ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

প্রাথমিক শিক্ষা অষ্টম শ্রেণী

প্রকাশিত: ০৩:৪৪, ২২ মে ২০১৬

প্রাথমিক শিক্ষা অষ্টম শ্রেণী

দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় বড় ধরনের মৌলিক পরিবর্তন আনা হয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষার আওতা বাড়িয়ে পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত করার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছে সরকার। বুধবার থেকেই তা কার্যকর হয়েছে। এদিন শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন ও মনিটরিং সংক্রান্ত জাতীয় কমিটির সভায় শিক্ষামন্ত্রী এই ঘোষণা দেন। শিক্ষার সার্বিক ইতিহাসে এটা যে গুরুত্বপূর্ণ ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত তা নিঃসন্দেহে বলা যায়। ২০১০ সালে প্রণীত জাতীয় শিক্ষানীতিতে বিষয়টি জোরালো উল্লেখ থাকলেও চূড়ান্ত পর্যায়ে আসতে সময় লাগল ৬ বছর। শিক্ষানীতিতে বলা হয়েছিল, ২০১৮ সালের মধ্যে প্রাথমিক শিক্ষা স্তর অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত সম্প্রসারিত হবে। এটি ড. কুদরাত-ই-খুদা শিক্ষানীতির আলোকে প্রণীত। বর্তমান আইন অনুসারে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক এবং অবৈতনিক। কিন্তু ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি, ভর্তি ফি ও পরীক্ষা ফি দিতে হয়। শুধু তাই নয়, এতদিন সাধারণ শিক্ষা বোর্ড ও মাদ্রাসার অধীনে থাকা স্কুল-কলেজ এবং মাদ্রাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংযুক্ত পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনেই পরিচালিত হয়েছে। পঞ্চম শ্রেণীর সমাপনী পরীক্ষা এ মন্ত্রণালয়ের প্রতিষ্ঠান প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর গ্রহণ করত। এখন এই সংক্রান্ত বিষয়াদি দেখভাল করবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণী পাঠদানের অনুমতি, একাডেমিক স্বীকৃতি, বিষয় খোলা, বিভাগ খোলা, শ্রেণী-শাখা খোলা, এমপিওভুক্তি, নতুন শিক্ষাক্রম, পাঠ্যপুস্তক এবং শিক্ষক নির্দেশিকাসহ সব শিক্ষা কার্যক্রম এই মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সম্পাদিত হবে। যদিও এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোন পরিকল্পনা বা রূপরেখাও তৈরি করেনি মন্ত্রণালয়। জানা গেছে, এই সিদ্ধান্তের ফলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমতিপ্রাপ্ত দুই হাজার ৩৮১টি নিম্ন মাধ্যমিক প্রতিষ্ঠান প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে চলে যাবে। এর মধ্যে এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠান হচ্ছে মাত্র ৫৫৩টি। এসব প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীর সংখ্যা পাঁচ লাখ ১৭ হাজার ৫৫০। আর শিক্ষক সংখ্যা ১৯ হাজার ২৪০। অন্যদিকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় বর্তমানে ৬৩ হাজারের বেশি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় দেখভাল করে। ছয় বছর আগে জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়নের পর দেশের শিক্ষানুরাগী মহলে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছিল। এবারও বাস্তবায়নের মাধ্যমে তা পূর্ণতা পেল। এখন লক্ষ্য রাখতে হবে, তা যেন পূর্ব প্রস্তুতিহীন না হয়। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পাঠদান করতে হলে বিদ্যালয়ের অবকাঠামো বাড়াতে হবে। পর্যাপ্ত শ্রেণীকক্ষ, আসবাব ও সরঞ্জামের প্রয়োজন হবে। হাতেগোনা শহরের কয়েকটি স্কুল ছাড়া দেশের বেশিরভাগ গ্রামের স্কুলগুলোর চিত্র প্রায় একই রকম। যে শিক্ষকরা এতদিন পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াতেন, তারাই অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষা যথাযথভাবে দিতে সক্ষম হবেন কি-না, তাও বিবেচনা করতে হবে। আনুপাতিক হারে বাড়াতে হবে শিক্ষক ও কর্মচারীর সংখ্যাও। আরেকটি বড় বিষয় হলো কারিকুলাম প্রণয়ন। ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণীর যে কারিকুলাম আছে তা এসএসসি পরীক্ষাকে সামনে রেখে করা। শিক্ষার্থীরা এখন অষ্টম শ্রেণীতেই টার্মিনাল সার্টিফিকেট পাবে। সেই সার্টিফিকেটটি যেন কর্মক্ষেত্রে কাজে সেভাবে কারিকুলাম সাজাতে হবে। শিক্ষক প্রশিক্ষণ ও শিক্ষা প্রশাসন চালানোর ব্যাপারটিতেও গুরুত্ব দিতে হবে। এসব বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সমন্বয় একটি বড় বিষয়। শিক্ষানীতির যথাযথ বাস্তবায়ন সবাই চায়, কিন্তু তা করতে গিয়ে যেন শিক্ষার্থীরা ভোগান্তি বা হয়রানির শিকার না হয়, সেদিকেও দৃষ্টি রাখতে হবে। এমনিতেই প্রাথমিক শিক্ষার একটা রুগ্ণ চেহারা রয়েছে। এই চেহারার পরিবর্তন না হলে এই উদ্যোগ ব্যাহত হতে পারে। তাহলে আমাদের উচ্চশিক্ষাও মুখথুবড়ে পড়বে। প্রাথমিক শিক্ষাকে মানসম্মত করতে এখনই কার্যকর উদ্যোগ নেয়া দরকার।
×