ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৬ জুলাই ২০২৫, ১ শ্রাবণ ১৪৩২

মহাকাশের বরফ নিয়ে চমকপ্রদ আবিষ্কার, যা এতদিন অসম্ভব মনে করা হয়েছিল

প্রকাশিত: ০৫:২৫, ৯ জুলাই ২০২৫

মহাকাশের বরফ নিয়ে চমকপ্রদ আবিষ্কার, যা এতদিন অসম্ভব মনে করা হয়েছিল

ছবি: সংগৃহীত।

মহাকাশে জমে থাকা বরফ (আইস) সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা এমন এক চমকপ্রদ তথ্য আবিষ্কার করেছেন, যা এতদিন পর্যন্ত বিজ্ঞানীদের ধারণার সম্পূর্ণ বিপরীত। নতুন গবেষণায় জানা গেছে, মহাশূন্যে থাকা বরফ আসলে সম্পূর্ণ এলোমেলো (amorphous) নয়, বরং এর মধ্যে ক্ষুদ্র স্ফটিক (crystalline) গঠনেরও অস্তিত্ব রয়েছে।

ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন ও ইউনিভার্সিটি অব কেমব্রিজের পদার্থবিজ্ঞানী মাইকেল বেনেডিক্ট ডেভিসের নেতৃত্বে পরিচালিত এই গবেষণায় দেখা গেছে, মহাকাশে পানির সবচেয়ে প্রচলিত রূপ — জমাট বরফ — প্রকৃতপক্ষে নির্দিষ্ট বিন্যাসে পরমাণু সাজিয়ে স্ফটিকের মত আচরণ করে।

“আমরা এখন জানি, মহাবিশ্বে পানির সবচেয়ে সাধারণ রূপটি পরমাণু স্তরে কেমন দেখতে,” বলেন গবেষক ডেভিস। “এটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ বরফ জড়িত অনেক মহাজাগতিক প্রক্রিয়ার সঙ্গে — যেমন গ্রহ গঠন, গ্যালাক্সির বিবর্তন ও পদার্থের গতি।”

পৃথিবীতে আমরা যে বরফ দেখি, তা স্ফটিকাকার বা 'ক্রিস্টালাইন' হয়—যেখানে পরমাণুগুলি নিখুঁত বিন্যাসে সাজানো। বিজ্ঞানীরা এতদিন ধরে মনে করতেন, মহাকাশের চরম ঠান্ডায় বরফ জমলেও তা হবে 'অ্যামরফাস' বা এলোমেলো পরমাণু বিন্যাসের, কারণ এত ঠান্ডায় স্ফটিক গঠন সম্ভব নয়।

কিন্তু সাম্প্রতিক কম্পিউটার সিমুলেশন এবং এক্সপেরিমেন্ট দেখিয়েছে, মহাকাশের সেই বরফের মধ্যে প্রায় ২০ শতাংশ স্ফটিকের বিন্যাস বিদ্যমান, বাকি ৮০ শতাংশ অ্যামরফাস। গবেষণার সময় বিজ্ঞানীরা ভার্চুয়াল পানির অণু -১২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে জমিয়ে তাদের গঠন পরীক্ষা করেন।

মহাকাশে পানি সরাসরি গ্যাস থেকে জমে বরফে পরিণত হয়, কারণ সেখানে তরল রূপে পানি থাকে না। গবেষকরা এই পরিবেশ অনুকরণ করে ঠান্ডা পৃষ্ঠে পানির বাষ্প জমিয়ে বরফ তৈরি করেন। এরপর সেসব বরফ উত্তপ্ত করলে দেখা যায়, বরফের পূর্বের স্ফটিক গঠন ‘স্মরণ’ করে এবং তেমন গঠন পুনরায় সৃষ্টি করে — যা স্ফটিক উপস্থিতির বড় প্রমাণ।

গবেষণার সহলেখক ও পদার্থ রসায়নবিদ ক্রিস্টোফ সালজম্যান বলেন, “পৃথিবীর বরফ মহাবিশ্বের দৃষ্টিকোণ থেকে একটি কৌতূহলের বিষয়। কিন্তু মহাকাশের বরফ আমাদের এতদিন ছিলো একটি এলোমেলো জমাট জলের প্রতিচ্ছবি। আমাদের আবিষ্কার বলছে, বাস্তবতা এতটা সরল নয়।”

তিনি আরও যোগ করেন, “এই আবিষ্কার শুধু মহাকাশ নয়, বরং অ্যামরফাস পদার্থের অন্যান্য প্রযুক্তিগত ব্যবহারেও গুরুত্বপূর্ণ। যেমন, ফাইবার অপটিক্সে ব্যবহৃত কাঁচ—যেগুলোর কার্যকারিতা বাড়তে পারে যদি তাদের মধ্যে থাকা ক্ষুদ্র স্ফটিকগুলি দূর করা যায়।”

এই গবেষণা কেবল বরফ নয়, মহাবিশ্বের পদার্থের গঠন সম্পর্কে আমাদের বোধকে আরও একধাপ এগিয়ে দিলো। বরফও যে স্মৃতি রাখতে পারে, এবং তা আমাদের ভবিষ্যতের প্রযুক্তি ও মহাকাশ গবেষণায় নতুন পথ দেখাতে পারে—এখন তা আর শুধু কল্পনা নয়, বরং প্রমাণিত বাস্তব।

মিরাজ খান

×