তি পোহাতে হয়, সে আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। পশুরহাটে ভ্রাম্যমাণ আদালত, ভেটেরিনারি টিম তৎপর থাকবে বলে জানানো হয়েছে। থাকবে সিসি ক্যামেরা ও জাল নোট শনাক্তকরণ যন্ত্র। ল্যাপটপ ছিনতাই এই শিরোনামে মনসুর আজিজ একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন ফেসবুকে। আজ নির্বাচিত ফেসবুক স্ট্যাটাস হিসেবে এটি তুলে দিচ্ছি। ‘মনটা ভীষণ খারাপ। দীর্ঘ চার ঘণ্টা জার্নি করে আসলাম নাল-খাল-নদী পেরিয়ে। আমার ঢাকায়। মিরপুর ১০ এসে রিক্সা নিলাম। কাজীপাড়া। দুটি অবোধ শিশু আর প্রিয়তমার হাতছানি। একটি সপ্তাহের প্রহর গোনার সমাপ্তি। দীর্ঘ সফরের ক্লান্তি রিক্সায় বসার পর হাল্কা বাতাসে যেন উবে গেল। কিছুটা আনমনাও হয়েছি। নিজের এলাকায় এসে মানুষ যেমন নিরাপদ বোধ করে; আমিও তেমনি। আল হেলাল হাসপাতাল পার হলেই একটি মোটরসাইকেলের পেছনের আরোহী হঠাৎ কোলের ওপর থেকে ব্যাগটা টান দিয়ে নিয়ে গেল। আমি হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলাম। সম্বিত ফিরে পেলে রিক্সার ওপর দাঁড়িয়ে সবটুকু শক্তি দিয়ে চিৎকার করলাম ‘ধর! ধর!’ আমার ব্যাগ নিয়ে গেছে। ফাঁকা রাস্তায় কে কার কণ্ঠ শোনে! ক’জন পথচারী দেখলেও তাদের করার কিছুই ছিল না। রাজহাঁসের মতো ঢেউ তুলে ফাঁকা সড়কে তুফানের ঝাপটা রেখে চলে গেল ছিনতাইকারীরা। বাসার সামনের গলিতে এসে কতক্ষণ নির্বোধের মতো তাকিয়ে থাকলাম আকাশের দিকে। আমার স্বাধীন দেশ! একজন সাধারণ নাগরিক এদেশে নিরাপদে চলাচল করতে পারে না! তার নিরাপত্তা নেই। তার জানেরও নিরাপত্তা নেই, মালেরও নেই! এ বছর ঈদ-উল-ফিতরের দুদিন আগে কিনেছিলাম ল্যাপটপটি। দুই মাসও ব্যবহার করতে পারলাম না। মনটা ভীষণ রকমের খারাপ হয়ে আছে।...’ ০৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ [email protected]
×