ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

আবার নিজামীরা

প্রকাশিত: ০৪:১১, ৯ জুলাই ২০১৫

আবার নিজামীরা

একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীরা পরাজয়ের প্রতিশোধে এখনও হত্যাযজ্ঞ অব্যাহত রাখার ব্রতে নানাবিধ অস্ত্রসহ সরঞ্জামাদির ঘাঁটি তৈরি করছে নতুন করে। বিএনপি-জামায়াত জোটের ঈদ-পরবর্তী ‘গণঅভ্যুত্থান’ নামক নাশকতার নয়া কর্মসূচী বাস্তবায়নের জন্য তারা দেশজুড়ে জঙ্গী শিবির গড়ে তুলেছে। বিস্ফোরকদ্রব্যর গুদাম গড়ে তুলেছে দেশের নানাস্থানে। একেকটি শিবির মূলত. ছোট ছোট সেনা ছাউনি যেন! সামরিক প্রশিক্ষিত জঙ্গীদের পৃষ্ঠপোষকতা বিএনপি-জামায়াত জোট ২০০১ সাল হতে করে আসছে। ক্ষমতায় থাকাকালে তারা গ্রেনেড বিস্ফোরণ ঘটিয়ে শেখ হাসিনাকে হত্যার প্রচেষ্টা চালায়, এতে শতাধিক ব্যক্তিকে হতাহত হয়। এ ছাড়া তাদের শাসনামলে জঙ্গীরা একযোগে সারাদেশে বোমাহামলা চালিয়েছে। বাংলাভাইকে দিয়ে জঙ্গীগোষ্ঠী গড়ে তুলে জঙ্গীশাসন চালুর চেষ্টা করা হয় দেশের কয়েকটি এলাকায়। এ সময় রাজনীতির পথ ছেড়ে বোমাবাজি, মানুষ হত্যার পথ ধরে হাঁটে ওরা। ২০১৩ সাল হতে তারা নাশকতা, নারকীয়তা, নিমর্মতার পথে সশস্ত্র কর্মসূচীতে অভ্যস্থ হয়ে পড়েছে। ২০১৪ ও ২০১৫ সালে পেট্রোলবোমার চর্চা চালিয়ে শতাধিক মানুষ হত্যাসহ সম্পদহানি ঘটিয়ে অরাজকতা ও নাশকতার বিস্তারে সক্রিয় থাকে জঙ্গীরা। জনগণের তীব্র ক্ষোভ ও রোষের মুখে তারা এক সময় হটতে বাধ্য হয়। কিন্তু জঙ্গীপনা হতে পুরোপুরি সরে যায়নি। বরং তারা গোপনে সংগঠিত শুধু নয়, বোমা তৈরির সরঞ্জামাদির আড়ত গড়ে তুলে। ঈদের পর তারা নয়া উদ্যমে বোমাবাজিসহ নাশকতার পরিকল্পনায় বিস্ফোরকদ্রব্য সরবরাহ করছে তাদের ঘাঁটিগুলোতে। এরই মধ্যে ১২শ’ কেজি বিস্ফোরক উদ্ধার হয়েছে ঢাকা ও চট্টগ্রাম হতে। এই বিস্ফোরক দিয়ে ১২ লাখ বোমা নির্মাণ করা যায়। এগুলো দিয়ে কত প্রাণ যেতে পারত তা ভাবলে আতঙ্কিত হতে হয়। বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক আনা হয়েছিল ২০০১-২০০৬ সময়ে ক্ষমতাসীনদের উদ্যোগে। যখন ১০ ট্রাক অস্ত্র ধরা পড়ে, তখন স্পষ্ট হয় যে, ক্ষমতাসীনরা এই অস্ত্র আমদানি ও পাচারে জড়িত। সেই মামলা এখনও বিচারাধীন। যার সঙ্গে বিএনপি-জামায়াত জোটের মন্ত্রী এবং গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জড়িত। একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসির দ-াদেশপ্রাপ্ত আলবদর প্রধান ও জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর আছর যেন আর ছাড়ছে না। তিনি খালেদার শিল্পমন্ত্রী থাকাকালে বিস্ফোরকদ্রব্য আমদানি করা হয়েছিল। জিয়া কারখানাতে ব্যবহারের জন্য কেনা প্রায় ১২শ’ টন সালফার, যা গায়েব করা হয় ভুয়া ভাউচারের মাধ্যমে। স্টোর কিপার হিসেবে নিজামী নিয়োগ দেন জেএমবির এক নেতাকে। তাকে দিয়েই এসব সরানো হয়। এসবই জামায়াত-শিবির ও জঙ্গীদের মধ্যে বণ্টন করা হয়। সম্প্রতি উদ্ধার করা বিস্ফোরকের মধ্যে রয়েছে সালফার, লিথিয়াম ও হেক্সাক্লোরাইড নামের রাসায়নিক পদার্থ, যা বোমার মূল উপকরণ। বড় ধরনের কোন নাশকতা চালাতেই এসব মজুদ করা হয়েছে বলে র‌্যাব বলছে। আলবদর নেতা নিজামী ও মুজাহিদের ফাঁসির আদেশ বাতিল করা ও কারাগার থেকে তাদের মুক্ত করার জন্য জামায়াত ও জঙ্গীরা দীর্ঘদিন ধরে তৎপর। শীঘ্রই তাদের রায় কার্যকর হতে যাচ্ছে। তার আগেই দেশজুড়ে নাশকতা চালিয়ে ঘোলাটে পরিস্থিতি তৈরি করার লক্ষ্যে নিজামী অনুসারীরা এসব তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে। দেশব্যাপী জঙ্গী জামায়াতীদের ঘাঁটিগুলো নির্মূল করার জন্য সচেষ্ট হওয়া দরকার।
×