ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ৩০ জুলাই ২০২৫, ১৫ শ্রাবণ ১৪৩২

ক্রীড়াঙ্গনে শরীরচর্চার গুরুত্ব...

জাহিদুল আলম জয়

প্রকাশিত: ০০:৫২, ৩০ জুলাই ২০২৫

ক্রীড়াঙ্গনে শরীরচর্চার গুরুত্ব...

বারিধারার ‘ফিটনেস স্টুডিও’তে শারীরিক কসরতে ব্যস্ত অনেকে

স্বপ্নবাজ এক তরুণ। নাম তার কামরান আহমেদ সাদ্দাম। কাজ করেন প্রাণচাঞ্চল্য নিয়ে। কিন্তু একটা সময় লক্ষ্য করলেন নিজের শরীরের ওজন অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে চলেছে। তখন ভাবতে লাগলেন এর প্রতিকার কি। সেই ভাবনা থেকে জিমনেশিয়াম করার চিন্তা মাথায় আসে। যেই চিন্তা সেই কাজ। প্রতিষ্ঠা করেন ‘ফিটনেস স্টুডিও’। এই জিমনেশিয়ামের অবস্থান ঢাকার বারিধারার ডিওএইচএস এর এসকেএস শপিং কমপ্লেক্সের ষষ্ঠ ফ্লোরে। ফিটনেস স্টুডিওর প্রতিষ্ঠাতা কামরান আহমেদ সাদ্দাম বাংলাদেশের প্রখ্যাত সাংবাদিক বোরহান আহমেদ এর একমাত্র ছেলে।
প্রথমে নিজের তাগিদে শুরু করলেও ধীরে ধীরে সাদ্দাম সবার জন্য উন্মুক্ত করেন জিমনেশিয়াম। দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টার পর এখন দেশের অন্যতম সেরা জিমনেশিয়ামে পরিণত হয়েছে ফিটনেস স্টুডিও। যেখানে বর্তমানে দেশ-বিদেশের ২০০ জনের কাছাকাছি নিয়মিত জিম করছেন। ফিটনেস স্টুডিওর সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য, এখানে সবাই স্বাচ্ছন্দ্যে জিম করতে পারেন।

ভালো সেবা ও পরিবেশের কারণে এটি সবার আস্থায় পরিণত হয়েছে। সেবার মান ভালো হওয়ার কারণে ফিটনেস স্টুডিওতে অনেক মানুষ আসছেন। জিমের কর্ণধার কামরান আহমেদ জানিয়েছেন, বিদেশীরা এই জিমে সবচেয়ে বেশি আসেন। এদের মধ্যে চীনের ২০ জনের বেশি, ভারতের ১০ জনের বেশি আছেন। শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্র, পাকিস্তান, রাশিয়া দূতাবাসের অনেকে এখানে জিম করেন।

তাদের হোটেলে জিমের ব্যবস্থা থাকলেও এখানে আসেন গুণগত মান ভালো হওয়ার কারণে। পদ্মা সেতুতে কাজ করা চীনা ইঞ্জিনিয়ারদের বড় অংশ এখানে নিয়মিত জিম করেছেন। সুস্থ পরিবেশ ও গুণগত মানের কারণে দিনকে দিন ফিটনেস স্টুডিওর প্রতি মানুষের আস্থা বাড়ছে। 
বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে জিমনেশিয়ামের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। সব ধরনের ইভেন্টের খেলোয়াড়দের জিমে যাওয়া বাধ্যতামূলক। নিজেদের ফিট রাখতে এর বিকল্প নেই। ফুটবল, ক্রিকেট, হকিসহ অন্যান্য ইভেন্টের খেলোয়াড়েরা নিয়মিত জিম করেন। ফিটনেস স্টুডিওতেও বিভিন্ন ইভেন্টের উঠতি খেলোয়াড়েরা জিম করে থাকেন। এখানকার পরিবেশে তারা সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। জিমনেশিয়াম করার পর নিজের শরীরের আমূল পরিবর্তন ঘটেছে কামরানের।

যারা জিম করছেন তাদের শারীরিক সুস্থতা তাঁকে তৃপ্ত করে। এখানে যুক্ত হয়ে তিনি বুঝতে পেরেছেন সুস্থ ও সুন্দরভাবে বেঁচে থাকতে হলে ব্যায়াম করার বিকল্প নেই। এ প্রসঙ্গে কামরান আহমেদ বলেন, ‘হাসপাতালে যেতে না চাইলে জিমে আসতেই হবে। অনেকে আমাকে বলেন, ইস্ যদি জিম করতাম তাহলে হয়তো অসুস্থ হতে হতোনা; হাসপাতালে কাড়ি কাড়ি টাকা খরচ করতে হতো না।’ তিনি আরও বলেন, ‘শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার জন্য জিম করা অপরিহার্য। মানুষ সারাদিন অনেক পরিশ্রম করে।

