ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৫ জুন ২০২৫, ১ আষাঢ় ১৪৩২

প্রান্তিক মানুষের বিচার

প্রকাশিত: ১৯:১৬, ১৪ জুন ২০২৫

প্রান্তিক মানুষের বিচার

দেশের হতদরিদ্র প্রান্তিক মানুষের জন্য আশার আলো হয়ে আবির্ভূত হয়েছে জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা বা লিগ্যাল এইড অফিস। সীমিত ভৌগোলিক সীমা, সীমিত সামর্থ্যরে কঠিন বাস্তবতায় এ দেশের গরিব-দুঃখী মানুষের আর্থ-সামাজিক বাস্তবতায় আইনি সুবিধা পাওয়া বেশ কঠিন। প্রতিদিন সংবাদপত্রসহ ভিজুয়াল মাধ্যমে অসহায় মানুষের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, আনন্দ-বেদনা, হতাশা-যন্ত্রণা, সাফল্য-দুর্দশাসহ অযুত জীবনের গল্প আমরা দেখতে পাই, শুনতে পাই আমাদের চারপাশে। কোনো গল্পের সমাধান সফলতায়, আবার কোনোটা ব্যর্থতায়। সুখ ও দুঃখের অভিষেক কিংবা যবনিকাপাত ঘটে এই লিগ্যাল এইড অফিসে। যে সকল অসহায় মানুষ অর্থের অভাবে মামলা পরিচালনা করতে পারেন না, তাদের আইনগত সহায়তা প্রদান করা হয় এই সংস্থার মাধ্যমে। দেশের বিচারাঙ্গনে হতদরিদ্রগণ এখন আর অবহেলিত নয়। এতদিন যাদের অবহেলিত ভেবে করুণা করা হতো, এখন তারাও বিচার পাচ্ছেন।
আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের অধীনে জাতীয় আইনগত সহায়তা সংস্থার কার্যক্রম পরিচালিত হয়। জাতীয় আইনগত সহায়তা সংস্থার অধীনে সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইডের কার্যক্রম শুরু হয়েছে ২০১৫ সালে। হাইকোর্ট বিভাগের একজন বিচারপতি সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। শুরুতে জেলা পর্যায়ে অসচ্ছল জনগোষ্ঠীর জন্য এ আইনি সেবা প্রদান শুরু হয়। পরবর্তীকালে সুপ্রিম কোর্ট, ঢাকা ও চট্টগ্রামে শ্রমিকদের জন্য আইনি সহায়তা সেল গঠন এবং দেশের কারাগারগুলোতে গরিব, অসহায় কয়েদিদের জন্য চালু করা হয় এ সেবা। রাঙ্গামাটি জেলা কারাগারে প্রতি তিন মাস পর পর প্যানেল আইনজীবী ও কারাবন্দিদের সঙ্গে সমন্বয় সভা করা হয়। ফলে, কারাগারে বিনাবিচারে আটক ব্যক্তিগণ ব্যাপক উপকৃত হন। অসহায় আসামিগণ তাদের সমস্যার কথা সরাসারি লিগ্যাল এইড অফিসারকে বলার সুযোগ পাচ্ছেন। এমন উদ্যোগ দেশের প্রতিটি কারাগারে করা গেলে, অসহায় কয়েদিরা নতুন জীবন পাবে। 
এমন ঘটনাও দেখা গেছে, স্বামী-স্ত্রী উভয়েই একে অপরের সঙ্গে সংসার করতে চান। তবে স্ত্রী সংসারের পাশাপাশি চালিয়ে নিতে চান পড়াশোনাটাও। স্বামীর পরিবার পড়াশোনা চালাতে চান না বলে সংসারে যত অশান্তি। লিগাল এইড সেন্টারের সমঝোতায় উভয়পক্ষ শর্ত মেনে নেয় এবং সংসার জীবন টিকে যায়। লিগাল এইড সেন্টার বাদী-বিবাদী উভয় পক্ষকে বোঝায় সমঝোতার জন্য। নাগরিক হিসেবে আমাদের প্রত্যেকের অধিকার রয়েছে আইনি সুরক্ষা পাওয়ার। জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা বা লিগ্যাল এইড অফিস প্রান্তিক মানুষের কল্যাণে আগামী দিনে আরও অনন্য ভূমিকা রাখবে- এমনটিই আমাদের প্রত্যাশা।

প্যানেল

×