ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

৮ শর্তে রাজশাহীতে সমাবেশের অনুমতি পেল বিএনপি

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী 

প্রকাশিত: ১৮:৩৬, ৩০ নভেম্বর ২০২২

৮ শর্তে রাজশাহীতে সমাবেশের অনুমতি পেল বিএনপি

বিএনপি

* শুরু হয়নি মঞ্চ তৈরী, পুলিশের বিরুদ্ধে ধরপাকড়ের অভিযোগ 
* বৃহস্পতিবার থেকে উত্তরাঞ্চলে পরিবহন ধর্মঘট 

অবশেষে ৮ শর্তে রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদ্রাসা মাঠে বিভাগীয় গণসমাবেশের অনুমতি পেয়েছে বিএনপি। বুধবার রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিকের পক্ষে বিশেষ পুলিশ সুপার মুহম্মদ আব্দুর রকিবের সাক্ষর করা এক চিঠিতে এ অনুমতির কথা বলা হয়েছে। অনুমতিপত্রটি বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনুকে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

অনুমতি পত্রে বলা হয়, আগামী ৩ ডিসেম্বর (শনিবার) রাজশাহী বিভাগীয় গণসমাবেশ আয়োজন ও মাইক ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। বিএনপির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শুধুমাত্র আগামী ৩ ডিসেম্বর মাদ্রাসা ময়দানে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) রাজশাহী বিভাগীয় গণসমাবেশ করতে পারবে। 

পুলিশের দেওয়া শর্তাবলীর মধ্যে রয়েছে, মাদ্রাসা ময়দান চত্ত্বরের মধ্যে সমাবেশের যাবতীয় কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। সমাবেশস্থলের আশপাশসহ কোনো অবস্থাতেই সমবেত হওয়া এবং যান ও জন চলাচলে কোনো প্রকার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা যাবে না। নিরাপত্তার জন্য সমাবেশে আগতদের চেকিং এর ব্যবস্থা করতে হবে এবং নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পর্যাপ্ত সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করতে হবে।

১. দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও সামাজিক-ধর্মীয় মূল্যবোধ, রাষ্ট্রীয় ভাবমূর্তি ও জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয় এমন কোনো কার্যকলাপ এবং উস্কানিমূলক বক্তব্য প্রদান ও প্রচারপত্র বিলি করা যাবে না। 

২. সমাবেশে আসা-যাওয়ার পথে শোভাযাত্রা ও মিছিল করাসহ আইন-শৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে এরূপ কর্মকান্ড করা যাবে না। 

৩. ব্যানার-ফেস্টুন ও পতাকায় লাঠি-সোটা ও রড ব্যবহার করা যাবে না। 

৪. আযান, নামাজ ও অন্যান্য ধর্মীয় সংবেদনশীল সময় মাইক/শব্দযন্ত্র ব্যবহার করা যাবে না। 

৫. মঞ্চ তৈরির সঙ্গে যারা জড়িত তারা ব্যতীত অন্য কেউ আগামী ৩ ডিসেম্বর সমাবেশ শুরুর পূর্বে সমাবেশস্থলে প্রবেশ কিংবা অবস্থান করতে পারবে না। 
৬. নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সমাবেশস্থলের অভ্যন্তরে ও বাইরে উন্নত রেজুলেশনযুক্ত সিসি ক্যামেরা স্থাপন করতে হবে। 

৭. সমাবেশস্থলের বাইরে বা সড়কের পাশে প্রজেক্টর/মাইক/সাউন্ড বক্স ব্যবহার করা যাবে না। সমাবেশস্থলে ইন্টারনেট সংযোগ, ব্রডব্যান্ড সংযোগ ও রাউটার ব্যবহার করা যাবে না।

৮. যানবাহনসমূহ শহরের ভেতরে প্রবেশ করানো যাবে না। রাস্তা বন্ধ করে সমাবেশের কর্মসূচি পালন থেকে বিরত থাকতে হবে। পার্কিং এর জন্য নির্ধারিত স্থানে গাড়ি পার্কিং করতে হবে। মূল সড়কে কোনো পার্কিং করা যাবে না।

এদিকে আগামী ৩ ডিসেম্বর রাজশাহীতে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ উপলক্ষে বিভিন্ন জেলায় দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেফতার করে পুলিশি হয়রানি করা হচ্ছে বলে দাবি করেছেন দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা। বুধবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করেছে এ দাবি জানান তারা। 

নগরীর মালোপাড়ায় দলীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে নেতারা জানান, রাজশাহী বিভাগীয় সমাবেশকে কেন্দ্র করে গত রাতেই অন্তত ৫০ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়া নতুন করে শতাধিক মামলা দেয়া হয়েছে। সমাবেশে যেন নেতাকর্মীরা আসতে না পারে সে জন্য ১ ডিসেম্বর থেকে রাজশাহী বিভাগে পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেয়া হয়েছে। ধর্মঘটের কারণে আগে থেকেই সমাবেশে আসতে চাইলে নেতকার্মীদের থাকার ব্যবস্থা করতে দেয়া হচ্ছে না। এর পরও যে কোন মূল্যে এই সমাবেশ সফল করা হবে বলে জানান দলের সিনিয়র নেতারা।

