শেখ হাসিনা জেলে গেলেও দল বিপদে পড়ত না বলে মনে করে দলটির নেতাকর্মীরা।
একসঙ্গে এক ছাদের তলায় বসে দেশ শাসন করেছেন। নেত্রীর নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে মেনে সামলে দিয়েছেন নানা রাজনৈতিক টালমাটাল আর দুঃসময়। অথচ, সেই নেত্রীই দুঃসময়ে তাদের ছেড়ে পালালেন! দলের সহকর্মীদের বিপদে ফেলে কেবল আত্মীয়দের সঙ্গে নিয়ে ছাড়লেন দেশ। বিন্দুমাত্র আঁচ পেতে দিলেন না সর্বক্ষণের ছায়াসঙ্গীদেরও।
শেখ হাসিনার দেশত্যাগের কথা জানলে হয়তো নিজেদেরও নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার একটা সুযোগ পেতেন তারা! সে কথা ভেবেই এখন ক্ষোভে ফুঁসছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ও মন্ত্রীরা। তারা দুষছেন শেখ হাসিনাকেই। বলছেন, ‘পদত্যাগই যদি করবেন, দেশ ছেড়ে যদি যাবেনই, তাহলে দলের নেতাকর্মীদের ওই আন্দোলনের মুখোমুখি কেনো দাঁড় করালেন?’
হাসিনা যে সোমবারই (৪ আগস্ট) পদত্যাগ করবেন এবং দেশ ছাড়বেন, তা ঘুণাক্ষরেও টের পাননি তার ঘনিষ্ঠ নেতামন্ত্রীরা। তার সরকারের মন্ত্রিসভার ছয় সদস্য এবং আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির পাঁচ নেতা নিজেরাই এ কথা জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, হাসিনা যে দেশ ছাড়বেন, তা সোমবার দুপুরে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম থেকেই জানতে পারেন তারা। সেই খবর পাওয়ার পরেই তারা খানিক হতভম্ব হয়ে যান। তার পরেই হাসিনার মন্ত্রিসভার অধিকাংশ সদস্য এবং নেতাকর্মীরা নিরাপদ আশ্রয় খুঁজতে শুরু করেন। অনেকে দেশ ছাড়ার চেষ্টাও শুরু করেন।
বহু মন্ত্রীর মোবাইল সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত খোলা থাকলেও রাতের দিকে অনেককেই আর ফোনে পাওয়া যায়নি। এদের অনেকেই নিরাপদ আশ্রয়ে বা দেশের বাইরে গিয়েছেন বলে মনে করছেন অনেকে। যারা রয়েছেন, তারা জানিয়েছেন, জনরোষের মুখে সবাইকে ফেলে রেখে হাসিনার দেশ ছাড়ার ঘটনায় তারা হতাশ, বিপর্যস্ত এবং ভেঙে পড়েছেন।
তাদের বক্তব্য, ‘হাসিনার একের পর এক ভুল সিদ্ধান্ত এবং জেদের কারণে দলের নেতা-কর্মীরা বিপদে পড়ছেন। নিজের পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করলেও বাকিদের তিনি বিপদে ফেলে চলে গিয়েছেন।’
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক হাসিনার মন্ত্রিসভার দুই সদস্য জানিয়েছেন, তারা গত রবিবারই হাসিনাকে পদত্যাগের পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি সেই প্রস্তাব উড়িয়ে দেন। মন্ত্রিসভার আরও এক সদস্য জানিয়েছেন, পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে আন্দাজ করে পরিবারের সদস্যদের আগেই বিদেশে পাঠিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু নিজে থেকে গিয়েছিলেন। তবে হাসিনা চলে যাবেন জানলে অন্যভাবে ভাবতেন। হাসিনার বিরুদ্ধে ক্ষোভপ্রকাশ করেছেন তার মন্ত্রিসভার আর এক প্রভাবশালী সদস্যও। তিনি বলেছেন, ‘কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরুর পর থেকেই সরকারের প্রধান হিসাবে একের পর এক ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছেন হাসিনা। বার বার তাকে বোঝানোর চেষ্টা করেও লাভ হয়নি। তাই এখন যা হওয়ার তাই হচ্ছে।’
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের আরো পাঁচ সদস্য জানিয়েছেন, ‘শেখ হাসিনা দেশে থেকে যদি জেলে যেতেন, তা হলে হয়তো তার দলের কর্মীরা এতটা বিপদে পড়তেন না।’ বাংলাদেশের প্রাক্তন এবং প্রয়াত সামরিক শাসক এইচ এম এরশাদের উদাহরণ টেনে তারা বলেছেন, এরশাদ স্বৈরাচারী ছিলেন। কিন্তু গণঅভ্যুত্থানে যখন তার সরকারের পতন হয়, তখন তিনি দেশ ছেড়ে পালাননি। বরং জেলে গিয়েছেন। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সেই উদাহরণ টেনে বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দেওয়া দল আওয়ামী লীগের নেত্রী এমন করবেন, তা মেনে নেওয়া যাচ্ছে না।
এম হাসান