ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ৩০ জুলাই ২০২৫, ১৫ শ্রাবণ ১৪৩২

হেপাটাইটিস থেকে বাঁচুন

প্রকাশিত: ১৭:৫৫, ২৯ জুলাই ২০২৫

হেপাটাইটিস থেকে বাঁচুন

২৮ জুলাই বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে হেপাটাইটিস দিবস পালিত হয়েছে। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘আসুন হেপাটাইটিস রুখে দেই’। দেশে হেপাটাইটিস ‘বি’ ভাইরাসে আক্রান্তের জনসংখ্যা প্রায় এক কোটি। আক্রান্ত পুরুষের সংখ্যা ৫৭ লাখ, নারীর সংখ্যা ২৮ লাখ এবং শিশুর সংখ্যা প্রায় ৪ লাখ। অন্তত একজন হেপাটাইটিস ‘বি’তে আক্রান্ত এমন পরিবারের সংখ্যা ১৫ লাখ। দেশের কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর বড় অংশ হেপাটাইটিসে আক্রান্ত। অবহেলায় কিংবা অসচেতনতায় অনেকে সঠিক সময়ে এর চিকিৎসা করান না। ফলে রোগী লিভার সিরোসিস বা লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। হেপাটাইটিস নিয়ে আমাদের মধ্যে ভীতি রয়েছে; অনেকে মনে করেন এটি ছোঁয়াচে রোগ। সরকারি কিংবা বেসরকারি চাকরিতে হেপাটাইটিস আক্রান্ত তরুণদের অযোগ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিদেশ গমনের ক্ষেত্রে তারা বৈষম্যের শিকার হন। এটি কোনোভাবেই ছোঁয়াচে বা সংক্রামক রোগ নয়। হেপাটাইটিস নিয়ে জনসচেতনতা তৈরির বিকল্প নেই।  
হেপাটাইটিস ‘বি’ রক্ত এবং অন্যান্য মাধ্যমে ছড়ায়। দেশে হেপাটাইটিস বি ভাইরাস বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মায়ের কাছ থেকে শিশুদের শরীরে আসে। এছাড়া এ ভাইরাসটি রক্ত এবং রক্তজাত দ্রব্যাদি থেকে ছড়ায়। সি ভাইরাস একইভাবে ছড়ায়। তবে বিদ্যালয় কিংবা অফিসের কার্যক্রম, একসঙ্গে খাওয়া, একই জামাকাপড় পরিধান করা অথবা একই থালাবাটি ব্যবহার করার মাধ্যমে এ ভাইরাসগুলো ছড়ায় না। যৌন সম্পর্কের মাধ্যমে এটা ছড়াতে পারে। কিন্তু হেপাটাইটিস ‘বি’ ভাইরাসের টিকা দিয়ে নিলে এটা আর ছড়ায় না। এ ক্ষেত্রে আমাদের প্রথম কাজটি হবে, ব্যাপকভাবে জনসচেতনতা তৈরি করা। এটা করা গেলে মানুষের মধ্যকার কুসংস্কার দূর হবে। দেশে এখন হেপাটাইটিসের ওষুধ সহজলভ্য। তবে ‘বি’ ভাইরাসের চিকিৎসা দীর্ঘমেয়াদি। ফলে এর ওষুধগুলোর দাম কমানো প্রয়োজন। এজন্য সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। সরকারি হাসপাতালগুলোয় এ ভাইরাসের ওষুধ সরবরাহ নিশ্চিত করা গেলে ২০৩০ সালের মধ্যে হেপাটাইটিস নির্মূল করা সম্ভব হবে।
হেপাটাইটিস নির্মূলে সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এসব নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলো নিয়ে একটা নেটওয়ার্ক তৈরি করা যেতে পারে।  বিশেষ করে নারী সংগঠনগুলোকে মা থেকে শিশুর মধ্যে এ ভাইরাস ছড়ানো প্রতিরোধে কাজে লাগানো যেতে পারে। মিডিয়াও এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এ বিষয়ে প্রচুর সচেতনতামূলক কনটেন্ট তৈরি এবং প্রচার করা প্রয়োজন।
দেশে যেসব রোগে অপচিকিৎসা সবচেয়ে বেশি হয়, তার মধ্যে অন্যতম হলো হেপাটাইটিস। সরকারি হাসপাতালগুলোয় হেপাটাইটিস বা জন্ডিস নিয়ে আসা রোগীদের চিকিৎসা ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, বেশির ভাগ রোগীই বৈজ্ঞানিক চিকিৎসার আগে বিভিন্ন হারবাল, কবিরাজি বা অপচিকিৎসা গ্রহণ করেছেন। এর মূল কারণ হলো সচেতনতার ঘাটতি এবং প্রমাণভিত্তিক চিকিৎসা বিষয়ে জনসাধারণের অজ্ঞতা। হেপাটাইটিস প্রতিরোধে সার্বিক সচেতনতা প্রয়োজন।

প্যানেল/মো.

×