বুধবার রাজশাহীর মাদ্রাসা মাঠে গিয়ে দেখা যায় এখনো তাদের কোনো মঞ্চ তৈরির কাজ শুরু হয় নি। তবে কিছু সংখ্যক লোকজন মাদ্রাসা মাঠে আসতে শুরু করেছে। পুরো মাদ্রাসা মাঠে বিপুল সংখ্যক পুলিশের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। বিএনপি নেতারা বলেন, রাজশাহীর প্রতিটি প্রবেশ পথে পুলিশ তল্লাশী করছে সাধারণ মানুষ ও নেতাকর্মীদের ভয় ভীতি দেখানো হচ্ছে। এরই মধ্যে রাজশাহী নগরী ও আশেরপাশের এলাকায় বিএনপি মাইকে প্রচার শুরু করেছে।

রাজশাহী নগর পুলিশ জানায়, মাদ্রাসা মাঠজুড়ে বসানো হচ্ছে পুলিশের সিসি ক্যামেরা। যে কোনো ধরনের অঘটন বা অপ্রীতিকর ঘটনা পর্যবেক্ষণে ফুটেজ সংগ্রহ করা হবে। আরএমপির সাইবার ক্রাইম ইউনিটের প্রধান উৎপল কুমার চৌধুরী বলেন, শুধু সমাবেশস্থলই নয়, গোটা নগরীসহ রাজশাহীর প্রবেশমুখগুলোও সিসি ক্যামেরার আওতায় থাকবে। সাইবার ক্রাইম ইউনিটের কন্ট্রোল রুম থেকে ক্যামেরাগুলো পর্যবেক্ষণ করা হবে। নজর রাখা হবে বিএনপির নেতাকর্মী ও সমাবেশে আসা ব্যক্তিদের গতিবিধির ওপর।

রাজশাহী নগর পুলিশের কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিক জানিয়েছেন, জানমালের ক্ষয়ক্ষতি না করা, বেলা ২টা থেকে বিকেল ৫টার মধ্যে সমাবেশ শেষ করা, সমাবেশস্থলের বাইরে মাইক না লাগানো, আজানের সময় মাইকের শব্দ বন্ধ রাখাসহ অন্তত ৮ শর্ত দেওয়া হয়েছে বিএনপিকে। 

আজ থেকে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট ॥ এদিকে আজ বৃহস্পতিবার থেকে রাজশাহীসহ উত্তরাঞ্চল পড়তে যাচ্ছে পরিবহন ধর্মঘটের কবলে। এতে রাজধানী ঢাকাসহ গোটাদেশের সঙ্গে পরিবহন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হতে যাচ্ছে। বৃহস্পতিবার ভোর ৬টা থেকে রাজশাহী বিভাগে পরিবহন ধর্মঘট পালন করা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছে রাজশাহী বিভাগীয় সড়ক পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ।

সড়কে অবৈধ যানবাহন চলাচল বন্ধসহ ১১ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘটে যাবেন বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা। রাজশাহী বিভাগীয় সড়ক পরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সভাপতি সাফকাত মনজুর বিপ্লব বুধবার বলেন, তাদের ধর্মঘট বৃহস্পতিবার ভোর ৬ টা থেকে শুরু হবে। 

তিনি বলেন, মহাসড়ক থেকে নছিমন, করিমন, ভটভটিসহ অবৈধ যানবাহন চলাচল বন্ধসহ এই ১১ দফা দাবিতে আদায়ে দীর্ঘদিন ধরে তারা কথা বলে আসছেন। বিভিন্ন সময় প্রশাসনকে এ বিষয়ে চিঠিপত্র দেওয়া হয়েছে। কিছুদিন আগেও তারা সংবাদ সম্মেলন করে এসব দাবির বিষয়ে কথা বলেছেন। দাবি আদায়ে ধারাবাহিক কর্মসূচি পালন করে আসছেন। এই কর্মসূচি এবারই প্রথম নয়। গত ২৬ নভেম্বর নাটোরে বিভাগীয় পরিবহন নেতারা বসে আলোচনা করেই ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আজ পর্যন্ত তাদের দাবি পূরণের কোনো আশ্বাস মেলেনি। তাই পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী তারা তাদের সিদ্ধান্তে অনড় বলেও জানান।

এদিকে রাজশাহীতে আগামী ৩ ডিসেম্বর বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ রয়েছে। এই গণসমাবেশ উপলক্ষে রাজশাহী বিভাগের বিভিন্ন জেলা থেকে বিএনপি নেতাকর্মীরা আসবে। তাই বিএনপি নেতাদের ভাষ্য- ১১ দফা মূল বিষয় নয়, দেশের অন্যান্য গণসমাবেশের মতো রাজশাহীর গণসমাবেশে মানুষকে আসতে বাধা দিতেই কৌশলে এ পরিবহন ধর্মঘট ডাকা হয়েছে।

এ ধর্মঘটকে সাজানো নাটক উল্লেখ করে বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার বলেন, মূলত: পরিবহন শ্রমিক ও মালিকরা সরকারকে এই পরিবহন ধর্মঘটের মাধ্যমে সহযোগিতা করতে চাইছেন। বিএনপির প্রত্যেকটা সমাবেশের আগেই বিভিন্ন বিভাগ ও জেলায় এমন ধর্মঘট ডাকা হয়েছে। 

তবে এতকিছুর পরও মানুষ কোনো না কোনোভাবে গণসমাবেশে গিয়েছেই এবং শতভাগ সফলও হয়েছে। তাই ধর্মঘট দেওয়া হোক, আর যা-ই দেওয়া হোক না কেন- রাজশাহীতে ৩ ডিসেম্বরের গণসমাবেশে জনস্রোত নামবে। শুধু সমাবেশস্থল মাদ্রাসা মাঠ নয়, পুরো রাজশাহী শহর জনসমুদ্রে পরিণত হবে। 
 

 

এমএস

সম্পর্কিত বিষয়:

×