ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

চন্দনকে লাল কার্ড * মোহামেডানের কষ্টার্জিত জয় বাংলাদেশ এসসির বিপক্ষে * এ্যাজাক্স হারালো বীমাকে

হকিতে আবারও গ-গোল

প্রকাশিত: ০৬:৫১, ৫ জুন ২০১৬

হকিতে আবারও গ-গোল

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ‘গ্রিন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স প্রিমিয়ার বিভাগ হকি লীগে’ বড় বাঁচা বেঁচেছে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব লিমিটেড। তারা অতিকষ্টে ৪-৩ গোলে হারিয়েছে বাংলাদেশ স্পোর্টিং ক্লাবকে (বিএসসি)। অপর ম্যাচে এ্যাজাক্স স্পোর্টিং ক্লাবও ঘাম ঝরিয়ে ২-১ গোলে হারিয়েছে সাধারণ বীমা ক্রীড়া সংঘকে। জিতলেও বরাবরের মতোই মোহামেডানের খেলোয়াড়রা এই ম্যাচেও গ-গোল করা থেকে নিজেদের বিরত রাখতে পারেনি। এসব দেখে গ্যালারিতে খেলা দেখতে আসা এক হকিপ্রেমী ক্ষুব্ধ কণ্ঠে জানান, ‘হকিতে মোহামেডান যা করছে, তাতে করে তাদের নিষিদ্ধ করা উচিত!’ খেলার প্রথমার্ধে মোহামেডান ৩-০ গোলে এগিয়ে থাকলেও দ্বিতীয়ার্ধে তাদের চেপে ধরে বিএসসি। টানা তিন গোল করে দারুণভাবে খেলায় ফিরে আসে তারা। কিন্তু সময় শেষ হয়ে গেলে আর সমতায় ফিরতে না পারার আক্ষেপে পুড়তে হয় তাদের। নিজেদের সপ্তম খেলায় এটা পঞ্চম জয় মোহামেডানের। ১৭ পয়েন্ট নিয়ে পয়েন্ট টেবিলের দ্বিতীয় স্থানে তারা। সমান ম্যাচে সমান পয়েন্ট তাদের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনীরও। তবে গোল তফাতে এগিয়ে থাকায় আবাহনীই আছে শীর্ষে। পক্ষান্তরে ৬ ম্যাচে এটা বিএসসির চতুর্থ হার। তাদের সংগ্রহ ৬ পয়েন্ট। এ্যাজাক্স-বীমা ম্যাচে এ্যাজাক্সের প্রশান্ত কুমার জোড়া গোল করেন। দুটিই ছিল ফিল্ড গোল। বীমার জিয়াউর রহমান পিসি থেকে একটি গোল পরিশোধ করেন। ৭ ম্যাচে এ্যাজাক্সের এটা দ্বিতীয় জয়। তাদের পয়েন্ট ৭। সমান ম্যাচে এটা বীমার পঞ্চম হার, পয়েন্ট ৬। শনিবারের ম্যাচে মোহামেডানের এ এইচ এম কামরুজ্জামান (১২ মিনিটে ফিল্ড গোল), আসাদুজ্জামান চন্দন (১৫ মিনিটে পেনাল্টি কর্নার/পিসি থেকে গোল), সালমান হোসেন (১৭ মিনিটে পিসি থেকে গোল) এবং তাসভার আব্বাস (৩৭ মিনিটে ফিল্ড গোল) ১টি করে গোল করেন। মোহামেডান ৮টি পিসি থেকে মাত্র ২টিতে গোল করে। বিএসসির বেলাল ১টি (৫০ মিনিটে ফিল্ড গোল) এবং প্রিন্স (৬৩ ও ৬৯ মিনিটে ফিল্ড গোল) জোড়া গোল করেন। বিএসসি একটি পিসি পেলেও তা কাজে লাগাতে পারেনি। মওলানা ভাসানী হকি স্টেডিয়ামে প্রতিদিনই রংধনু দেখা যায়! কিভাবে? এখন চলছে ‘গ্রিন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স প্রিমিয়ার বিভাগ হকি লীগে’র খেলা। প্রতিদিন খেলার বিরতির সময় নীল টার্ফের চার কোণা দিয়ে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে জল ছিটানো হয়। তখনই দেখা মেলে রংধনুর। শুধু রংধনুই