ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২০ মে ২০২৫, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

সাম্য হত্যার বিচার

প্রকাশিত: ২০:১৩, ২০ মে ২০২৫

সাম্য হত্যার বিচার

প্রতিপক্ষ ছাত্র সংগঠনের সক্রিয় তৎপরতায় শিক্ষাঙ্গন বারবার অশান্ত হয়েছে। ছাত্র হত্যার উদাহরণও কম নয়। আশা করা গিয়েছিল স্বাধীন বাংলাদেশে ছাত্র যে রাজনৈতিক সংগঠনেরই অনুসারী হোক বা কোনো ছাত্র সংগঠন করুক, প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকবে ছাত্র কল্যাণে, শিক্ষার পরিবেশ উন্নতকরণে, সর্বোপরি শিক্ষার সুশোভন পরিবেশ বজায় রাখায়। থাকবে না ব্যক্তিগত রোষ বা দলীয় হিংসাত্মক দ্বন্দ্ব। কিন্তু প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলগুলোর অঙ্গ-সংগঠনসমূহ নানা সময়ে সহিংসতায় লিপ্ত হয়েছে, যা অত্যন্ত অনাকাক্সিক্ষত। অনেক সময় ছাত্ররা সরকারের পেটোয়া বাহিনীর দ্বারা নিপীড়িত ও খুন হয়েছে। অথচ ভাই থাকবে ভাইয়ের পাশে, ভাইয়ের রক্তে রঞ্জিত হবে না অপর ভাইয়ের হাত, দেশমাতৃকার প্রত্যাশা এমনটাই ছিল। বিগত জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আমরা দুঃখের সঙ্গে লক্ষ্য করেছি ছাত্রদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালানো হয়েছে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে খোঁজা হয়েছে ছাত্রদের। বাংলাদেশে এমনটা হবে কে ভেবেছিল? যাহোক, সর্বশেষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য আততায়ীদের হাতে নিহত হয়েছেন। এই হত্যার বিচার দ্রুতগতিতে হওয়াটাই ছিল কাক্সিক্ষত। ছাত্রহত্যার বিচার চাইতে হবে কেন? কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, সাম্যের সতীর্থ বন্ধুরা সমাবেশ করে সাম্য হত্যার বিচার চাইছেন।
শাহরিয়ার সাম্য হত্যা মামলার তদন্তে গাফিলতি ও প্রকৃত খুনিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে রবিবার শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। সাম্যর খুনিদের গ্রেপ্তার নিয়ে সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে স্পষ্ট বক্তব্য না আসায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় নেতারা। অবরোধ কর্মসূচিতে ছাত্রদল সভাপতি বলেন, ‘শাহরিয়ার হত্যার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাসহ এই নির্দলীয় সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে স্পষ্ট কোনো বক্তব্য আমরা লক্ষ্য করিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও প্রক্টর আজকের দিন পর্যন্ত আমাদের আশ্বস্তই করতে পারেননি যে, সাম্যের প্রকৃত খুনিদের ধরার জন্য তাদের কোনো প্রকার সদিচ্ছা রয়েছে কি না বা তাদের দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ রয়েছে কি না।’
ছাত্রদের ক্ষোভ অত্যন্ত সংগত। বন্ধু ও সহকর্মীর হত্যাকাণ্ড কিছুতেই তারা মেনে নিতে পারছেন না। ৫ আগস্টের পর বিভিন্ন জায়গায় ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক। এ প্রসঙ্গে বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদল কর্মী পারভেজ হত্যাকাণ্ডের কথা উল্লেখ করেন তিনি। এ অভিযোগ উপেক্ষা না করে আমলে নেওয়া চাই। অভিভাবকরা শিক্ষালয়ের প্রধান ব্যক্তি কিংবা প্রশাসনের ওপরেই ভরসা রাখেন। কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রবিবাদ হলে বা কোনো অনাকাক্সিক্ষত পরিবেশের সৃষ্টি হলে এবং ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোনো শিক্ষার্থীর ওপর হামলা চালানো হলে উপাচার্য ও প্রক্টর শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ প্রশমনের ব্যবস্থা নেবেন, আশার বাণী শোনাবেন এবং অবশ্যই বিচারিক প্রক্রিয়া শুরুর উদ্যোগ নেবেন- এমনটাই প্রত্যাশিত। সাম্য হত্যার ক্ষেত্রে তাতে ঘাটতি থাকার অভিযোগ উঠেছে। এটি দুঃখজনক। আমরা আশা করব, সঠিক তদন্ত সাপেক্ষে সাম্য হত্যা মামলায় গতি আসবে। খুনিরা ধরা পড়বে এবং বিচারিক প্রক্রিয়ায় তাদের যথোপযুক্ত শাস্তি প্রদান করা হবে। আর কোনো শিক্ষার্থীর রক্তে যেন রঞ্জিত না হয় বাংলা মায়ের আঁচল।

প্যানেল

×