ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ৩০ জুলাই ২০২৫, ১৫ শ্রাবণ ১৪৩২

অনভিপ্রেত চাঁদাবাজি

প্রকাশিত: ১৭:৫৪, ২৯ জুলাই ২০২৫

অনভিপ্রেত চাঁদাবাজি

সড়িষা দিয়ে ভূত তাড়াব, সড়িষাই যদি হয় ভূতে আক্রান্ত, তবে জাতির কী অবস্থা হবে? সাড়ে ১৫ বছরের ফ্যাসিবাদী শাসন-শোষণ থেকে পরিত্রাণের লক্ষ্যে দেশের ছাত্র-জনতা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে একই ছাতার নিচে সমবেত হয়েছে দলমত, আদর্শ নির্বিশেষে। জাতির ভাগ্যাকাশে নতুন সূর্যোদয়ের আশায় এ দেশের মানুষ ছাত্রদের ওপর ভরসা রেখেছিল। ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন সংগ্রামে ছাত্ররাও নিরাশ করেনি আমাদের। তাদের বুকের তাজা রক্ত বিলিয়ে দিয়ে প্রায় দুই হাজার প্রাণের বিনিময়ে, হাজারো ছাত্র-জনতার পঙ্গুত্ববরণ। পতিত হাসিনা সরকারের ভারতে পালানোর পর গত এক বছরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কতিপয় নেতৃত্বের লোভাতুর নজর পড়ে চাঁদাবাজির দিকে, যা গণমাধ্যমে প্রকাশিত।
যে ছাত্রদের ডাকে নজিরবিহীন তীব্র আন্দোলন-সংগ্রাম বিশ্ববাসী দেখল, তাদের এমন আচরণ কখনো কাম্য নয়। ফ্যাসিবাদ-উত্তর নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে ছাত্ররা মনোযোগী হবে, নতুন বন্দোবস্তের মাধ্যমে বৈষম্যহীন সমাজ বিনির্মাণে অনন্য ভূমিকা রখবে। তা না করে চাঁদাবাজিতে যুক্ত হওয়া, জুলাই-আগস্টের চেতনার সঙ্গে গাদ্যারির শামিল। ছাত্ররা এমন করলে দেশের জনগণ তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, এটি হলফ করে বলা যায়। সম্প্রতি গুলশান-২-এর ৮৩ নম্বর রোডে আওয়ামী আমলে সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাবেক এমপি শাম্মী আহমেদের বাসায়, সমন্বয়ক পরিচয়ে চাঁদাবাজি করতে গিয়ে পুলিশের কাছে হাতেনাতে আটক হয়েছেন পাঁচজন। যাদের চারজনই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পদধারী নেতা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক ও প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আব্দুর রাজ্জাক সোলাইমান রিয়াদ, সংগঠনের ঢাকা মহানগর শাখার আহ্বায়ক ইব্রাহিম হোসেন মুন্না এবং কমিটির সদস্য সাকাদাউন সিয়াম, সাদমান সাদাব। এর মধ্যে শেষের তিন জনকে সংগঠন থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। এছাড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, আগে এই বাসায় প্রথম কিস্তির চাঁদা নিতে বাসায় অবস্থান করছিলেন আরও এক সমন্বয়ক জানে আলম অপু। তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের যুগ্ম-আহ্বায়ক। আটককৃতদের সবাই প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। 
ইতোমধ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দপ্তর সম্পাদক শাহাদাত হোসেন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে অভিযুক্ত পাঁচজনের মধ্যে তিনজনকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করেছে এবং বহিষ্কৃতদের কারও সঙ্গে কোনো ধরনের যোগাযোগ না রাখতে অনুরোধ করেছেন। আমরা মনে করি চাঁদাবাজির পেছনের সব রাঘব বোয়ালকে সামনে নিয়ে আসতে হবে, দলে চিরুনি অভিযান চালাতে হবে এবং দল থেকে স্থায়ী বহিষ্কার করতে হবে। এদিকে অভিযোগ উঠেছে, রিয়াদ নামে পুলিশ সংস্কার কমিশনে একজন ছাত্র প্রতিনিধি রয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, রিয়াদ নামে কোনো ছাত্র প্রতিনিধির অস্তিত্ব নেই। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আসামিদের আদালতে হাজির করে প্রত্যেকের ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করলে আদালত প্রত্যেকের সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। গ্রেফতারকৃত চার জনকে আদালতে তোলা হলে বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা তাদের চাঁদাবাজ আখ্যা দিয়ে কিল-ঘুষি-লাথি মেরেছেন। এটাও কাম্য নয়, মনে রাখতে হবে দেশের কোনো নাগরিক আইন নিজের হাতে তুলে নিতে পারেন না। একজন আইনজীবীর শান ও মানে আইন হাতে তুলে নেয়া কোনোভাবেই মানানসই নয়।

প্যানেল/মো.

×