ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৮ জুলাই ২০২৫, ২ শ্রাবণ ১৪৩২

অপরাজিতা

এবারও ছাত্রীরা এগিয়ে

নাজনীন বেগম

প্রকাশিত: ১৮:০৯, ১৭ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ১৮:১৬, ১৭ জুলাই ২০২৫

এবারও ছাত্রীরা এগিয়ে

এবারের মাধ্যমিকের ফলাফলে বিভিন্ন বোর্ড আশানুরূপ কৃতিত্ব দেখাতে পারেনি। গড় পাসের হার ৬৮%। জিপিএ-৫ পাওরা শিক্ষার্থী ১ লাখ ২৫ হাজার। শিক্ষা জীবন সব শিক্ষার্থীর জন্য গুরুত্ব মাধ্যম। যা সুচিন্তিত এক পাঠক্রমের ধারাবাহিকতা। তবে পাসের হার কমেছে। যা গত ১৫ বছরের ইতিহাসকে পেছনে ফেলে দেয়। তবে ছাত্রীদের সাফল্যে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক, অভিভাবক আর কৃতকার্য হওয়া শিক্ষাথীরাও খুশি, আনন্দিত। সিলেবাস এবং নম্বরে কোনো তারতম্যই ছিল না বলে জানা যায়। তা ছাড়া এই বছর পরীক্ষার্থীরা সময়ও বেশি পেয়েছে। এক বছর অনেক বড় সময় হলেও ভুললে চলবে না যে কোনো সময়োচিত কার্যক্রমে বিচ্যুতি কিংবা বিঘ্নতা কোনোভাবেই প্রত্যাশিত নয়। গত বছরের তুলনায় ১৫.৪২ শতাংশ পাসের হার কমে যাওয়া শিক্ষার্থীদের জন্য বিঘ্নতার জাল বলা যেতে পারে। উত্তীর্ণের হার যদি নিম্নগামী হয় তা হলে কৃতিত্বের সংখ্যা কমার আশঙ্কা থেকেই যায়। যা এবারের ফলাফলে প্রকাশ পাওয়া পরিস্থিতির অপরিহার্যতা। বিভিন্ন কারণে ফলাফল বিপর্যয়ে ২০২০ সালের করোনা মহামারির আঁচড় এক দুঃসহ বাতাবরণ। চরম ছোঁয়াছে করোনা মহামারিকে দূরে রাখতে সবার আগে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। অগণিত শিক্ষার্থীর জীবনে শুধু মহামারির ভয় নয় শিক্ষার প্রাতিষ্ঠানিক বলয়ের রুদ্ধজাল কোনোভাবেই হিতকর ছিল না বলে সংশ্লিষ্ট অভিভাবক, শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের উদ্বিগ্ন, উৎকণ্ঠায় ফেলে দেয়। শিক্ষা-ব্যবস্থা এমন এক ধারাবাহিক কর্মযোগ, যার ব্যত্যয় কিংবা ন্যূনতম ব্যবচ্ছেদ পুরো ব্যবস্থাপনাকে নাড়িয়ে দেয়। যা কি না সুদূরপ্রসারী কর্মযোগকে হরেক বিপন্নতায়ও আটকিয়ে রাখে। 
ফলে বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থাকে নাজুক অবস্থার দিকে নিয়ে যায় বলে বিজ্ঞজনরা অভিমত ব্যক্ত করছেন। তা ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ বিষয় গণিতে শিক্ষার্থীরা আশঙ্কাজনকভাবে পেছান। সেখানে আরও উঠে আসছে পরীক্ষার খাতা দেখার সময়ও নজরদারি, কড়াকড়ি সবই বেড়েছে। তবে পাস- ফেলের চাইতেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা কর্মযোগ আর পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের নিবেদিত এবং সচেতন উপলব্ধি বাড়ছে কি না সেটাই খতিয়ে দেখা জরুরি। শুধু কি গণিত? ইংরেজিতেও শিক্ষার্থীদের কম নম্বর পাওয়া ফলাফলের বিপর্যয়কে আরেক মাত্রা দিয়েছে। বিজ্ঞান বিভাগে পদার্থ বিজ্ঞানের মতো প্রয়োজনীয় বিষয়ে অকৃতকার্য পাসের হারকে নিম্নগামী করে দেয়। বলা হচ্ছে গত ১৬ বছরের রেকর্ড ভঙ্গ করে এবারের ফলাফল। 