নয়, এই হকি স্টেডিয়ামে দেখা যায় আরও অনেক কিছুই। বিদেশী আম্পায়ার দিয়ে খেলা চালানোর পরও তাদের সিদ্ধান্ত মানছে না খেলোয়াড়রা। শুধু তাই নয়, ম্যাচ চলাকালে খেলোয়াড়দের ছাউনিতে ক্লাব অফিসিয়ালদের প্রকাশ্যে ধূমপান, মোবাইল ফোন ব্যবহারের ঘটনা তো ডালভাত হয়ে গেছে! চোখের সামনে দিনের পর দিন এসব ঘটনা ঘটতে দেখেই দোষীদের বিরুদ্ধে কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থাই নিচ্ছে না হকিপ্রেমীদের ভাষায় ‘মেরুদ-হীন অযোগ্য-অদক্ষ’ হকি ফেডারেশন! যদিও হকি ফেডারেশনের যুগ্মসম্পাদক তানভীর আদেল খান এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘মাঠে যা হয়েছে, তা ন্যক্কারজনক। এতদিন খেলায় যে গোলযোগ হতো, তার বেশিরভাগই ছিল আম্পায়ারদের বিভিন্ন সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে। আর এখন দেখছি খেলোয়াড়রা তাদের নিজেদের মধ্যেই গোলযোগ করছে। এ বিষয়টি অবশ্যই আমাদের মিটিংয়ে তুলবো।’ শনিবারের ম্যাচে দুই দলের খেলোয়াড়দের মারামারিতে জড়িয়ে পড়তে দেখা গেছে, যা এই লীগে প্রথম ঘটলো। ঘটনাটা ঘটে দ্বিতীয়ার্ধের শুরু হওয়ার কিছুক্ষণ পরেই। বল মোহামেডানের সীমানায়। আক্রমণে বিএসসি। তাদের আক্রমণ ভাগের পাকিস্তানী খেলোয়াড় শাহবাজ মোহামেডানের গোলপোস্টে রিভার্স হিট করেন। মোহামেডান গোলরক্ষক রাসেল খান বাপ্পী সেই বল ঠেকান। ফিরতি বলে বিএসসির আরেক পাকিস্তানী সিরাজ আলী হিট নিতে গেলে বাপ্পী আবারও বল সরিয়ে দেন। ইতোমধ্যে দেহের ভারসাম্য রাখতে না পেরে সিরাজ পড়ে গেলে মোহামেডানের ডিফেন্ডার চন্দনও তাল সামলাতে না পেরে সিরাজের ওপর স্টিকসহ পড়ে যান। চন্দন গায়ে-গতরে সিরাজের চেয়ে অনেক মোটা, তাই সিরাজের বেশ কষ্টই হয় চন্দনের ভারি দেহ সামাল দিতে! ঘটনাটা এখানেই শেষ হতে পারতো। কিন্তু তা হয়নি। সিরাজ চন্দনকে সরানোর জন্য নিজের হাতের স্টিক দিয়ে চন্দনকে মেরে বসেন! ব্যস, আর যায় কোথায়! চন্দনও এবার খালি হাতে মুষ্টিযুদ্ধ শুরু করেন, দুই ঘা বসিয়ে দেন সিরাজকে! নিজের ছোটভাইকে মার খেতে দেখে সহ্য করতে পারেননি শাহবাজ। তিনি ছুটে আসেন ভাইকে বাঁচাতে। ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেন চন্দনকে। এদিকে মোহামেডানের বাকি খেলোয়াড় ধরে নেয় দুই ভাই মিলে বুঝি চন্দনকে ‘সাইজ’ করছেন। আর দেরি নয়, রণংদেহী মূর্তি ধারণ করে তারা ছুটে আসে, কয়েকজন বগলদাবা করে ধরে রাখে শাহবাজ-সিরাজুলকে, বাকিরা মিলে পালাক্রমে উপর্যুপরি এলোপাতাড়ি ঘুষি মারতে থাকে দুই ভাইকে। মোহামেডানের যারা এই মারামারিতে অংশ নেয়, তারা হলেন : তুহিন, রানা, রানা জুনিয়র, রুবেল ও ফিরোজ। তবে মোহামেডানের অধিনায়ক রাসেল মাহমুদ জিমি এই দলে ছিলেন না। এই পরিস্থিতিতে তার ভূমিকা ছিল প্রশংসনীয়। তিনি প্রাণপণ চেষ্টা করেন দুই দলের খেলোয়াড়দের মারামারি থেকে নিবৃত্ত করতে।
×