ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সঞ্চয়পত্রের মুনাফা

প্রকাশিত: ০৩:৪৩, ২৩ জুন ২০১৫

সঞ্চয়পত্রের মুনাফা

পাঁচ বছর মেয়াদী সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার প্রায় দুই শতাংশ কমিয়ে ১১ দশমিক ১৯ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। সঞ্চয়পত্র থেকে সরকার ৯ হাজার ৫৪ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরেছে। বলা চলে, বাজেট ঘাটতি মেটাতেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এতদিন এ সঞ্চয়পত্র কিনলে ১৩ দশমিক ২৬ শতাংশ হারে মুনাফা পাওয়া যেত। সমাজের বহু মধ্যবিত্ত পরিবার এবং বিশেষ করে অবসর গ্রহণের পর বহু মানুষের এই সঞ্চয়পত্রের মুনাফার ওপর নির্ভর করে সংসার চলছে। সরকারের এই সিদ্ধান্তে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হবে মধ্য ও নিম্ন আয়ের সাধারণ মানুষ। এতদিন পাঁচ বছর মেয়াদী পরিবার সঞ্চয়পত্রে সুদ বা মুনাফা ছিল ১৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ। পেনশনার সঞ্চয়পত্রে ১৩ দশমিক ১৯ শতাংশ, বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রে ১৩ দশমিক ১৯ শতাংশ ও তিন বছর মেয়াদী তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রে ১২ দশমিক ৫৯ শতাংশ মুনাফা দেয়া হতো। আর তিন বছর মেয়াদী ডাকঘর সঞ্চয় ও ব্যাংক মেয়াদী সঞ্চয়পত্রের মুনাফার ছিল ১৩ দশমিক ২৪ শতাংশ। এ ব্যাপারে অর্থমন্ত্রীর যুক্তিÑ সুদের হার বেশি হওয়ায় সঞ্চয়পত্রের বিক্রি অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যায়। এটা চলতে থাকলে এ খাতে বিনিয়োগ আরও বেড়ে যাবে। সরকারের ভবিষ্যত ঋণের বোঝাও বেড়ে যাবে। সঞ্চয়পত্রের ওপর মুনাফার হার কমানোর কারণে অনেকের মতো সমালোচনা করেছেন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীও। তিনি বলেছেন, ‘এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন লাখ লাখ সাধারণ মানুষ।’ এমনিতেই ব্যাংক আমানতের ওপরও মুনাফার হার কম। মধ্যবিত্তের চিন্তামুক্ত আয়ের পথ এটি। এদের আয় হ্রাস করলে বাজার অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কারণ বাজারে তারাই ক্রেতা। তাদের কাছে টাকা না থাকলে ভোগ বাড়বে কিভাবে? মধ্যবিত্তদের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি না করলে দেশের জিডিপিও বাড়বে না। তাই সংবাদটি সাধারণ মানুষের কাছে এক প্রকার দুঃসংবাদই বলা চলে। সঞ্চয়পত্র মূলত স্বল্প আয়ের মানুষের নির্ভরতার জায়গা। এই একটি খাতে সাধারণ মানুষ চোখ বন্ধ করে বিনিয়োগ করেন। শেয়ারবাজারে ধস নামার বাস্তবতায় দেশের নিম্ন আয়ের মানুষ প্রধানত এই খাতেই বিনিয়োগ করে থাকেন। মূলত কোন ধরনের ঝুঁকি না থাকায় এবং বেশি লাভের জন্য বহু নাগরিক এ খাতে ঝুঁকেছেন। বিশেষ করে ব্যাংকগুলো আমানতের সুদের হার কমানোয় এমনটা ঘটেছে। অবসরভোগী চাকরিজীবী, প্রবাসী ও সমাজের বিশেষ জনগোষ্ঠীর ভেতর সঞ্চয়পত্র ক্রয়ের প্রবণতা বেশি। মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষ তার সারা জীবনের সঞ্চয়ের বড় অংশ এই খাতেই বিনিয়োগ করে থাকেন ঝুঁকিহীনভাবে লাভের আশায়। সরকার নির্ধারিত মুনাফার হারের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে যে নাগরিকরা সঞ্চয়পত্র কিনেছেন এখন আকস্মিকভাবে মুনাফার হার কমালে নিশ্চিতরূপেই তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, যা সরকারের জন্য সুখকর হবে না। বাস্তব অবস্থা বিবেচনায় সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার কমানোর সিদ্ধান্তটি পুনর্বিবেচনা করা দরকার। এতে উপকৃত হবে দেশের মোট জনসংখ্যার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ। কারণ এই আমানত তাকে নিরাপত্তা দেয়। তাই মানুষ রাষ্ট্র তথা সরকারের কাছ থেকেই এই অর্থনৈতিক নিরাপত্তা প্রত্যাশা করে।
×