ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অযৌক্তিক হরতাল

প্রকাশিত: ০৫:২৪, ৭ নভেম্বর ২০১৪

অযৌক্তিক হরতাল

’৭১-এ জামায়াতে ইসলামী মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল। আপামর মুক্তিকামী মানুষের বিপক্ষে গিয়ে পাক হানাদার বাহিনীর সঙ্গে একাত্ম হয়ে হত্যা, নির্যাতন, ষড়যন্ত্র, নারী ধর্ষণ সর্বোপরি বুদ্ধিজীবী হত্যার মতো অমানবিক নৃশংস অপরাধ করেছিল এই নরপশুরা। স্বাধীনতার পর দেশবিরোধী কর্মকা-ের জন্য তাদের বিচার শুরু হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর দালাল আইন বাতিল করা হয়। জামায়াতকে রাজনীতি করার সুযোগ দেয়া হয়। দীর্ঘদিনের রাজনীতি করার সুযোগে এবং ক্ষমতার অংশীদার হয়ে থাকার কারণে তারা শক্তি সঞ্চয় করে। তারা সহজ-সরল ধর্মপ্রাণ মানুষকে ধর্মের দোহাই দিয়ে বিভ্রান্ত করে জাতির মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেছে। তারা ভেবেছিল এভাবেই তারা পার পেয়ে যাবে। দেরিতে হলেও যখন মানবতাবিরোধী এই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হয়েছে এবং সাজা পাচ্ছে তখন তারা এই বিচারের রায়কে প্রত্যাখ্যান করে হরতাল করছে। এতে তারা দেশবিরোধী কাজ করছেÑ যা তারা করেছিল ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের সময়। নিজামী, মীর কাশেম ও কামারুজ্জামানের রায়ের পর সপ্তাহব্যাপী হরতাল জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়েছে। সর্বস্তরের মানুষ যেখানে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে ট্রাইব্যুনাল ও আপীল বিভাগের রায়কে স্বাগত জানিয়েছে তখন জামায়াতে ইসলামী এই রায়ের বিরুদ্ধে একের পর এক হরতাল ডেকে যাচ্ছে। এই হরতাল শুধু অনৈতিক নয়, এর মাধ্যমে দেশবিরোধী এই দলটি দেশের প্রচলিত বিচার ব্যবস্থাকে অবজ্ঞা করার সাহস দেখাচ্ছে। তাদের এই হরতালে মানুষ ক্ষুব্ধ। কেননা নবেম্বরে স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষাসহ অন্য গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষাগুলো অনুষ্ঠিত হয়। স্কুল-কলেজের নিয়মিত ক্লাস ও পরীক্ষা নিয়েও উদ্বেগে পড়েছে দেশের প্রায় চার কোটি শিক্ষার্থী। বার বার পরিবর্তিত হয়েছে জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষাসূচী। এখনও পরীক্ষা শুরু হয়নি। হরতাল কেউ মানছে না। সাধারণ মানুষ সকাল থেকেই কর্মব্যস্ত দিন অতিবাহিত করছে। তার পরও পূর্বের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে জামায়াত-বিএনপির হরতাল মানেই নাশকতা, অগ্নিসংযোগ আর বোমাবাজি। তাই জনমনে এই ভীতিকর আশঙ্কার কারণে ক্ষতি হচ্ছে সারাদেশের অর্থনীতির। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে এই হরতাল করা হচ্ছে দেশের আইন ও বিচার ব্যবস্থাকে অবমাননা তথা অস্বীকার করে। জামায়াত এসব করে কিছুই অর্জন করতে পারবে না। কেননা দেশের মানুষ এটা বুঝতে পেরেছে এই মানবতাবিরোধীদের বিচার না হলে দেশ কলঙ্কমুক্ত হবে না। আর অপরাধীদের বিচার হবে না সেটা কোন দেশের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় গ্রহণযোগ্য নয়। তাই দেশের সর্বমহল থেকে দলটি নিষিদ্ধ করার দাবি উঠেছে। ইতিহাস কাউকে কখনও ক্ষমা করে না। তাই ন্যায় বিচারের প্রতি আস্থা বাড়াতে, ন্যায় বিচারকে প্রতিষ্ঠিত করতে এখনই দলটিকে নিষিদ্ধ করা উচিত। শুধু তাই নয়, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করার পাশাপাশি দলটির বিচার করা উচিত। এই অপরাধীদের বিচারে সর্বোচ্চ শাস্তি দেয়ার জন্য গণজাগরণ মঞ্চ ছিল সোচ্চার। পরবর্তীতে সর্বসাধারণ তাদের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। গণমানুষ এ রায়ে খুশি। রায়ের প্রতিক্রিয়ায় রাস্তায় রাস্তায় মানুষ নেমে আনন্দ মিছিল করেছে, মিষ্টি বিতরণ করে উল্লাস প্রকাশ করেছে অথচ জামায়াত হরতাল ডেকে দেশে অস্থিতিশীল অবস্থার সৃষ্টি করার চেষ্টা চালাচ্ছে। ৩০ লাখ প্রাণের বিনিময়ে ও দুই লাখ নারীর সম্ভ্রমের বিনিময়ে যে স্বাধীনতা সেই দেশে হরতাল ডেকে রায় ঠেকানো যাবে না। দেশের মানুষ এখন সচেতন। মানুষ হরতাল প্রত্যাখ্যান করেছে।
×