অনেকে অফিস করেন, ব্যবসা বা অন্যান্য কাজ করেন। এভাবে চলতে থাকলে শরীরের ওপর অনেক নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। কিন্তু প্রতিদিন যদি আধাঘণ্টা বা একঘণ্টা জিম করা যায় তাহলে শরীর সুস্থ থাকবে। আর শরীর সুস্থ থাকলে মনও ভালো থাকবে। এতে করে সবকিছুর ওপর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।’ ফিটনেস স্টুডিওর কর্ণধার বলেন, ‘বর্তমান সময়ে সুস্থ থাকা বড় একটা চ্যালেঞ্জ। এজন্য ব্যায়াম করা অপরিহার্য। মানসিক ও শারীরিকভাবে সুস্থ থাকতে হলে জিম (শরীরচর্চা) করতে হবে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের শরীরে অনেক সমস্যা হয়ে থাকে। এসবের সমাধানের একটি উপায় হচ্ছে শরীরচর্চা।’
কামরান জানান, আমাদের শরীরচর্চার সঙ্গে অবশ্যই হেলদি ডায়েট করতে হবে। ফিট বডি বানাতে ডায়েট ও জিম দুটোই প্রয়োজন। আমাদের সবার দৈনন্দিন একটি সমস্যা আছে। সেটি হচ্ছে জয়েন্ট পেইন। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে এই সমস্যা সবারই হয়। এর সমাধান জিম করা। মোটকথা, শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে হলে শরীরচর্চা, জিম এবং হেলদি ডায়েট করতে হবে।

সমাজে মানুষের মধ্যে আরও সচেতনতা সৃষ্টি করাও কামরানের লক্ষ্য। যে কারণে ফিটনেস স্টুডিও ছাড়াও ঢাকাতে আরেকটি ব্রাঞ্চ করার ইচ্ছে আছে তার। এছাড়া নিজ জেলা মানিকগঞ্জের মানুষের জন্য কাজ করতে চান। সেখানেও করতে চান জিমনেশিয়াম। কামরানের এই পথচলায় উৎসাহ জোগাচ্ছে তার পরিবার। বিশেষ করে মা ও স্ত্রী পাশে থাকায় তিনি নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করতে পারছেন। 
বিদেশীরা সন্তুষ্ট ফিটনেস স্টুডিওতে ভাল পরিবেশ পেয়ে। চীনা তরুণ লু ওয়েজি বিগত কয়েক বছর বাংলাদেশে আছেন। পদ্মা সেতুর ইঞ্জিনিয়ার বহরে তিনিও ছিলেন। তিনি এখনো নিয়মিত ফিটনেস স্টুডিওতে জিম করেন। জনকণ্ঠের সঙ্গে আলাপকালে লু ওয়েজি বলেন, ‘এখানে অসাধারণ একটি পরিবেশ পেয়েছি। আমরা অনেকদিন ধরেই এই জিমে আসি। মিস্টার কামরান খুব আন্তরিক। আমার মতো অন্যরাও এখানে এসে ঘরোয়া পরিবেশে জিম করতে পারেন। তার জন্য শুভকামনা রইল।’

এসবের পাশাপাশি ফিটনেস স্টুডিওর আরেকটি মহতী কাজ করে চলেছে। ছাত্রদের জন্য বিশেষ ছাড়ে জিম করার সুযোগ করে দিয়েছে। এখানে ২০ জন ছাত্র নিয়মিত জিম করেন। তাদের দেয়া হয়েছে ৫০ শতাংশ ছাড়। শুধু তাই নয়, ছাত্রদের আলাদাভাবে দেখভাল করা হয়। এদের পেছনে অনেক শ্রম দেন কামরান আহমেদ। ছাত্রদের ভালো মানের খাবারও তার প্রতিষ্ঠান থেকে দেয়া হয়। এসব কারণে খুব খুশি টগবগে তরুণ জোহা আমির। তিনি বাংলাদেশ বডিবিল্ডিং ফেডারেশন আয়োজিত প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করছেন। এজন্য সব ধরনের সহযোগিতা করছে ফিটনেস স্টুডিও।

প্যানেল হু

×