ফুটবল জাগরণের এই তো সুযোগ’

ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ ফুটবলে খেলা হামজা চৌধুরী বর্তমানে খেলছেন বাংলাদেশ জাতীয় দলে। ইতোমধ্যে এএফসি এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বে ভারতের বিরুদ্ধে খেলেছেন ডিফেন্সিভ এই মিডফিল্ডার। মঙ্গলবার ঢাকা জাতীয় স্টেডিয়ামে খেলেছেন সিঙ্গাপুরের বিপক্ষেও। এর আগে ৪ জুন ভুটানের বিরুদ্ধে ফিফা প্রীতি ম্যাচে ঘরের মাঠে অভিষেক হয় হামজার। ওই ম্যাচে দর্শনীয় গোল করে নিজ দেশে অভিষেক স্মরণীয় করেন দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলের বর্তমানে সেরা তারকা। 
ভুটানের বিরুদ্ধে ম্যাচে একাধিক প্রবাসী ফুটবলারের অভিষেক হয়। সিঙ্গাপুরের বিরুদ্ধে ম্যাচ খেলেছেন একঝাঁক প্রবাসী তারকা। বিশেষ করে সিঙ্গাপুরের বিরুদ্ধে ম্যাচে যেন সেই আশি-নব্বইয়ের দশকের ছোঁয়া ফিরে আসে। মাঠ ও মাঠের বাইরে দর্শকদের আগ্রহ ছিল দেখার মতো। অনেকে বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ে ব্যর্থ ক্রিকেট থেকে মুখ ফিরিয়ে আবার প্রাণের ফুটবলে ফিরেছেন বাংলাদেশের খেলাপাগল দর্শকরা। খাদের কিনারায় থাকা ফুটবলের এই নবজাগরণ দেখে খুব খুশি সাবেক ফুটবলার ও সংগঠকরা। সাক্ষাৎকারে নিজেদের উচ্ছ্বাসের কথা জানিয়েছেন জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক তারকা কায়সার হামিদ ও জাহেদ পারভেজ চৌধুরী। 
কায়সার হামিদ বলেন, ‘ফুটবলে আবার নবজাগরণ হয়েছে। হামজা-সামিতরা আসায় ফুটবলে আবার প্রাণ ফিরে এসেছে। এই সুযোগটা কাজে লাগাতে হবে। এখন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনকে যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত নিয়ে ফুটবলকে এগিয়ে নিতে কাজ করতে হবে। ধাপে ধাপে এগিয়ে গেলে সাফল্য আসবেই। এখন আমাদের দলটা অনেক ব্যালেন্ডড। শুরুতে সাফ শ্রেষ্ঠত্বে মনযোগী হতে হবে। এরপর এশিয়ান ফুটবলে কিভাবে ভাল অবস্থান করা যায় সেটা করতে হবে। এই দলের সেই সামথ্য রয়েছে। আশা করি ফেডারেশন সুযোগ কাজে লাগিয়ে ফুটবলকে জাগিয়ে তুলবেন।’ জাহেদ পারভেজ চৌধুরী বলেন, ‘দীর্ঘদিন পর মৃতপ্রায় ফুটবল জেগে উঠেছে।

হামজা আর সামিতের মতো ফুটবলারের কারণেই আজ ফুটবলে জোয়ার এসেছে। এমন দিন দেখার অপেক্ষাতেই ছিলাম। খুব ভালো লাগছে ফুটবলে ফের জোয়ার আসছে।’ জাতীয় ফুটবল দলে ২০০৪-১১ সাল পর্যন্ত খেলেছেন জাহেদ পারভেজ। ঘরোয়া ফুটবলে ঢাকা আবাহনী, শেখ রাসেল, শেখ জামাল, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্রের মতো ক্লাবে যেমন খেলেছেন, তেমনি এশিয়ান গেমস, এএফসি কোয়ালিফাইং, এএফসি চ্যালেঞ্জ কাপ, এসএ গেমস এবং মারদেকা কাপের মতো আন্তর্জাতিক আসরেও খেলেছেন জাহেদ পারভেজ। দেশের ফুটবলে হামজার আগমন নিয়ে ২০১০ ঢাকা এসএ গেমসে স্বর্ণজয়ী ফুটবল দলের সদস্য মিডফিল্ডার জাহেদ পারভেজ চৌধুরী বলেন, ‘ইংলিশ প্রিমিয়ার ফুটবল লিগের খ্যাতি বিশ^ব্যাপী। সেই লিগের লেস্টার সিটিতে খেলা হামজা আমাদের ফুটবলের জন্য আশীর্বাদ। যে ফুটবলের কফিনে কেবল পেরেক ঠুকা বাকি ছিল, সেই ফুটবল আজ কফিন ভেঙে বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। উপলক্ষ ইংল্যান্ড প্রবাসী হামজা চৌধুরী।’ 

