ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ৩১ জুলাই ২০২৫, ১৬ শ্রাবণ ১৪৩২

বোরহানউদ্দিনে লাগামহীন মাদকের বিস্তার, নীরব প্রশাসন

রিয়াজ ফরাজি, ভোলা

প্রকাশিত: ১৭:৪১, ৩০ জুলাই ২০২৫

বোরহানউদ্দিনে লাগামহীন মাদকের বিস্তার, নীরব প্রশাসন

ছবিঃ সংগৃহীত

ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলায় দিনদিন বেড়েই চলেছে মাদকের ভয়াবহ বিস্তার। মাদকের নীল দংশন থেকে যুব সমাজকে বাঁচাতে স্থানীয় সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের শত চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে পড়েছে। মাদক ব্যবসায়ীরা এসব উদ্যোগকে উপেক্ষা করে দাপটের সঙ্গে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। মাদকবিরোধী র‍্যালি, সেমিনার—কোনো কিছুই মাদকের বিস্তার ঠেকাতে পারছে না।

এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন উপজেলার অভিভাবকরা।

আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভাগুলোতে মাদক প্রতিরোধ নিয়ে নীতিনির্ধারকদের বক্তব্য শোনা গেলেও বাস্তবে তেমন কোনো কার্যকর উদ্যোগ চোখে পড়ছে না। প্রকাশ্যে মাদক কেনাবেচা চললেও প্রশাসনের তৎপরতা নেই বললেই চলে। ফলে পরিস্থিতি দিনকে দিন আরো ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে।

মাদকাসক্তি এক ভয়াবহ মরণব্যাধি। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এটি একটি অন্যতম সামাজিক সংকট। বোরহানউদ্দিনে মাদকের ভয়াবহতা দিন দিন বেড়েই চলেছে, যা উপজেলার তরুণ ও কিশোর সমাজকে চরম হুমকির মুখে ফেলেছে। অভিভাবকরাও এই পরিস্থিতি নিয়ে চরম উদ্বেগে রয়েছেন।

৫ই আগস্টের আগ পর্যন্ত প্রশাসনের কিছুটা তৎপরতা থাকলেও, এরপর মাদক বিক্রি ও সেবনের মাত্রা আবারো আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে।

কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে, উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও পৌর শহরের বেশ কয়েকটি এলাকায় সক্রিয় রয়েছে মাদক কারবারিরা। এর মধ্যে পৌর শহরেই রয়েছে একাধিক মাদকের স্পট—যেমন: ৬নং ওয়ার্ডের ওয়াপদা রোড, আঃ জঃ কলেজ গেইট ও তৎসংলগ্ন এলাকা, উত্তর ও দক্ষিণ বাসস্ট্যান্ড, পঞ্চায়েত বাড়ি চৌরাস্তা, ৯নং ওয়ার্ডের বিএনপি বাজার, ১নং ওয়ার্ডের জয়া সড়ক এবং ৪নং ওয়ার্ডে সালাহউদ্দিন কমিশনারের বাড়ির পাশে দুটি স্পট।

এছাড়া বড়মানিকা ইউনিয়নের মানিকার হাট বাজার, কুতুবা ইউনিয়নের ছাগলা গ্রাম, পক্ষিয়া ইউনিয়নের বোরহানগঞ্জ বাজার, টবগী ইউনিয়নের রাস্তার মাথা, নতুন ও পুরান হাকিমুদ্দিন বেড়িবাঁধ, হাসাননগর ইউনিয়নের খাসমহল, কাজীরহাটের মনিরাম বাজার এবং শিকদার হাট রোড সংলগ্ন এলাকায়ও রয়েছে বেশ কিছু মাদকের স্পট।

সূত্র অনুযায়ী, কাচিয়া ইউনিয়নের প্রাণকেন্দ্র কুঞ্জেরহাট এবং পাশে ফুলকাচিয়ায় রয়েছে ইয়াবা ও গাঁজার সবচেয়ে বড় স্পট। এসব স্পট নিয়ন্ত্রণ করছে এলাকার প্রভাবশালী কিছু জ্বীন প্রতারক। তাদের রয়েছে শক্তিশালী একটি সিন্ডিকেট, যার মাধ্যমে মাদকের চালান পৌঁছে যায় খুচরা বিক্রেতার হাতে। এই সিন্ডিকেটে রয়েছে অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল চালকরা—যারা বাহ্যিকভাবে যাত্রী পরিবহন করলেও মূলত মাদক সরবরাহে সক্রিয় ভূমিকা রাখে।

জানা যায়, ২০২৪ সালের ২২ ডিসেম্বর টবগী ইউনিয়নের হাকিমুদ্দিন বেড়িবাঁধ এলাকায় মাদক বিক্রির সময় ইউসুফ নামে এক বিক্রেতাকে স্থানীয় জনতা হাতেনাতে ধরে ফেলে। একইদিনে গুচ্ছগ্রামে ইয়াবা ডেলিভারি দিতে আসা এক মাদক বিক্রেতা স্থানীয়দের ধাওয়া খেয়ে পার্শ্ববর্তী একটি বাড়ির সহায়তায় পালিয়ে যায়। এছাড়াও ২০২৫ সালের ১০ জুলাই নতুন হাকিমুদ্দিন বাজারে মামুন নামে এক ব্যক্তিকে গাঁজাসহ আটক করে স্থানীয়রা; পরে তাকে মারধর করে ছেড়ে দেয়।

এসব জীবনবিধ্বংসী দ্রব্য সেবনের ফলে যুব সমাজের মধ্যে চরম মূল্যবোধের অবক্ষয় ঘটছে। এর পরিণামে ছেলেমেয়ের হাতে মা-বাবা খুন, মাদকের টাকা না পেয়ে আত্মহত্যা, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, রাহাজানি এখন নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

মাদকাসক্তির প্রধান কারণ হিসেবে উঠে এসেছে মাদকের সহজলভ্যতা। পারিবারিক ও সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি পুলিশের টহল ও কঠোর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করলে মাদক নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব বলে মনে করছেন সচেতন নাগরিকরা।

 

মারিয়া

×