ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ৩১ জুলাই ২০২৫, ১৬ শ্রাবণ ১৪৩২

মুঘল আমলে নির্মিত মসজিদের ৪২ বিঘা সম্পত্তি ভূমিদস্যুর দখলে

শাকিল আহমেদ, রংপুর

প্রকাশিত: ১৭:৫০, ৩০ জুলাই ২০২৫

মুঘল আমলে নির্মিত মসজিদের ৪২ বিঘা সম্পত্তি ভূমিদস্যুর দখলে

প্রায় ৩০০ বছর আগের মুঘল আমলে নির্মিত রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার পলিপাড়া মাসিমপুর জামে মসজিদ। তৎকালীন স্থানীয় বাসিন্দা হাজী তকের মোহাম্মদ মসজিদের নামে ৪২ বিঘা জমি ওয়াকফ করেন। কিন্তু বর্তমানে ওই জমিগুলো দখল করে রেখেছেন মৃত ময়নুল হক সরকারের ছেলে জোয়ারদার হোসেন লিটন। জমিগুলো নিয়ে আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তিনি পেশিশক্তির জোরে সেগুলো দখলে রেখেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ অবস্থায় স্থানীয় মুসল্লিরা সরকারি হস্তক্ষেপ এবং মসজিদের সম্পত্তি রক্ষা ও তদারকির দাবি জানিয়েছেন।

স্থানীয় সূত্র ও অনুসন্ধানে জানা গেছে, ঐতিহ্যবাহী পলিপাড়া মাসিমপুর জামে মসজিদের নামে থাকা ৪২ বিঘা সম্পত্তির আয় দিয়েই মসজিদের উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু জমিদাতা হাজী তকের মোহাম্মদের চতুর্থ প্রজন্ম জোয়ারদার হোসেন ওরফে লিটন এসব জমি বেদখলে রেখে স্থানীয়ভাবে বন্ধক ও ব্যক্তিগতভাবে লিজ দিয়ে অর্থ আত্মসাৎ করছেন। সেই অর্থ মসজিদের কোনো উন্নয়নকাজে খরচ করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ স্থানীয় মুসল্লিদের।

স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ ছালেক মিয়া বলেন, “মসজিদের জমিগুলো দাতার বংশধরেরা ভোগদখল করছে, বন্ধক রাখছে, লিজ দিচ্ছে। এমনকি মসজিদের পাশে রাস্তার ধারের জমি বিক্রি করে দোকানঘর নির্মাণ করতে চেয়েছিল। আমরা বাধা দিয়েছি। জমিগুলো মসজিদের কোনো উপকারে আসছে না। সরকারিভাবে উদ্ধার ও তদারকি প্রয়োজন।”

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন মুসল্লি জানান, “জোয়ারদার হোসেন লিটন জমিগুলো আত্মসাৎ করে নিজের দখলে রেখে চাষাবাদ করছেন, কোনো আয় মসজিদে দেখাচ্ছেন না। আমরা প্রতিবাদ করেও কোনো সুফল পাচ্ছি না। তিনি একজন ভূমিদস্যু ও প্রভাবশালী ব্যক্তি হওয়ায় কেউ মুখ খুলতে সাহস করছে না।”

এদিকে, প্রায় ১৫ বছর ধরে মসজিদের মোতওয়াল্লি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন আয়মন নেছা বেগম। তিনি বলেন, “আমি দীর্ঘদিন ধরে মোতওয়াল্লি। কিন্তু কৌশলে আমার ভাতিজা জোয়ারদার হোসেন লিটন মোতওয়াল্লি হওয়ার চেষ্টা করছেন এবং জমিগুলো বেদখল করে ভোগ করছেন।”

সরেজমিনে মসজিদ প্রাঙ্গণে গিয়ে দেখা যায়, মসজিদের সম্প্রসারণকাজ চলমান রয়েছে। এ সময় কয়েকজন মুসল্লি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “দানশীল ব্যক্তি আবু নুর মোহাম্মদ আহসান হামিদ ব্যক্তিগত অর্থায়নে মসজিদ নির্মাণের কাজ করছেন। অথচ জোয়ারদার হোসেন লিটনের লোকজন সেই কাজেও বাধা দিচ্ছেন। ফলে কাজ বন্ধ রয়েছে।”

অভিযুক্ত জোয়ারদার হোসেন লিটন বলেন, “আমি মোতওয়াল্লি হিসেবে জমিগুলো দেখভাল করছি।”
জিজ্ঞেস করা হলে— বছরে কত আয় হয় এবং কীভাবে তা মসজিদে খরচ হয়— উত্তরে তিনি বলেন, “আমি আপনাকে কেন হিসাব দেব? আমার পূর্বপুরুষ জমি দিয়েছে, আমরাই দেখভাল করছি।”

মিঠাপুকুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জিল্লুর রহমান বলেন, “তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

রংপুর ওয়াকফ এস্টেট কার্যালয়ের হিসাব নিরীক্ষক আমিনুল ইসলাম বলেন, “হাজী তকের মোহাম্মদ ওয়াকফ এস্টেটের মোতওয়াল্লি আয়মন নেছা। এ বিষয়ে উচ্চ আদালতে একটি মামলা চলমান রয়েছে। তদন্তসাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

সানজানা

×