
ছবি: জনকণ্ঠ
হাঁটুর পানি কিংবা কোমর সমান পানির ভেতর দাঁড়িয়ে জমি থেকে উঠছে একেকটি দৈত্যাকৃতির কচু। মাটির গা থেকে তুলে পাতা ছেঁটে আঁটি বাঁধার কাজ শেষ হলে তা চলে যাচ্ছে সিএনজি বা ভ্যানে করে হাটে, সেখান থেকে ঢাকার কাওরান বাজার কিংবা চট্টগ্রামের রেস্টুরেন্টে। এসব দৃশ্য এখন চট্টগ্রামের মীরসরাই উপজেলার প্রায় প্রতিটি গ্রামেই চোখে পড়ে বর্ষা মৌসুমে। উপজেলার অনেক গ্রামে কচু আবাদ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন শত শত কৃষক। এই এলাকায় বর্ষাকালীন সময়ে কচু চাষের জন্য যথেষ্ট উপযোগী হওয়ায় উপজেলা পর্যায়ে বিভিন্ন স্থানে মুখিকচু, লতিরাজ কচু, ওল কচু, পানি কচু সম্প্রসারণ করতে কৃষকদের উপকরণ, প্রশিক্ষণ দিচ্ছে কৃষি বিভাগ। কম খরচে লাভ বেশি হওয়ায় আগ্রহী কৃষকের সংখ্যা দিন-দিন বাড়ছে।
জানা গেছে, উপজেলার মঘাদিয়া ইউনিয়নের একটি ও হাইতকান্দি ইউনিয়নের একটি গ্রামের নামই কচুয়া। এই কচুয়া গ্রামের কয়েক শত পরিবার এই শ্রাবণ-ভাদ্র মাসের বর্ষার দিনে ব্যস্ত থাকে শুধু বড় বড় বিশাল কচু ও কচু থেকে প্রাপ্ত সবজি বাজারজাতকরণে। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে একেক কচু চাষির ক্ষেত থেকে হাজার হাজার কচু তুলে নিচ্ছেন কৃষকরা। কোথাও কোমর পানি, কোথাও হাঁটুর উপরের পানিতে দাঁড়িয়ে জমি থেকে বড় বড় কচুগুলো কেটে, উপরের কিছু পাতা ছেঁটে বিশালাকার কচু স্তূপাকারে চলে যাচ্ছে ৫০-১০০টির আঁটিতে। সেখান থেকে সিএনজি বা ভ্যানে করে মহাসড়কের হাটে। সেখান থেকে পাইকারদের ট্রাকে চড়ে ঢাকা-চট্টগ্রামের বিভিন্ন শ্রেণির হোটেল-রেস্তোরাঁ ও বাজারে।
কচুয়া গ্রামের পাশাপাশি উপজেলার ১৬ ইউনিয়ন ও দুটি পৌরসভার প্রায় অনেক গ্রামে এখন কচু চাষ করছেন কৃষকরা। মীরসরাইয়ের আবাদকৃত কচুর যথেষ্ট সুনাম আছে। তাই এখানকার কচু বাজারে সমাদৃত বেশ। মীরসরাই-মলিয়াইশ সড়কের পাশে মধ্যম মঘাদিয়ার কালামিয়া দোকান এলাকায় কৃষক রিয়াজ উদ্দিন সাইফুল দেড় লক্ষ টাকা খরচ করে ৬০ শতক জমিতে ৮ হাজার কচুর আবাদ করেছেন। এসময় জমির একাংশের কচু উত্তোলন করছিলেন চাষি রিয়াজ উদ্দিন সাইফুল, মোঃ চাঁন মিয়াসহ অনেকে।
কৃষক রিয়াজ উদ্দিন সাইফুল বলেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় বর্তমান বাজারদর হিসেবে কচুর দাম কিছুটা কম হলেও প্রতিটি কচু পাইকারি ৪০-৫০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া পূর্বে কচুর লতি বিক্রি করে ৭০ হাজার টাকা এবং কচু ফুল বিক্রি করেছি ৩৫ হাজার টাকার মতো। মোট কচু বিক্রি হবে এবার প্রায় তিন থেকে চার লাখ টাকার মতো। তবে অর্ধেক চলে যাবে চাষাবাদ, শ্রমিক ও যাতায়াত ব্যয়ে।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ চন্দ্র রায় জানান, কচু চাষে বিঘাপ্রতি খরচ হয় প্রায় ৩০ হাজার থেকে ৩২ হাজার টাকা। শুধু কচু বিক্রি করে গড়ে টাকা আসে ৮০ হাজার থেকে ৯০ হাজার টাকা। এতে মৌসুম শেষে বিঘাপ্রতি লাভ হয় প্রায় ৬০-৭০ হাজার টাকা। কচু চাষ কেবল আর্থিকভাবে লাভজনক নয়, এটি আয়রনসমৃদ্ধ সবজি যা শিশু ও গর্ভবতী মায়েদের পুষ্টি নিরাপত্তায় দারুণ ভূমিকা রাখে।
মুমু ২