দেশের ১৩৪টি বিদ্যালয়ে সবাই নাকি পাস করতে পারেনি। আর ১৮৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শতভাগ পাসের নজির উঠে এসেছে। 
তবে ছাত্রীরা এগিয়ে আছে বরাবরের মতো এটাও কম সাফল্য নয় কিন্তু। সামাজিক হরেক বিশ্ঙ্খৃল পরিস্থিতিতে ছাত্ররা যেভাবে জড়িয়ে পড়ে। ছাত্রীরা কিন্তু পারিবারিক শাসনের ঐতিহ্যিক বেড়া জালে ঘরেই থাকে। যা তাদের পাঠাভ্যাস থেকে সেভাবে বিচ্ছিন্নও করতে পারে না। তবে ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান খুব আশান্বিত হয়ে প্রতিক্রিয়া জানান- এটাই নাকি আসল ফলাফল। যা গত ১৬ বছরের তুলনায় পরীক্ষার্থীর মান যাচাইয়ে যথাযথ কার্যক্রম নিশ্চিত করেছে। ষোলো বছরের হরেক বিপন্নতায় জাতির মেরুদণ্ড শিক্ষা কার্যক্রম যেভাবে পথ হারানো আশঙ্কায় থেকেছে। এবার যে তার থেকে দায়মুক্তি জাতিকে স্বস্তিও দিচ্ছে। আর মেয়েদের এগিয়ে থাকার যথার্থ কারণ পাঠে তাদের যথেষ্ট মনোযোগ আর পরীক্ষা নিয়ে এক শৃঙ্খলাবদ্ধ পড়া-লেখার পরম নিবেদন। ফলাফল যা হওয়ার তাই হয়েছে। তাকে মেনে নিয়ে পরবর্তীতে নতুন উদ্যমে ঝাঁপিয়ে পড়া বদলে যাওয়া বাংলাদেশকে সমতার ভিত্তিতে আরও এগিয়ে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থেকেই যাবে। মাধ্যমিক যে কোনো শিক্ষার্থীর জীবনে শিক্ষা কার্যক্রমের একটি বড় মাইলফলক। সবচেয়ে কঠিন পর্যায় বললেও অত্যুক্তি হয় না। সাফল্যের পর যে কোনো শিক্ষার্থী তার জীবনের লক্ষ্যকে সামনে নিয়ে আসতে পারে। আমাদের সিংহভাগ গ্রামের অবোধ বালিকাদের বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয়। সেখানে আরও সচেতন সাবধানতায় তাদের হাতে বই তুলে দিয়ে বিদ্যালয়ে পাঠানো অনেক জরুরি বলে বারবার সতর্ক বাণী উচ্চারণ করা হচ্ছে। 
একবিংশ শতাব্দীর তৃতীয় দশকের মধ্যগগনে আজও বালিকাদের বধূবেশে স্বামীর ঘর করতে চলে যেতে হয়। সম্ভাবনাময় শিক্ষার জীবনকে পেছনে ফেলে। এবার মাধ্যমিক পরীক্ষার নতুন সময়কে যেন বরমাল্য দেওয়া। এমনিতে সমসংখ্যক নারীর নিরাপত্তার বলয় সুষ্ঠু আর স্বাভাবিক থাকেই না। শিশু-কন্যারাও কত নির্যাতন-নিপীড়নের আবর্তে হিমশিম খায় তাও গণমাধ্যমের পাতা ভারি করে তোলে। শুধু পাস নয় মেধা ও কৃতিত্বে ছাত্রী সফলতা পরবর্তী প্রজন্মকে প্রাণিত করুক।  আর অভিভাবকরাও যেন শিক্ষায় পুত্র-কন্যার বিন্দুমাত্র তারতম্য না করেন। তেমন দৃষ্টান্ত বাংলার ঘরে ঘরে দৃশ্যমান হোক।  

প্যানেল/মো.

×