ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২১ মে ২০২৫, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

মরণফাঁদ ফারাক্কা

প্রকাশিত: ২০:১৪, ২০ মে ২০২৫

মরণফাঁদ ফারাক্কা

ভারত বাংলাদেশের বৃহৎ প্রতিবেশী। অনেক নদীর উৎসস্থল ভারতে। আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে ২১ এপ্রিল ১৯৭৫ সালে ভারত একতরফা ফারাক্কা বাঁধ চালু করে। যার কয়েক মাসের মধ্যে এর ভয়াবহ প্রতিক্রিয়া পরিলক্ষিত হয় আমাদের দেশে। বাংলাদেশের জীববৈচিত্র্য ধ্বংসে ফারাক্কার সুদূরপ্রসারী প্রভাব বিবেচনায় নিয়ে ৯৬ বছর বয়সী মওলানা ভাসানী এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ গড়ে তোলেন। জীবনের অন্তিম মুহূর্তে ১৯৭৬ সালের ১৬ মে রাজশাহী থেকে ফারাক্কা বাঁধ অভিমুখী লংমার্চ কর্মসূচি দেন। ১৭ মে  ভারতীয় সীমান্তের কাছে কানসাটে গিয়ে তিনি তাঁর ভাষণে বলেছিলেন, ‘পিন্ডির জিঞ্জির ছিন্ন করেছি, দিল্লির দাসত্ব মেনে নেব না, মেনে নেওয়া যায় না।’ যা ঐতিহাসিক ফারাক্কা লংমার্চ হিসেবে পরিচিত।
জওহর লাল নেহরু ১৯৬০-৬১ সালে ফারাক্কা বাঁধের পরিকল্পনা করেছিলেন। তার উদ্দেশ্য ছিল, বড় বাঁধ নির্মাণ করে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও কৃষিতে সেচ দেওয়া। ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণের আগেও ভারতের ঐ অঞ্চলে ভাঙন ছিল। ১৯২৩, ’২৮, ’২৯, ’৩৫, ’৩৮, ’৪৯-এ একাধিক ভাঙন ফারাক্কা সন্নিহিত এলাকায় হয়েছে। কিন্তু ১৯৬০ সালে যখন দ্বিতীয় ফিডার ক্যানেলের সাহায্যে গঙ্গা-ভাগীরথী জুড়ে দেওয়া হলো, তখন থেকেই পদ্মার অপমৃত্যু ঘটতে থাকে। বিধ্বংসী ভাঙনের কবলে পড়ল মালদা, মুর্শিদাবাদের বিস্তীর্ণ এলাকাও। শুধু এখানেই শেষ নয়, বাংলাদেশের ৫৭টি অভিন্ন আন্তর্জাতিক নদীর মধ্যে ভারত-বাংলাদেশ আন্তঃসীমান্ত ৩৬টি নদীর ওপর ভারত সরকার আন্তর্জাতিক পানি বণ্টন চুক্তি আইন লঙ্ঘন করে ৫৪টি অবৈধ বাঁধ নির্মাণ করেছে। যার ফলে, বাংলাদেশের সবুজ-শ্যামল বর্ণিল রূপ ধ্বংস হয়েছে। পানির অভাবে প্রাণ-প্রকৃতি, জীববৈচিত্র্য, আমাদের মৎস্য সম্পদ, জলবায়ু ধ্বংসের মুখে। শুষ্ক মৌসুমে পানির অভাবে কৃষক সমাজ চাষ করতে পারছে না। নদীর পানি শুকিয়ে জনপদগুলো ক্রমান্বয়ে পরিণত হচ্ছে মরুভূমিতে।
আবার বর্ষা মৌসুমে বন্ধু দেশ ভারত ফারাক্কাসহ অন্যান্য বাঁধের গেট খুলে দিয়ে আমাদের ১৮ কোটি নাগরিকের জীবনযাত্রা দুর্বিষহ করে তুলেছে। সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও তার তীরবর্তী অঞ্চলে। ঐতিহ্যবাহী নদী পদ্মার আয়তন অর্ধেকে নেমে এসেছে। পানির প্রবাহ কমে যাওয়ায় নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যাচ্ছে, জেগে উঠছে প্রচুর চরাঞ্চল। নদীর পানিপ্রবাহে ব্যাঘাত ঘটায় জলজ প্রাণী বিলুপ্ত হচ্ছে। পর্যাপ্ত পানি না থাকায় ইলিশের প্রাপ্যতা ও বিচরণ আগের মতো নেই।  হারিয়ে গেছে দেশীয় প্রজাতির মাছ ও জলজ সম্পদ। বাংলাদেশের ঢাল সুন্দরবনের অস্তিত্ব আজ হুমকির মুখে। সব ধ্বংসের মূলে ভারতীয় আধিপত্যবাদী পানি আগ্রাসনে ফারাক্কার থাবা, অভিন্ন নদিগুলোর পানি আটকে দেওয়া। বছরের পর বছর ধরে, বর্ষায় পানিতে ডুবিয়ে মারার পরিকল্পনা করে যাচ্ছে বন্ধু দেশ ভারত! ভারতীয় আধিপত্যবাদী পানি আগ্রাসন নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও  রুখে দাঁড়াতে  দেশপ্রেমিক সকল দল, মত  ও পথের লোকদের এক কাতারে শামিল হতে হবে আগামীর বাংলাদেশ বাঁচাতে। তাই সময় এসেছে, ভারতের সঙ্গে সম্পাদিত সকল অসম চুক্তি বাতিল করার।

×