
জনবহুল বাংলাদেশে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সার্বিক উন্নয়নে কারিগরি শিক্ষার বিকল্প নেই। কিন্তু দেশের এক শ্রেণির মানুষের ঔপনিবেশিক মানসিক দাসত্বের ফলে এ শিক্ষা ব্যবস্থাকে খুব একটা নেক নজরে দেখা হয় না। অথচ কারিগরি শিক্ষাই হতে পারত পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর উন্নতির টেকসই সোপান। বেকার সমস্যায় জর্জরিত দেশের তরুণ সমাজের পক্ষ থেকে কারিগরি শিক্ষায় যতটা শিক্ষার্থী পাওয়ার কথা, ততটা পাচ্ছে না দেশের সরকারি-বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলো, যা অত্যন্ত দুঃখের। দেশে ১২ হাজারের বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কারিগরি শিক্ষা দেওয়া হয়। এর মধ্যে আছে দুই বছর মেয়াদি এসএসসি ও এইচএসসি ভোকেশনাল, চার বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা কোর্স। এছাড়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নানা মেয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্সের ব্যবস্থাও রয়েছে। দেশে বর্তমানে চার বছর মেয়াদি ১০ ধরনের ডিপ্লোমা কোর্স চালু আছে। তথ্য বলছে, প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়ছে, কিন্তু কারিগরি শিক্ষার মূল কোর্সগুলোতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমছে।
ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে আসন আছে ১ লাখ ৭১ হাজারের বেশি। অথচ ২০২৩-২৪-এ ভর্তি হয়েছেন মাত্র ৬৯ হাজার শিক্ষার্থী, অর্থাৎ এক লাখের বেশি আসন শূন্য। এছাড়া এসএসসি (ভোকেশনাল) ও এইচএসসিতেও (ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা বা বিএম) বিপুলসংখ্যক আসন ফাঁকা রয়েছে। সরকারি-বেসরকারি উভয় প্রতিষ্ঠানেই শূন্য রয়েছে অনেক আসন। সম্প্রতি দেশের পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে আন্দোলন-সংগ্রাম চলাকালীন শিক্ষার্থীরা বলেছেন, তাদের সিলেবাস বেশ পুরানো। এখন নতুন প্রযুক্তি এসেছে। কিন্তু সেসবের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ শিক্ষাক্রম প্রণয়ন হয়নি। ব্যবহারিক শিক্ষার ক্ষেত্রেও ঘাটতি আছে, রয়েছে যন্ত্রপাতির সংকট। কোনো কোনো ক্ষেত্রে যন্ত্রপাতি আছে, কিন্তু ব্যবহৃত হয় না। যারা এসব যন্ত্রপাতি পরিচালনার দায়িত্বে আছেন, তাদের কেউ কেউ সে বিষয়ে দক্ষ নন। এসব কারণে প্রায়োগিক শিক্ষার সুফল শিক্ষার্থীরা পাচ্ছে না। কারিগরি শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কর্মমুখী এ শিক্ষা নিয়ে যেভাবে কথা বলা হয়, তার আলোকে কার্যকর তেমন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয় না। শিক্ষার্থীরা হাতে কলমে প্রয়োজনীয় ব্যবহারিক শিক্ষা পান না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ল্যাবরেটরি ও শিক্ষাক্রম যুগোপযোগী নয়। দক্ষ শিক্ষক ও টেকনিশিয়ানের অভাবও রয়েছে। ফলে কারিগরি শিক্ষার মানে ঘাটতি থেকেই যাচ্ছে। এত সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও যারা কঠিন পরিশ্রম করে পাস করেন, তারা আবার উচ্চশিক্ষার সুযোগও কম পান। যদিও পাস করা শিক্ষার্থীরা তুলনামূলক সহজে চাকরি পান, তবে বেতন-ভাতা খুবই কম।
শিক্ষাসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অভিমত, দেশের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে কারিগরি শিক্ষায় গুরুত্ব দিতেই হবে। সরকারকে এ বিষয়ে নিতে হবে কার্যকর পদক্ষেপ। বাজারের চাহিদা অনুযায়ী দক্ষ জনশক্তি তৈরি করতে পারছে না দেশের কারিগরি শিক্ষা কাঠামো। যুগের চাহিদার আলোকে কারিগরি শিক্ষা ঢেলে সাজাতে পারলে আগামীর সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে এ খাতের শিক্ষার্থীরা দক্ষ সেনানায়কের ভূমিকা রাখতে পারবে, এমনটি বলাই যায়। কারিগরি শিক্ষা দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত। এখানে কাঠামোগত সংস্কার প্রয়োজন। ব্যাপক ভিত্তিক সুনজর দিলে দক্ষ জনশক্তি বিদেশে রপ্তানি করার মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হবে।
প্যানেল