ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৯ মে ২০২৫, ১৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

পদ্মার ভাঙন আতঙ্কে লঞ্চ-ফেরিঘাট ও জনপদ

শফিকুল ইসলাম শামীম, নিজস্ব সংবাদদাতা, রাজবাড়ী

প্রকাশিত: ১২:৪৩, ২৭ মে ২০২৫

পদ্মার ভাঙন আতঙ্কে লঞ্চ-ফেরিঘাট ও জনপদ

ছবি: জনকণ্ঠ

পদ্মার ভয়াল থাবায় আবারও অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নৌ-যোগাযোগ কেন্দ্র দৌলতদিয়া ঘাট। প্রতিবছর বর্ষা এলেই পদ্মা যেন গিলে খাওয়ার জন্য ধেয়ে আসে এই ঘাট এলাকা, ফেরিঘাট, লঞ্চঘাট পার্শ্ববর্তী জনপদের দিকে। এবারও ভাঙনের আগাম বার্তা মিলছে, অথচ আগাম প্রতিরোধে কর্তৃপক্ষের কার্যকর কোনো তৎপরতা নেই।

সরেজমিনে দেখা যায়, দৌলতদিয়ার , নম্বর ফেরিঘাট এবং লঞ্চঘাট এলাকা সরাসরি নদী ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে। নদীর উজান ভাটির দিকে থাকা বসতবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং আবাদি জমি রয়েছে মারাত্মক ঝুঁকিতে। প্রতিবছর নদীর পাড় ভেঙে ভেঙে দৌলতদিয়ার মানচিত্র ছোট হয়ে আসছে। হারিয়ে যাচ্ছে শত শত পরিবারের বসতভিটা, স্মৃতি জীবনের মূলধন।

নদীভাঙন শুরু হলে তড়িঘড়ি করে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলার কাজ করা হয়, কিন্তু ততক্ষণে অনেকটা ক্ষয়ক্ষতি হয়ে যায়। স্থায়ী প্রতিরোধ ব্যবস্থা না থাকায় প্রতিবছর একই দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি ঘটে। স্থানীয়রা অভিযোগ করছেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ শুধু প্রতিক্রিয়াশীল; প্রস্তুত নয়, প্রতিরোধমূলক উদ্যোগ নেই। নদীভাঙনের শিকার পরিবারগুলো চরম অসহায়তা অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে।

রাজবাড়ী জেলার দৌলতদিয়ামানিকগঞ্জ জেলার পাটুরিয়া নৌরুট দেশের অন্যতম ব্যস্ততম নৌপথ। প্রতিদিন দৌলতদিয়া ঘাট থেকে প্রায় হাজার এবং পাটুরিয়া ঘাট থেকে প্রায় হাজারসহ মোট হাজার যানবাহন, হাজার হাজার যাত্রী পণ্য পারাপার হয় এই রুট দিয়ে। ভাঙনের কারণে ঘাট স্থানান্তরের প্রয়োজন দেখা দিলে পুরো নৌপথে সংকট দেখা দেয়। এতে অর্থনৈতিক ক্ষতির পাশাপাশি জনদুর্ভোগ চরমে পৌঁছে।

দৌলতদিয়া লঞ্চঘাট এলাকার বাসিন্দা বদিউজ্জামান টোকন বলেন, “প্রতি বছর ভাঙনের মুখে পড়ে আমাদের ঘরবাড়ি চলে যায় নদীর মধ্যে। সরকার যদি আগাম ব্যবস্থা নিত, তাহলে এত ক্ষতি হতো না।

একই সুরে কথা বলেন দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য উজ্জ্বল হোসেন বাবু, “আমরা চাই স্থায়ী বাঁধ, যাতে অন্তত সন্তানদের ভবিষ্যৎ রক্ষা করতে পারি।

নবীন মোল্লা নামের এক ব্যক্তি বলেন, “১০১৫ বছর ধরে বর্ষা মৌসুমে পদ্মা নদীর ভাঙন চলছে। কিন্তু স্থায়ী নদী শাসনের কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ঘাট এলাকায় ভাঙন দেখা দিলে শুধু তখনই কিছু বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলেই কর্তৃপক্ষ দায়িত্ব পালন করে।

জলবায়ু পরিবর্তন, অব্যবস্থাপনা এবং অপরিকল্পিত ড্রেজিংকে নদীভাঙনের প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, সময়োপযোগী পরিকল্পনা টেকসই নদী ব্যবস্থাপনা ছাড়া দৌলতদিয়ার ভবিষ্যৎ আরও অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।

প্রতিবছরের মতো এবারও যদি পদ্মার ভাঙনকে অবহেলা করা হয়, তবে শুধু দৌলতদিয়া ঘাট নয়ভাঙন গিলে খাবে মানুষের আশা-ভরসা, জীবন জীবিকা। এখনই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নিলে ভবিষ্যতের ইতিহাসে দৌলতদিয়া থাকবে কেবল মানচিত্রের অতীতে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) দৌলতদিয়া ঘাট শাখার ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) মো. সালাহ উদ্দিন জানান, পুরো দৌলতদিয়া ঘাট এলাকাই নদীভাঙনের আশঙ্কায় রয়েছে। তবে বর্তমানে ৭টি ফেরিঘাটের মধ্যে মাত্র ৩টি ঘাট সচল আছে, নম্বর ফেরিঘাট দিয়ে যানবাহন পারাপার চলছে।

মুমু

×