
ছবি: দৈনিক জনকন্ঠ।
ঢাকার উপকণ্ঠ শিল্পাঞ্চল আশুলিয়া দেশের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ শ্রমজীবী এলাকা। পোশাকশিল্পসহ নানা ধরনের কারখানা গড়ে ওঠায় প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ জীবিকার খোঁজে ভিড় করছেন এখানে। কাজের সুযোগ থাকায় এই অঞ্চলে দ্রুত বেড়েছে জনসংখ্যার চাপ। সেই চাপ সামাল দিতেই মূল সড়ক থেকে শুরু করে অলিগলি পর্যন্ত গজিয়ে উঠেছে অসংখ্য বাসাবাড়ি ও ফ্ল্যাট ভবন। এসব বাসাবাড়িতে বসবাস করা মানুষের বড় একটি অংশই রয়েছেন ভাড়াটিয়া হিসেবে।
তবে আশঙ্কার বিষয় হলো, ভাড়াটিয়াদের তথ্য পুলিশ বা প্রশাসনের কাছে জমা দেওয়ার সুনির্দিষ্ট নিয়ম থাকলেও, বাস্তবে এর চিত্র একেবারেই ভিন্ন। এই বিপুল ভাড়াটিয়া জনগোষ্ঠীর তথ্য থানায় জমা রাখার কার্যকর কোনো ব্যবস্থা এখন দৃশ্যমান নয়।
পুলিশ বা স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকেও এ বিষয়ে নেই তেমন কোনো তদারকি বা সচেতনতা। ফলে আশুলিয়া হয়ে উঠছে অপরাধীদের গা-ঢাকা দেওয়ার অন্যতম ‘নিরাপদ আশ্রয়স্থল’।
সরেজমিনে নিশ্চিতপুর, নরসিংহপুর, জামগড়া, ইউনিক, গাজীরচট ও বাইপাইলসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ বাড়িওয়ালাই থানায় ভাড়াটিয়ার তথ্য জমা দিচ্ছেন না। এতে পুলিশের পক্ষেও অপরাধ দমন করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
স্থানীয় সচেতন মহল বলছে, থানায় ভাড়াটিয়ার তথ্য জমা দেওয়ার নিয়ম অনেক পুরোনো হলেও তা বাস্তবে মানা হয় না। কেউ নিয়ম জানে না, আবার কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে এড়িয়ে যায়। এতে করে আশুলিয়ার মতো জনবহুল এলাকাগুলো হয়ে উঠছে অপরাধীদের আত্মগোপন করার নিরাপদ আশ্রয়স্থল। অপরাধীচক্রের সদস্যরা অনায়াসেই এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে নির্বিঘ্নে চালিয়ে যাচ্ছে তাদের অপরাধ মূলক কর্যক্রম।
ভাড়াটিয়া নিবন্ধন ফর্মের বিষয়ে জানতে চাইলে আশুলিয়ার ইয়ারপুর ইউনিয়নের নিশ্চিতপুর এলাকা লিয়াকত ভিলার ম্যানেজার সাইফুল ইসলাম বলেন, ভাড়াটিয়ার তথ্য থানায় দেওয়ার নিয়ম আছে শুনেছি। কিন্তু কেউ এসে কোন দিন বলেনি, আর কাউকে দিতেও দেখিনি তাই আমরাও তেমন গুরুত্ব দিইনি। সবাই যেভাবে ভাড়া দেয়, আমিও সেভাবেই দেই।
এ বিষয়ে গাজীরচট এলাকার বাড়িওয়ালা রওশন আলী বলেন, যে ভাড়াটিয়াকে ভালো মনে হয়, তাকে ভাড়া দেই। তাছাড়া ভাড়াটিয়া নিবন্ধন ফর্মের কথা অনেক আগে শুনেছিলাম, কীভাবে কি করতে হয় সেটাও ভালোভাবে জানি না। বাসা ভাড়া দেওয়ার সময় ভাড়াটিয়াদের কাছে জাতীয় পরিচয়পত্র চাই, কেউ কেউ দেয় আবার অনেকে দেয় ও না। তাছাড়া প্রতিদিনের কাজের ঝামেলায় এসব নিয়ে ভাবার সময়ও পাই না।
পোশাক কারখানার শ্রমিক রাকিব হোসেন বলেন, আমি কয়েক বছর ধরে এখানে ভাড়া বাসায় থেকে চাকরি করি। বাসা ভাড়া নেওয়ার সময় জাতীয় পরিচয়পত্র চেয়েছিল, কিন্তু কোনো ফরম পূরণ এর কথা বলেনি।
আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল হান্নান জানান, আইন অনুযায়ী, প্রতিটি বাড়িওয়ালাকে তার ভাড়াটিয়ার তথ্য থানায় জমা দিতে হবে। বাড়িওয়ালাদের মধ্যে সচেতনতার অভাব আছে।
তিনি আরও বলেন, অনেক সময় দেখা যায়, কোন অপরাধী আশুলিয়ায় এসে ভাড়া থাকে ভুয়া নাম-ঠিকানা দিয়ে। তখন আমরা তথ্য পাই না, খোঁজ করতেও সময় লাগে। নিবন্ধন ফর্মের ব্যাপারে আশুলিয়া থানা পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে সেই সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রচার চলমান।
মিরাজ খান