জাহেদ পারভেজ বলেন, ‘প্রতিপক্ষের ফরোয়ার্ডের তীব্র আক্রমণে গোলার মতো ছুটে আসা বল গোলবারের সামনে থেকে ফিরিয়ে দিতে জুড়ি নেই হামজার। এমন ফুটবলারই তো চেয়েছি আমরা।’ সাবেক এই তারকা ফুটবলার যোগ করেন, ‘হামজার সঙ্গে কানাডিয়ান সামিত সোমের রসায়ন দেশের ফুটবলকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে যাবে বলেই আমি আশা করি। কারণ এই দুই ফুটবলারের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখতে পারবেন আমাদের স্থানীয় ফুটবলাররা। সেই সঙ্গে দেশের জেলা, ক্লাব এবং বিভিন্ন মাধ্যমে বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্ট আয়োজন করে স্থানীয় প্রতিভাবান ফুটবলার তৈরি করে জাতীয় দলের পাইপলাইন শক্তিশালী করতে হবে। এতে আমাদের ফুটবলেও আবার শুরু হবে জাগরনের গান।’ হামজার মতো আরও বিদেশি ফুটবলার জাতীয় দলে প্রত্যাশা করে জাহেদ পারভেজ বলেন, ‘বাফুফের উচিত ডিফেন্ডিং, মিডফিল্ড এবং ফরোয়ার্ডে আরও কিছু ভালো মানের বিদেশি আনা।

যদিও ইতোমধ্যে ইতালিয়ান প্রবাসী ফরোয়ার্ড ফাহমিদুল ইসলামও দলে যোগ দিয়েছেন। এমন আর দুয়েকজন ভালমানের প্রবাসী আনতে পারলে ভারসাম্যপূর্ণ একটি দলে পরিণত হবে বাংলাদেশ। শক্তিশালী হবে, প্রতিপক্ষ দলগুলো সমীহ করবে। আর প্রবাসীদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে ভালো কিছু দলের বিপক্ষে জিততে পারলেই ফুটবল ফিরবে তার চিরচেনা যৌবনে। বিশ^ ফুটবলে ফের মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে বাংলাদেশ। দেশের ফুটবলে নতুন ঘ্রাণে মাতোয়ারা হোক ফুটবলপ্রেমীরা, সেই প্রত্যাশাই করি।’
এটা ঠিক হামজা চৌধুরী কঠিন চ্যালেঞ্জে ফেলে দিয়েছে বাংলাদেশের ফুটবলকে। সমর্থকদের পক্ষ থেকে চাপ বাড়ছে জাতীয় দলে বেশি বেশি প্রবাসী ফুটবলারদের অন্তর্ভুক্ত করার। অন্যদিকে প্রমাদ গুনছেন দেশীয় ফুটবলাররা। জাতীয় দলে যত বেশি প্রবাসী আসবে, তত কমে যাবে দেশীয়দের সুযোগ। এটা সত্যি, হামজা লেভেলের প্রবাসী ফুটবলারের অন্তর্ভুক্তি বাংলাদেশ দলকে উজ্জীবিত করেছে। শুধু মাঠের খেলায় নয়, মাঠের বাইরেও। যার প্রমাণ মিলেছে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে।