ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৬ জুলাই ২০২৫, ১ শ্রাবণ ১৪৩২

পৃথিবীতে পাওয়া গেছে বুধ থেকে আসা দুটি রহস্যময় উল্কাপিণ্ড

প্রকাশিত: ১৮:৫৭, ৮ জুলাই ২০২৫

পৃথিবীতে পাওয়া গেছে বুধ থেকে আসা দুটি রহস্যময় উল্কাপিণ্ড

ছবি: বামে নাসার মেসেঞ্জার মহাকাশযান দ্বারা তোলা বুধ (Mercury) গ্রহের একটি ছবি। ডানে মানব চোখে যেমন দেখা যেতে পারে, তার আনুমানিক প্রতিকৃতি

বেশিরভাগ উল্কাপিণ্ডই পৃথিবীতে এসে পড়ে মঙ্গল ও বৃহস্পতির মাঝখানের অ্যাস্টরয়েড বেল্ট থেকে। তবে চাঁদ ও মঙ্গলেরও প্রায় হাজারখানেক উল্কাপিণ্ড পাওয়া গেছে পৃথিবীতে, যা সেখানে কোনো মহাজাগতিক সংঘর্ষের ফলে বিচ্ছিন্ন হয়ে এসেছে বলে মনে করা হয়।

তবে আশ্চর্যের বিষয় হলো—সূর্যের সবচেয়ে কাছের পাথুরে গ্রহ বুধ (Mercury) থেকেও এমন উল্কাপিণ্ড আসা সম্ভব হলেও, এখনো পর্যন্ত নিশ্চিতভাবে কোনোটি শনাক্ত করা যায়নি। এটি বিজ্ঞানীদের দীর্ঘদিনের এক রহস্য হিসেবেই রয়ে গেছে।

কিন্তু সম্প্রতি এক গবেষণায় এমনই দুটি উল্কাপিণ্ডের খোঁজ মিলেছে, যেগুলোর উৎস হতে পারে বুধ গ্রহ। যদি তা প্রমাণিত হয়, তাহলে এই দুটি পাথরের টুকরো আমাদের কাছে বুধের গঠন ও বিবর্তন সম্পর্কে দুর্লভ ও মূল্যবান তথ্য এনে দিতে পারে।

বুধ গ্রহের কাছাকাছি যেকোনো মহাকাশ অভিযান অত্যন্ত জটিল ও ব্যয়বহুল। তাই প্রকৃতির নিজস্ব মাধ্যমে পৃথিবীতে আসা কোনো বুধীয় টুকরো বিজ্ঞানীদের জন্য এক দারুণ সুযোগ।

নাসার মেসেঞ্জার মিশন থেকে পাওয়া উপাত্ত অনুসারে, বুধের পৃষ্ঠে রয়েছে সোডিয়াম-সমৃদ্ধ প্ল্যাজিওক্লেজ, আয়রন-স্বল্প পাইরোক্সিন (যেমন এনস্ট্যাটাইট), ওলিভিন এবং সালফাইড খনিজ (যেমন ওল্ডহামাইট)।

আগেও একবার ‘Northwest Africa (NWA) 7325’ উল্কাপিণ্ডটিকে বুধের বলে ধারণা করা হয়েছিল। কিন্তু তাতে থাকা খনিজ উপাদানগুলো (বিশেষ করে আয়রনযুক্ত পাইরোক্সিন) বুধের পৃষ্ঠের সঙ্গে খাপ খায়নি, ফলে সেই দাবি প্রত্যাখ্যান করা হয়।

নতুন গবেষণায় আলোচনায় এসেছে দুটি রহস্যময় উল্কাপিণ্ড Ksar Ghilane 022 ও Northwest Africa 15915। এই দুটি পাথরের গঠন ও রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য বুধের পৃষ্ঠের সঙ্গে বিস্ময়করভাবে মিলে যায়। এর মধ্যে রয়েছে ওলিভিন, পাইরোক্সিন, অল্প পরিমাণ অ্যালবাইট এবং ওল্ডহামাইট—যা বুধে পাওয়ার সম্ভাব্য খনিজ উপাদানের সঙ্গেও মেলে।

এমনকি এদের অক্সিজেন আইসোটোপ উপাদানগুলোর সঙ্গে মিল রয়েছে আগেই আলোচনায় থাকা ‘অব্রাইট’ নামক একধরনের উল্কাপিণ্ডের, যা একটি বৃহৎ পাথুরে গ্রহ থেকে এসেছে বলে ধারণা করা হয়।

তবে পার্থক্যও রয়েছে। যেমন—এই দুই উল্কাপিণ্ডে প্ল্যাজিওক্লেজ মাত্র সামান্য পরিমাণে রয়েছে, যেখানে বুধের পৃষ্ঠে এর পরিমাণ প্রায় ৩৭%।

এদের বয়স প্রায় ৪,৫২৮ মিলিয়ন বছর, যা বুধের অনুমিত প্রাচীনতম পৃষ্ঠের চেয়েও বেশি পুরনো (প্রায় ৪,০০০ মিলিয়ন বছর)। এটি বোঝায়, এই পাথর দুটি হয়তো সেই প্রাচীন যুগের প্রতিনিধি, যেগুলো এখন আর বুধের পৃষ্ঠে দৃশ্যমান নেই।

বর্তমানে ইউরোপীয় এবং জাপানি মহাকাশ সংস্থার BepiColombo মিশন বুধ গ্রহের কক্ষপথে রয়েছে এবং খুব শিগগিরই উচ্চ রেজোলুশনের ছবি ও তথ্য পাঠাবে, যা এই উল্কাপিণ্ডগুলোর উৎস নির্ধারণে সাহায্য করতে পারে।

এছাড়া, ২০২৫ সালে অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠেয় Meteoritical Society Meeting-এ এই বিষয়ে একাধিক গবেষণা উপস্থাপন করার পরিকল্পনা রয়েছে।

 

 

সূত্র: লাইভ সায়েন্স।

রাকিব

×