
ছবি: সংগৃহীত
মাত্র একটি ইনজেকশনেই কানে শোনার ক্ষমতা ফিরে পেলেন বধির শিশু ও প্রাপ্তবয়স্করা! সুইডেনের কারোলিন্সকা ইনস্টিটিউটের গবেষকেরা দাবি করেছেন, নতুন এক জিন থেরাপি প্রয়োগ করে তারা জন্মগত শ্রবণ সমস্যার সাফল্যজনক চিকিৎসা করতে পেরেছেন।
‘নেচার মেডিসিন’ জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে জানানো হয়, একটি নির্দিষ্ট জিন— ওটিওএফ (OTOF)—এর নতুন সংস্করণ ইনজেকশনের মাধ্যমে কানের ভেতরে প্রবেশ করিয়ে শ্রবণশক্তি ফিরিয়ে আনা হয়েছে পরীক্ষামূলকভাবে।
এই পরীক্ষামূলক ট্রায়ালে অংশ নেয়া ১০ জনেরই শ্রবণশক্তি উন্নত হয়েছে। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ফল পাওয়া গেছে এক ৭ বছরের শিশুর ক্ষেত্রে, যে প্রায় সম্পূর্ণ শ্রবণশক্তি ফিরে পেয়েছে এবং মাত্র চার মাস পরেই মায়ের সঙ্গে স্বাভাবিকভাবে কথা বলতে পারছে।
গবেষকরা বলছেন, ৫ থেকে ৮ বছর বয়সীদের ক্ষেত্রে এই থেরাপি সবচেয়ে ভালো কাজ করেছে।
জিনের ত্রুটিই সমস্যার মূল
শ্রবণক্ষমতা হারানো এই অংশগ্রহণকারীরা মূলত ওটিওএফ (OTOF) জিন-এর ত্রুটির কারণে জন্মগতভাবে বধির ছিলেন। এই জিনের সমস্যা হলে কানে থাকা ওটোফারলিন নামের একটি প্রোটিন তৈরি হয় না, যা শব্দকে স্নায়ুতন্ত্রের মাধ্যমে মস্তিষ্কে পৌঁছে দিতে সহায়তা করে।
গবেষকরা একটি নিরাপদ ও কৃত্রিম ভাইরাস (adeno-associated virus) ব্যবহার করে কানের ভেতরে একটি মাত্র ইনজেকশনের মাধ্যমে এই সুস্থ জিন প্রবেশ করান। ফলাফল হিসেবে, অনেক রোগীর শ্রবণশক্তি এক মাসের মধ্যেই উন্নত হয়।
শ্রবণক্ষমতায় নাটকীয় উন্নতি
ছয় মাস পর দেখা গেছে, অংশগ্রহণকারীদের শ্রবণক্ষমতার গড় মাত্রা ১০৬ ডেসিবেল থেকে কমে ৫২ ডেসিবেল-এ নেমে এসেছে। এর মানে তারা আগের তুলনায় অনেক কম শব্দেই শুনতে পাচ্ছেন।
প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রেও সম্ভাবনা
যদিও শিশুরা সবচেয়ে ভালো সাড়া দিয়েছে, গবেষকরা বলছেন প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রেও এই পদ্ধতি কার্যকর হতে পারে। এটি ছিল প্রথমবারের মতো যখন এই জিন থেরাপি কিশোর ও প্রাপ্তবয়স্কদের ওপর প্রয়োগ করা হয়।
গবেষক ড. মাওলি ডুয়ান বলেন, ‘অনেক অংশগ্রহণকারীর শ্রবণশক্তি নাটকীয়ভাবে বেড়েছে, যা তাদের জীবনের মানে বিশাল পরিবর্তন আনতে পারে। আমরা এখন পর্যবেক্ষণ করছি এই প্রভাব কতদিন স্থায়ী হয়।’
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তেমন নেই
গবেষণায় দেখা গেছে, থেরাপিটি নিরাপদ ও সহনীয়। ৬ থেকে ১২ মাসের ফলোআপে কোনো গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার তথ্য পাওয়া যায়নি। কেবল নিউট্রোফিল নামের সাদা রক্তকণিকার সামান্য হ্রাস ছিল সবচেয়ে সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।
আরও জিন নিয়েও কাজ চলছে
গবেষকরা আশা করছেন ভবিষ্যতে আরও সাধারণ জিন, যেমন GJB2 ও TMC1 যেগুলো বধিরতার পেছনে ভূমিকা রাখে, সেগুলোর ওপরও সফল থেরাপি আনা সম্ভব হবে।
ড. ডুয়ান বলেন, ‘OTOF তো কেবল শুরু। প্রাণীর ওপর চালানো পরীক্ষায় ইতিবাচক ফল মিলেছে। আমরা আত্মবিশ্বাসী—একদিন বিভিন্ন ধরনের জিনগত বধিরতারও নিরাময় হবে।’
সূত্র: দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট।
রাকিব